দিন আসে, দিন যায়, তার ফাঁকেই ইতিহাসে ঢুকে পড়ে তার চলাচলের খবর। পুরনো দিনের শহুরে খবর দিয়ে চেনা যায় এখনকার
অতি পরিচিত শহরের অতীতটাকে, তার নাগরিক জীবনযাপন থেকে খেলাধুলো, সংস্কৃতি বা কূটকচালি থেকে রাজনীতির হাল।
পঞ্চাশ বছর আগের কলকাতা শহরের গতিবিধি চিনতে ২১ অগস্ট ১৯৬৩ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৬৩ এক মাসের কিছু বিশেষ খবর।

বুধবার, ৪ ভাদ্র, ১৩৭০ (৩০ শ্রাবণ, ১৮৮৫ শকাব্দ) WEDNESDAY, AUGUST 21, 1963
• ‘ফুলমালা’র পৃথিবী হইতে বিদায়: মাহুত ফরমান মিঞাকে বিদায় দিয়া আলিপুর পশুশালার অন্যতম আকর্ষণ প্রিয়দর্শিনী ফুলমালাও পৃথিবী হইতে বিদায় লইয়াছে। সোমবারই রাত বারোটায় অনিবার্য সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করিতে হয়। রাত্রির নিস্তব্ধতা উচ্চকিত করিয়া তিন তিনবার বন্ধুক গর্জিয়া উঠে। চিড়িয়াখানার ভিতরে কোনও পশু ইতিপূর্বে কখনও বন্দুকের আওয়াজ শুনে নাই। তিনটি গুলির দুইটি উন্মাদিনী ফুলমালার কপালে আসিয়া লাগে। অপরটি কানে।
আঠারো বছরের সাথী ফুলমালা ও ফরমান মিঞা। দুই জনের কেহই আজ আর ইহজগতে নাই।
সঙ্গে সঙ্গেই সে ধরাশায়িনী হয়। অদূরে হাতিশালের হাতিগুলি তখনও প্রাণপণে চিত্কার করিতেছিল। হঠাত্ ছাড়া পাওয়া অজস্র হরিণ দিগবিদিক জ্ঞানশূন্য হইয়া চোখের নিমেষে চতুর্দিকে ছড়াইয়া পড়ে। এক দিকে মধ্যরাত্রির সুপ্ত পশুশালা যখন সন্ত্রস্ত হইয়া উঠিয়াছে, অপরদিকে ফুলমালার নির্জীব দেহ ততক্ষণে শীতল হইতে সুরু করিয়াছে।

শুক্রবার, ৬ ভাদ্র, ১৩৭০ (১ ভাদ্র, ১৮৮৫ শকাব্দ) FRIDAY, AUGUST 23, 1963
• অভিনব নৈশ আশ্রয়: কলিকাতার একটি অভিনব নৈশকালীন আশ্রয় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। কসবার বি বি চ্যাটার্জী রোডে এই নৈশ আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন করিয়াছেন ভারত সেবক সমাজের পশ্চিমবঙ্গ শাখা। উক্ত অঞ্চলের ৫০ জনের মত ফেরীওয়ালা, ঠেলা ও রিক্সাচালক মাসিক তিন টাকা অখবা দৈনিক দশ নয়া পয়সা হিসাবে ভাড়া দিয়া ঐ আশ্রয় কেন্দ্রে রাত্রিবাসের সুযোগ পাইবেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের শ্রমমন্ত্রী শ্রীবিজয়সিংহ নাহার এই নৈশ আশ্রয় কেন্দ্রটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এই উপলক্ষে কসবা চিত্তরঞ্জন স্কুল হলে এক অনুষ্ঠানে পৌরহিত্য করেন ভারত সেবক সমাজের পশ্চিমবঙ্গ শাখার আহ্বায়ক ডঃ প্রতাপচন্দ্র চন্দ্র। প্রধান অতিথি ছিলেন কলিকাতার মেয়র শ্রীচিত্তরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। সভাপতির বক্তৃতায় ডঃ চন্দ্র বলেন, পরিকল্পনা কমিশন কলিকাতায় এরূপ অনেকগুলি আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব করিয়াছিলেন, কিন্তু দেশের বর্তমান জরুরী পরিস্থিতি তাহার রূপায়ণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করিয়াছে। আশা করি অদূর ভবিষ্যতে সে বাধা দূর হইবে। উদ্বোধক শ্রীনাহার এবং প্রধান অতিথি শ্রীচট্টোপাধ্যায় ভারত সেবক সমাজের এই সমাজসেবার কর্মোদ্যোগের প্রশংসা করিয়া এই প্রচেষ্টার সাফল্য কামনা করেন।

