পুজোর ছুটি তোমার সঙ্গে

• পুজোতে ছুটি চাই-ই চাই
প্রায় সাত-আট মাস আগে থেকেই ম্যানেজারকে বলে রাখি এই সময়টায় ছুটি চাই-ই চাই। তিনি বলেন, ‘এত বার বাড়ি গেলে চলবে কী করে?’ উত্তরে বলি, পুজোর সময় বাঙালি বাংলার বাইরে থাকলে শুধু শরীরটাই বাইরে থাকে, মনটা নয়। মা দুর্গার অসীম কৃপা প্রতি বারই ছুটি ম্যানেজ হয়ে যায়। ২০০৯ সালে প্রায় ধরেই নিয়েছিলাম এ বার বুঝি ছুটি আর পাওয়া গেল না! কিন্তু কী আশ্চর্য, ঠিক সেই নবমীতেই কলকাতায় হাজির হলাম আর সারারাত ঠাকুর দেখে কাটালাম। অথচ অন্য বার যখন কলকাতায় যাই তখন প্রথম দিনটা শুধু ঘুমোই, শরীরের ক্লান্তি দূর করতে। সে বার ও সবের ধারপাশ দিয়েও গেলাম না। মধ্য ও উত্তর কলকাতার ঠাকুর দেখতে দেখতে কখন যে রাত পেরিয়ে গেল টেরই পেলাম না।

এ তো গেল আমার কথা। আমার সঙ্গে যে সব বাঙালি কাজ করেন তাঁরা তো বটেই, যাঁরা আমাদের পাড়ায় থাকেন, এক জন ছাড়া সকলে এ বারও পুজোতে বাংলায় ফিরছেন। তাঁরাও প্রত্যেকে নিজস্ব কায়দায় ঠিক ছুটি ম্যানেজ করেছেন। অনেকে এমন সব যুক্তি বা কারণ দেখিয়েছেন, যা শুনলে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যাবে। কিন্তু সবার মূল বক্তব্য একটাই— ‘পুজোতে ছুটি চাই-ই চাই।’ প্রত্যেকেই চান, নিজের মাটিতে, জন্মভিটেতে ফিরে পুজোর দিনগুলিকে স্মরণীয় করে রাখতে। যেটা না বললে এ জায়গাটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে তা হল, আমাদের অফিসে নিরাপত্তার দায়িত্বে যে ছেলেটা থাকে আর যে সব বাঙালি ক্যান্টিনে খাবার পরিবেশন করে, তারাও এ বার বাড়ি ফিরছে। কয়েক দিন আগে ওরা এসে বলল, ‘স্যার, এ বার আমরাও ছুটি পেয়েছি।’ কথাটা বলার সময় ওদের চোখে যে খুশির ঝিলিক দেখেছি তা সত্যিই ভোলার নয়!

এ সময়ে বাড়ি ফেরার পথে কাশফুলের ঘনঘটা যেন সব বাঙালির হৃদয়ের বহিঃপ্রকাশ।
• ট্রেনের/প্লেনের টিকিট
আগেই বলেছি শেষ পর্যন্ত ছুটি ম্যানেজ হলেও কিছু দিন আগে পর্যন্ত ছুটি নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা সব বাঙালির মধ্যেই থাকে। আর তার ফলশ্রুতি হিসাবে অধিকাংশ সময়েই বিমানের অগ্নিমূল্য এড়াতে ট্রেনকে ভরসা করতে হয়। অথচ, এই জায়গাটাতেই আমাদের চিরকালের ‘ব্যথা’। কোনও বারই আমরা ট্রেনের কনফার্ম টিকিট পাই না, যার জন্য কলকাতায় ফিরতে বেশ কষ্ট পোহাতে হয়। এ বারও ইন্টারনেটে টিকিট কাটতে বসে দেখলাম চার মিনিটের মধ্যে সব টিকিট শেষ। অবশেষে তিনটি ট্রেনের আলাদা দিনের, আলাদা সময়ের টিকিট কেটে রাখতে হল। সরাসরি বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতার টিকিট আমাদের কোনও বন্ধুই এক বারও পায়নি। অগত্যা কেউ কেউ ফিরছে চেন্নাই হয়ে ঘুরপথে। কেউ বা প্রথমে ওড়িশা অবধি এসে পরে অন্য ট্রেনে হাওড়া। আমিও ব্যতিক্রম নই। বাংলার বাইরে আমরা যারা থাকি, তারা পুজোতে বাংলায় ফিরতে যে কতটা উত্সাহী তা বলে বোঝানো যাবে না। দু’টি বা তিনটি স্পেশাল ট্রেনও এই অসীম চাহিদার কাছে নগন্য বলে মনে হয়। আমরা স্বপ্ন দেখি সেই দিনের— যে দিন আমাদের মতো প্রবাসী বাঙালিদের পুজোয় বাড়ি ফিরতে ট্রেনের টিকিটের জন্য হা-হুতাশ করতে হবে না।