শুক্রবার, ৬ ভাদ্র, ১৩৭০ (১ ভাদ্র, ১৮৮৫ শকাব্দ) FRIDAY, AUGUST 23, 1963
• আদালতে সংবাদপত্রের অধিকার স্বীকৃত: আদালত বা আইনসভার বিবরণী প্রকাশের অধিকার সংবাদপত্রের আছে কি নাই? এই প্রশ্নের একটি প্রামাণ্য উত্তর—নিরঙ্কুশ না গইলেও এ অধিকার আছে। অভিমতের প্রবক্তা কলিকাতার চীফ প্রেসিডেন্সী ম্যাজিস্ট্রেট শ্রী এস পি চ্যাটার্জী স্বয়ং। আনন্দবাজার পত্রিকাকে বিবাদী করিতে চাহিয়া মেসার্স ভিটামিন ল্যাবরেটরিজ-এর পক্ষ হইতে অভিযোগ দায়ের করার প্রার্থনা জানান হইয়াছিল। আর্জি খারিজ হইয়াছে। বিবাদ মানহানিঘটিত, কিন্তু মানহানির চেয়েও গুরুতর একটি বিরাট প্রশ্ন ইহার সঙ্গে জড়িত—সাংবাদিক জগতের অধিকার রক্ষা। আনন্দবাজার পত্রিকার বিরুদ্ধে অভিযোগের মূলে ৮ই আগস্ট তারিখে ছাপা পূর্বদিনের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় মুখ্যামন্ত্রীর একটি বিবৃতি। এই বিবৃতিতে কোম্পানীটিকে দণ্ডদানের ছিল এবং উহা প্রকাশ করিয়া আমরা নাকি মানহানি করিয়াছি।

শনিবার, ৭ ভাদ্র, ১৩৭০ (২ ভাদ্র, ১৮৮৫ শকাব্দ) SATURDAY, AUGUST 24, 1963
• লাখ টাকার সম্পত্তি বেহাত: কলিকাতা পৌরসভার প্রায় লক্ষ টাকার মূল্যের ভূসম্পত্তি সকলের অগোচরে বিক্রয় হইয়া যাইতেছে। শুক্রবার পৌরসভার সাপ্তাহিক অধিবেশনে কংগ্রেস সদস্য ডাঃ বীরেন বসু এই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেন। তিনি জানান, কয়েক বছর আগে ফতিয়া ফান্ড নামে একটি সংস্থা পৌরসভাকে একটি পুকুর ভরাট করিবার প্রস্তাব দেন। এই পুকুরটি ছিল কালীঘাট পার্কের কাছে মহীশূর গোরস্থানের ধারে। প্রস্তাবে বলা হয়, পুকুরটি ভরাট করিয়া দিলে ঐ সংস্থা পৌরসভাকে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের জন্য ১১ কাঠা জমি দিবে। ঐ চুক্তি অনুযায়ী পৌরসভা পুকুরটি ভরাট করেন। পৌরসভাকে চমকিত করিয়া দিয়া ডাঃ বসু অভিযোগ করেন, পৌরসভাকে প্রদত্ত সেই জমি সম্প্রতি জনসাধারণের নিকট প্লট হিসেবে বিক্রয় হইতেছে। বিক্রয়কারী সংস্থার নামঃ ফতিয়া ফান্ড কমিটি। ডাঃ বসু আরও জানান যে, তিনি নিজে সংশ্লিষ্ট ফাইলের খোঁজ করিয়াছিলেন, কিন্তু ফাইলটি তাহার আগেই গায়েব হইয়াছে। পৌরসভার সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরাও নাকি এই বিষয়ে আলোকপাত করিতে পারেন নাই। ডাঃ বসু স্বয়ং মেয়রকে এই সম্পর্কে তদন্ত করিবার অনুরোধ জানান।

শনিবার, ৭ ভাদ্র, ১৩৭০ (২ ভাদ্র, ১৮৮৫ শকাব্দ) SATURDAY, AUGUST 24, 1963
• নীলাদ্রীর ওজন বাড়িয়াছে, কিন্তু হিমাদ্রি কাবু: জোড়া সাদা বাঘের একটি— নীলাদ্রীর ওজন কিঞ্চিত্ বৃদ্ধি পাইয়াছে। তবে হিমাদ্রির অবস্থা ইদানিং ভাল নয়। প্রথম দিকে দর্শকদের নিকট দর্শনী বাবদ ইট, জুতা, গাছের ডাল ইত্যাদির ঠেলা সামলাইতে নীলাদ্রী-হিমাদ্রি নাজেহাল হইয়াছিল। কিন্তু চিড়িখানার কর্তৃপক্ষ চারিদিকে বেড়া ও কাঁচ দিয়া নীলাদ্রী ও হিমাদ্রিকে রক্ষা করিয়াছেন।
হিমাদ্রির অসুখ সম্পর্কে চিড়িখানার সুপারিন্টেন্ডেন্ট শ্রী আর লাহিড়ীর মতঃ দর্শকদের উত্তেজনা হিমাদ্রিকে রীতিমতো বেকায়দায় ফেলিয়াছে। হিমাদ্রি হয়ত বুঝিতে পারে নাই কলিকাতায় বাঘের চেয়েও হিংস্র প্রাণী থাকিতে পারে। চিড়ায়াখানা কর্তৃপক্ষ ফুলমালার স্থানটি পূরণ করিবার চেষ্টাও করিতেছেন। চিড়িয়াখানায় বর্তমানে যে তিনটি হাতী আছে তাহার মধ্যে একটি শিশু হাতীকে সখের সওয়ারী বহনের কাজে লাগানো হইতে পারে।

রবিবার, ৮ ভাদ্র, ১৩৭০ (৩ ভাদ্র, ১৮৮৫ শকাব্দ) SUNDAY, AUGUST 25, 1963
• বাসযাত্রী আশ্রয় কেন্দ্র: সি এম পি ও সারি দিয়া বাসে উঠিবার রেলিং সহ বাসযাত্রী আশ্রয় কেন্দ্রগুলির একটি মডেল তৈরী করিয়াছেন। মডেলটি কলিকাতা পুলিস এবং কর্পোরেশনের অনুমোদিত। পূজার আগেই যাহাতে মহানগরীতে যতগুলি সম্ভব এই ধরনের আশ্রয় কেন্দ্র চালু করা যায় সেজন্য শনিবার সকালে রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার অফিসে এক বৈঠক হয়। বিভিন্ন বণিকসভা, দক্ষিণ-পশ্চিম কলিকাতা রোটারী ক্লাব, পুলিস প্রভৃতির প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে মডেলটি দেখান হয়। এই ধরণের একটি আশ্রয় কেন্দ্র তৈরী করিতে ১৬৫০ টাকা হইতে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত খরচ পড়িবে। বিভিন্ন বাণিজ্য সংস্থাকে ঐ আশ্রয় কেন্দ্রগুলি নির্মাণ করিতে অনুরোধ করা হয়। বিনিময়ে তাঁহারা ঐ আশ্রয় কেন্দ্রগুলির উপর প্রথম তিন হইতে পাঁচ বছর পর্যন্ত নিজ নিজ ব্যবসায় প্রতীষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিবার অধিকার লাভ করিবেন। ঐ সময় পুনরায় বর্ধিত করা যাইবে। প্রকাশ, প্রস্তাবটি সমর্থনলাভ করে এবং বিভিন্ন বণিকসভা তাঁহাদের সভ্য সংস্থাগুলিকে এ ব্যাপারে অবহিত করিবার আশ্বাস দেন।