• পুজোর প্রস্তুতি/ম্যাগাজিন
প্রায় দু’মাস আগে থেকে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি পুজোসংখ্যাগুলির জন্য। প্রথম যে দিন পুজোসংখ্যা প্রকাশিত হয়ে হাতে আসে— একটা অদ্ভুত আনন্দ হয়। যখন বিভিন্ন বাংলা চ্যানেলগুলির উপরের দিকের কোণে মায়ের ছবি দিয়ে পুজো আর এ ক’দিন বাকি লেখাটা আসে— একটা ভীষণ রকমের আনন্দ হয়। যখন খবরের ফাঁকে কুমোরটুলিতে মায়ের প্রতিমা গড়াটা কয়েক সেকেন্ডের জন্য দেখানো হয়, প্রাণ ভরে যায়। তখন বাংলায় থাকতে না পারার জন্য বেশি করে কষ্ট হয়। কোন ক্লাব কী নতুন থিম নিয়ে আসছে বা বনেদি বাড়ির পুজোগুলো কী ভাবে বনেদিয়ানা রক্ষা করে চলেছে জানার জন্য উত্সুক হয়ে থাকি। বেঙ্গালুরুতে গণেশপুজো বেশ বড় করে হয়। এ বার আমরা বিভিন্ন জায়গায় গণেশ ঠাকুর দেখতেও গিয়েছিলাম। বেশ ভাল লেগেছে। আর সত্যি বলতে কি প্রতি মুহূর্তে অবচেতন মনে দুর্গাপুজো চলাকালীন কলকাতার উত্সাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে এখানকার তুলনা করছিলাম, বেশ ফিকে মনে হয়েছিল। তাই তো এখন থেকেই মহালয়ার প্রভাতী অনুষ্ঠানের জন্য অধীর হয়ে আছি। সে দিন থেকেই সত্যিকারের পুজোর ‘কাউন্টডাউন’ শুরু হবে যে!
• পুজোর দিনগুলি
শেষে শুধু এটাই লিখছি, এখন আমি মেয়ের বাবা। আমার চিরকালের বন্ধুরাও, এক জন ছাড়া, সকলেই ‘বাবা’ ক্লাবে নাম লিখিয়েছে। তাই পুরনো দিনের মতো পুরো তিনটে দিন আর টো টো করে ঘুরি না বা লেখা ভাল ঘুরতে পারি না। নিজের পরিবারের জন্য অন্তত একটা দিন সকলেরই বরাদ্দ হয়ে গিয়েছে। তবে হ্যাঁ, অষ্টমীর রাতটা আজও শুধু আমাদের বন্ধুদের জন্য, ‘স্বপ্নসুন্দরীদের জন্য উত্সর্গ করা’। ওই দিন আমরা আবার সেই পুরনো দিনে ফিরে যাই। ভিড়ে ঠাসা মণ্ডপে বসে মা দুর্গাও যেন আমাদের ‘পার্মিশন’ দেন— এই সময়টায় বউদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ‘প্রকৃত’ সৌন্দর্যের তারিফ করতে। অবশ্যই সত্ ভাবে!

এই সংখ্যায় পাঠকের কলমের অন্য দু’টি লেখা
কলকাতাতেই আছে... তিলোত্তমার মেয়ের বিয়ে
 
 

 
 

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player

 
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.