রবিবার, ৮ ভাদ্র, ১৩৭০ (৩ ভাদ্র, ১৮৮৫ শকাব্দ) SUNDAY, AUGUST 25, 1963
• কলিকাতাকে ধোঁয়ামুক্ত করার উপার: কলিকাতার আকাশ-কালো করা ধোঁয়া নাগরিক জীবনে শুধু অস্বাচ্ছ্ন্দ্যই আনে না, যক্ষা, ক্যান্সার প্রভৃতি মারাত্মক ব্যাধির প্রসারেও সাহায্য করে। একমাত্র গ্যাসের ব্যবহারের দ্বারাই কলিকাতাকে ধোঁয়ামুক্ত করা যাইতে পারে। ইহা ছাড়া শহরের মধ্যে যে সকল কলকারখানা আছে তাহার চিমনির উচ্চতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। ইহার জন্য ১৯০৫ সালের ধোঁয়া নিবারণী আইনের সংশোধন করা দরকার। শনিবার কলিকাতায় সিটিজেনস ক্লাব আয়োজিত এক সম্মেলনে ডঃ পরিমল সরকার ঐরূপ অভিমত প্রকাশ করেন। শ্রী এস চ্যাটার্জি বসতিপূর্ণ এলাকার স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা করিয়া বলেন যে, কোন ভদ্রপল্লীতে এমন কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকা উচিত্ নহে যাহার দ্বারা সমাজের ক্ষতি হইতে পারে। এব্যাপারে কর্পোরেশন এবং রাজ্য সরকারকে সতর্ক দৃষ্টি রাখিবার জন্য তিনি অনুরোধ জানান। শ্রী এস কে বসু নগরীর কোলাহল সমস্যা সম্পর্কে সকলকে সচেতন ও সতর্ক হইবার আহ্বান জানাইয়া বলেন, মোটর গাড়ী, লাউডস্পীকার, কারখানার আওয়াজ ইত্যাদিই এই সমস্যার কারণ। তিনি বলেন, একমাত্র সরকারই আইন করিয়া এই কোলাহল নিয়ন্ত্রণ করিতে সক্ষম।


“শুধু কি মুখের কথা শুনেছ
দেবতা শোননি কি...”

—এই সেই চাটাই আর মাদুর যার ওপর
আপনি যৌবনে উপবেশন করতেন।

-শেষবার একটু
হাসুন, স্যার।

রবিবার, ৮ ভাদ্র, ১৩৭০ (৩ ভাদ্র, ১৮৮৫ শকাব্দ) SUNDAY, AUGUST 25, 1963
• কলিকাতার রাজনৈতিক মহলে বিস্ময়: নাদার প্রস্তাব কার্যকরী করিতে প্রধানমন্ত্রী শ্রীনেহরুর সিদ্ধান্তটি শনিবার রাত্রে কলিকাতার রাজনৈতিক মহলে একটা আক্স্মিক বোমার মতো আসিয়া পড়িয়া চিন্তাধারায় লণ্ডভণ্ড বাধাইবার অবস্থা সৃষ্টি করে। এখানকার কংগ্রেস এবং অকংগ্রেস— উভয় মহলেই একটা বড় রকমের কিছু পরিবর্তন আশা করিয়াছিলেন। কিন্তু তাহা যে এতখানি বৈপ্লবিক ধরনের হইবে তাহা অনেকেই ধারণা করিতে পারেন নাই। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা হইতে শ্রীলালবাহাদুর শাস্ত্রী, শ্রীমোরারজী দেশাই, শ্রীপাতিল, শ্রীজগজীবন রামের মতো চার চারজন জাতীয় নেতার একসঙ্গে পদত্যাগের সুপারিশ এমন কি কংগ্রেস মহলের মস্তবড় সমর্থকগণও প্রত্যাশা করিতে পারেন নাই।

রবিবার, ৮ ভাদ্র, ১৩৭০ (৩ ভাদ্র, ১৮৮৫ শকাব্দ) SUNDAY, AUGUST 25, 1963
• লাইসেন্স সংক্রান্ত আদেশ লঙ্ঘনের জের, তিনজন পাইকারী মত্স্য ব্যবসায়ী দণ্ডিত: শিয়ালদহের পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেট শ্রী এস সি সর্বাধিকারী বি কে পাল বাজার ও চিত্পুর থানার অন্তর্গত পাতিপুকুর রোডের তিনজন পাইকারী মত্স্য ব্যবসায়ীকে ভারতরক্ষা বিধির ১২৫ (৯) ধারা অনুসারে দণ্ডনীয় অপরাধের জন্য প্রত্যেককে ৫০০ টাকা অর্থদণ্ড অখবা ৫ মাস সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করিয়াছেন। ঐ তিনজন পাইকারী মত্স্য ব্যবসায়ী হইল— নিতাইহরি মুখার্জি, গোষ্ঠবিহারী মণ্ডল ও রেজাউল ইসলাম ওরফে শচীন্দ্রনাথ সরকার। ম্যাজিস্ট্রেট আসামীদের দণ্ডিত করিয়া এইরূপ মন্তব্য করেন, বর্তমান অবস্থায় লাইসেন্স বাতিল করার জন্য লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারিশ করা উচিত বলিয়া আমি মনে করি না। এইসব ক্ষেত্রে লাইসেন্স বাতিল করিয়া দেওয়া হইলে বহু মত্স্য ব্যবসায়ীর ব্যবসা উঠিয়া যাইবে। এরফলে ক্রেতাদের নিকট মত্স্য বিক্রয় সম্পূর্ণ বন্ধ হইয়া যাইতে পারে। আসামীগণ আইনের সহিত যাহাতে নিজেদের খাপ খাওয়াইতে পারে এবং ভবিষ্যতে যাহাতে কঠোরভাবে আইন মানিয়া চলিতে পারে তাহার সুযোগ দেওয়া উচিত। আসামীরা নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে।

সোমবার, ৯ ভাদ্র, ১৩৭০ (৪ ভাদ্র, ১৮৮৫ শকাব্দ) MONNDAY, AUGUST 26, 1963
• আগমনীর সুর আজও বাজে নাই: দূর্গাপূজার ক্ষেত্রে ‘আধুনিক’ বাঙ্গালীও যে পুরাতনপন্থী সে বিষয়ে আর সন্দেহ নাই। এবার বাংলাদেশে দুই দফা দূর্গাপূজার মধ্যে প্রথম বারের, অর্থাত্ বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে পূজার দেরী আর মাত্র এক মাস। এই মতে মহাসপ্তমী ৮ই আশ্বিন, ২৫শে সেপ্টেম্বর। কিন্তু এখনও বাংলাদেশের আকাশে পূজার রঙ ধরে নাই, বাতাসে বাজে নাই পূজার সুর। কোন কোন বারোয়ারী মন্ডপে দুইবারই পূজা হইবে বলিয়া অনেকে অনুমান করিলেও রসিদখাতা হাতে ছেলেরা কলিকাতার পাড়ায় পাড়ায় পূজার চাঁদা সংগ্রহে এখনও বাহির হয় নাই। কুমারটুলিতে প্রতীমা গড়ার কাজ আগাইয়াছে, কিন্তু খরিদ্দারের আনাগোনা সুরু হয় নাই।

সোমবার, ৯ ভাদ্র, ১৩৭০ (৪ ভাদ্র, ১৮৮৫ শকাব্দ) MONNDAY, AUGUST 26, 1963
• কলিকাতা-লন্ডন টেলেক্স সার্ভিস: আজ সোমবার কলিকাতা-লন্ডন আন্তর্জাতিক টেলেক্স সার্ভিসের উদ্বোধন হইবে। ফলে ভারত এবং যু্ক্তরাজ্যের মধ্যে আরেকটি সরাসরি তারযোগাযোগ স্থাপিত হইবে। এই সার্ভিসের উদ্বোধন হইলে কলিকাতার টেলেক্স সার্ভিস গ্রাহকগণ সরাসরি যুক্তরাজ্যের সহিত টেলিপ্রিন্টারের মাধ্যেমে বার্তা বিনিময় করিতে পারিবেন। প্রয়োজন হইলে সম্প্রসারণের দ্বারা অন্যান্য দেশের সহিতও বার্তা বিনিময় সম্ভব হইবে। কলিকাতা-লন্ডন টেলেক্স সার্ভিস সোমবার হইতে শুক্রবার পর্যন্ত ভারতীয় সময় ১২-৩০ মিনিট হইতে ১১-৩০ মিনিট পর্যন্ত এবং শনিবার ১২-৩০ মিনিট হইতে ৬-৩০ মিনিট পর্যন্ত খোলা থাকিবে। উল্লেখয়োগ্য যে, গত ১৫ই জুলাই কলিকাতা হইতে ফিলিপাইন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র টেলেক্স সার্ভিসের উদ্বোধন হইয়াছে। ভারত এবং যুক্তরাজ্যের টেলেক্স সার্ভিসের জন্য প্রথম তিন মিনিট বা আংশিক সময়ের জন্য ৪০ টাকা এবং পরবর্তী প্রত্যেক মিনিট বা আংশিক সময়ের জন্য ১৩ টাকা ৩০ নয়া পয়সা লাগিবে। রিপোর্ট ফি ৪ টাকা।

বুধবার, ১১ ভাদ্র, ১৩৭০ (৬ ভাদ্র, ১৮৮৫ শকাব্দ) WEDNESDAY, AUGUST 28, 1963
• কল্যাণকর প্রকল্পের সমাধি: কলিকাতায় মধ্যআয়ের জন্য না-লাভ, না-লোকসানের ভিত্তিতে পলিক্লিনিক নার্সিংহোম স্থাপনের পরিকল্পনাটি বানচাল হইবার সংবাদ মিলিয়াছে। পরিকল্পনাটি ছিল স্বর্গত মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের। ঠিক হইয়াছিল নগরীতে ঐরূপ অন্তত চারটি প্রতিষ্ঠান গড়িয়া তোলা হইবে। তদনুযায়ী সুবার্বন রোডের একটি বাড়ীতে একটি পলিক্লিনিক নার্সিংহোম স্থাপনের উদ্যোগ সুরু হয়। এজন্য রাজ্য সরকারের তরফ হইতে দুই লক্ষ টাকাও দেওয়া হয়। গত বত্সর জুলাই মাসে উহা উদ্বোধনের কথাও নাকি ছিল। কিন্তু ডাঃ রায়ের আকস্মিক মৃত্যুতে তাহা মুলতুবী থাকে। কিন্তু এরপর আর কোন উদ্যোগের কথা শোনা যায় নাই। এখন শোনা যাইতেছে যে, ওয়েস্টবেঙ্গল হেল্থ কেয়ার সোসাইটি সুবার্বন রোডের প্রস্তাবিত ক্লিনিকটির সমস্ত কিছু সরকারের হাতে তুলিয়া দেওয়ার জন্য ব্যস্ত হইয়া পড়িয়াছে। ডাঃ রায়ের আমলে সোসাইটিটি গঠিত হইয়াছিল। এসম্পর্কে রাজ্য সরকারের জনৈক মুখপাত্রকে জিজ্ঞাসা করিলে তিনি জানান, সুবার্বন রোডের ঐ ক্লিনিকটি গ্রহণে সরকার রাজী আছেন। এবং উহা কোন হাসপাতালের সহিত জুড়িয়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত হইয়াছে। সম্ভবত উহা শেঠ সুখলাল কারনানী হাসপাতালের সহিত যুক্ত হইবে।

বৃহস্পতিবার, ১২ ভাদ্র, ১৩৭০ THURSDAY, AUGUST 29, 1963
• ‘রাজনীতি থেকে অবসরই নেব’ ষষ্ঠিতম জন্মদিনে শ্রীঅতুল্য ঘোষের উক্তি: “বয়স হয়েছে, ভাবছি এবার রাজনীতি থেকে অবসরই নেব।” – ষাটতম জন্মদিনে কংগ্রেসনেতা শ্রীঅতুল্য ঘোষের মন্তব্য। কারবালা ট্যাঙ্ক লেনের বাড়িতে দোতলার ঘরে বসেছিলেন শ্রীঘোষ। ভোর পাঁচটা থেকে সুরু হয়েছে অনুগামীদের আগমন। হাতে ফুলের তোড়া অথবা মালা; অনেকের সঙ্গে তার ওপরও মিষ্টির ঠোঙ্গা বা উপহারের প্যাকেট। জিজ্ঞাসা করলাম, শুভদিনে আবার কি ভাবছেন? হেসে উত্তর দিলেন, বয়স হয়েছে ভাবছি এবার রাজনীতি থেকে অবসরই নেব। সরকারী কর্মচারীদের যদি ৫৮ বছরে অবসর নিতে হয়, তবে সরকার যাঁরা চালান তাঁরা বুড়ো বয়েসেও কাজে বহাল থাকবেন কেন? কিন্তু সত্যিই কি অবসর নেওয়ার মত বার্ধক্য নেমে এসেছে শ্রীঘোষের দেহ বা মনে? মনে হয় না; বুধবারও মনে হল না। প্রানখোলা হাসি দিয়ে অভ্যর্থনা জানালেন অতিথিদের সারাদিন ধরে। মুখ্যমন্ত্রী শ্রীসেন এলেন দুপুর দেড়টা নাগাদ। জন্মদিনে অনুজ সহকর্মীর জন্য উপহার: একখানা মাদুর, একজোড়া তাকিয়া, খদ্দরের ধুতি এবং পানিকরের লেখা “দি ফাউন্ডেশনস অফ নিউ ইন্ডিয়া”। প্রথম পৃষ্ঠায় লেখা “অতুল্যর জন্মদিনে। প্রফুল্লচন্দ্র সেন। ২৮শে আগষ্ট, ১৯৬৩।”

শনিবার, ১৪ ভাদ্র, ১৩৭৫ SATURDAY, AUGUST 31, 1963
• বোমা পড়ার মহড়া: বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ৪৫মিঃয়ে পার্কস্ট্রীটের কাছে সেন্টজেভিয়ার্স স্কুলের মাঠে “বোমা” পড়ে। অনেকক্ষণ ধরিয়াই “সাইরেন” বাজিতে ছিল। বিমানের গর্জন শোনা যায়। বিকট শব্দ করিয়া কয়েকটি বোমা ফাটে। কয়েকজন পথচারী অজ্ঞান হইয়া যায়। একটি গৃহে আগুন লাগে। তবে অসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের নারী কর্মীরা সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে আসিয়া পড়েন। তাঁহারা কিছুক্ষণের মধ্যে অবস্থা আয়ত্বে আনেন। উপরের ঘটনাটি বাস্তব চিত্র নহে। কিন্তু বাস্তবের নিখুঁত প্রতিচ্ছবি। পশ্চিমবঙ্গ ডব্লিউ ভি এস এর নারী কর্মীরা অসামরিক প্রতিরক্ষা ও শূশ্রষার যে ট্রেনিং গ্রহণ করিয়াছেন বৃহস্পতিবার বিকালে উহা তাঁহারা মুকাভিনয় করিয়া দেখান, রাজ্যপাল শ্রীমতী পদ্মজা নাইডু অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। জরুরী অবস্থার জন্য কলিকাতার নারী সমাজ সর্বোতভাবে প্রস্তুত হইতেছেন। ১০ জন নারী অ্যম্বুলেন্স চালনার ট্রেনিং লইয়াছেন। ৭৫ জন প্রাথমিক চিকিত্সার কাজ নিপুণভাবে আয়ত্ব করিয়াছেন। শূশ্রষার কাজ শিখিয়াছেন ৭৫ জন। অসামরিক প্রতিরক্ষার শিক্ষা লইয়াছেন ৩০ জন। কলিকাতার পুলিশ কমিশনার ও অসামরিক প্রতিরক্ষা কন্ট্রোলার শ্রীশচীন্দ্রমোহন ঘোষ অনুষ্ঠানে অসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মসূচীর বিবরণ দান করেন। ডব্লিউ ভি এস এর পক্ষে শ্রীমতী গীতা চৌধুরীও বক্তৃতা দেন।

শনিবার, ১৪ ভাদ্র, ১৩৭৫ SATURDAY, AUGUST 31, 1963
• পশুশালায় নবাগতা শ্বেত-বাঘিনী: গত ২৭শে আগষ্ট মঙ্গলবার রাত্রি বারো ঘটিকায় শ্বেত-শার্দূল হিমাদ্রি অথবা নীলাদ্রির জীবনসঙ্গিনী আলিপুরের পশুশালায় আসিয়া পৌঁছিয়াছে। শ্রীমতীর এখনও নামকরণ হয় নাই। সুদীর্ঘ পথ ভ্রমণের ধকল শ্রীমতী এখনও পুরোপুরি কাটাইয়া উঠিতে পারে নাই। ট্রাক-বাহনে কলিকাতায় আসিয়া পৌঁছিবার সঙ্গে সঙ্গে তাহাকে শ্বেত-শার্দূলের বিশেষ আস্তানায় লইয়া যাওয়া হয়। অসুস্থ হিমাদ্রির শূণ্য খাঁচায় তাহার সাময়িক আশ্রয় মিলিয়াছে। শুক্রবার দুপুরেও সে এই খাঁচার মধ্যেই অস্থিরভাবে বিচরণ করিতেছিল। রেওয়ার গোবিন্দগড় হইতে ট্রাকে আসিবার সময় শ্রীমতীর সামনে দুই পায়ের কিছু কিছু অংশ ছড়িয়া গিয়াছে। তাছাড়াও সে এখন বেশ দুর্বল এবং প্রকৃত বয়স অপেক্ষা দেখিতে বিলক্ষণ অল্পবয়স্কা। পশুশালায় কতৃর্পক্ষের মতে পথশ্রমই ইহার কারণ। দু-চার দিনের তোয়াজেই আবার ভাইদের মত তেজী হইয়া উঠিবে।

রবিবার, ১৫ ভাদ্র, ১৩৭৫ SUNDAY, SEPT 1, 1963
• ইলিয়ট শীল্ড; আশুতোষ কলেজ ৮ বার বিজয়ী: শনিবার দর্শকসমাকীর্ণ মহমেডান স্পোর্টিং মাঠে আই এফ এ পরিচালিত আন্ত: কলেজ নক আউট প্রতিযোগিতা ইলিয়ট শীল্তের ফাইনালে আশুতোষ কলেজ ১-০ গোলে মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজ কে পরাজিত করিয়া ৮ বার ইলিয়ট শীল্ড লাভের গৌরব অর্জন করিয়াছে। খেলাটিতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও বিশেষ উত্সাহ এবং উদ্দীপনা দেখা যায়। মনে হয়, দুইটি কলেজের প্রায় সকল ছাত্রই এইদিন মাঠে উপস্থিত ছিলেন। প্রথমার্ধ গোল শূণ্যভাবে শেষ হইবার পর দ্বিতীয়ার্ধের সূচনায় আশুতোষের এস সমাজপতির ফরোয়ার্ড পাস হইতে বি চ্যাটার্জী যে বিদ্যুতগতি সট করেন তাহা গোল রক্ষককে পরাজিত করিয়াও বারপোষ্টে লাগিয়া ফিরিয়া আসে। তের মিনিটে এস সমাজপতি সেন্টার হইতে হেড করিয়া আশুতোষের লেফট ইন নীলেশ সরকার জয়সূচক গোলটি করেন ১-০। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, আশুতোষ কলেজ এই পর্যন্ত ১৪ বার ফাইনালে উঠিয়াছে। ১৯৬২ সালে সুরেন্দ্রনাথের সহিত যুগ্ম বিজয়ী হইয়া মোট ৮ বার ট্রফি পায় এবং ৬ বার রানার্স হয়।

মঙ্গলবার, ১৭ ভাদ্র, ১৩৭৫ TUESDAY, SEPT 3, 1963
• এবার ভরসা চিন্তামণি: সোমবার হইতে কলিকাতা ও শিল্পাঞ্চলে রেশন-প্রথায় চিনি বিক্রয় শুরু হইয়াছে। এই দিন পর্যন্ত পয়তাল্লিশ লক্ষ্যের বেশী লোকের রেশন কার্ড হইয়াছে, এখনও বাকী কয়েক লক্ষ। মহানগরীর নাগরিকদের এক বিরাট অংশই এই রেশন ব্যবস্থাকে খুব খুশি মনে গ্রহণ করিতে পারেন নাই। তাহারা ইহাকে নতুন ঝঞ্ঝাট বলিয়া মনে করিতেছেন। কাহার কাহার বক্তব্য: মাছের পর এইবার চিনি। মাছের লাইসেন্সের কল্যানে দর মগডালে চড়িল, এবার চিন্তামণির চিনি জোগানের নমুনা দেখা যাইবে। রেশনিং প্রবর্তিত হওয়ায় মহানগরীতে খোলাবাজারে চিনি বিক্রয় বন্ধ হইয়া গেল। এযাবত প্রায় ৪৫০ টি মুদি দোকান মারফত নিয়ন্ত্রিত দরে চিনি বিক্রয় হইত, তাহাও বন্ধ। ১৭০ জনের মত ব্রোকার বা দালাল বেকার। চিনির দালালরা শতকরা চার আনা কমিশনে চিনি কেনা বেচা করিতেন। ২৭ শে মে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু হইলে সরকার ইহাদের মারফত মাসে প্রায় তিন হাজার টন চিনি খোলা বাজারে ছাড়িতেন। এখন সে প্রথা তুলিয়া দেওয়া হইল।

বৃহস্পতিবার, ১৯ ভাদ্র, ১৩৭৫ THURSDAY, SEPT 5, 1963
• পাক অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা বিপুল বৃদ্ধি: গত কয়েকমাসে এই অঞ্চলে পাকিস্তানী অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা বিপুলহারে বাড়িয়াছে বলিয়া ওয়াকিবহাল মহল হইতে জানা গিয়াছে। তাহাদের মতে যে সকল পাকিস্তানী বেআইনীভাবে প্রবেশ করিতেছে, তাহাদের মধ্যে অতি অল্প সংখ্যকই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। ঐ মহলের মতে, পাকিস্তান হইতে বেআইনীভাবে মানুষ পাচার করিবার কারবারে একটি ব্যবসায়ী দল জড়িত রহিয়াছে। সম্প্রতি মসলন্দপুরে স্ত্রীলোক সহ একদল পাকিস্থানী মুসলমান বেআইনীভাবে ভারতে প্রবেশ করিবার অভিযোগে ধরা পড়ে। তাহারা গোয়েন্দা পুলিশের নিকট বলে যে, কলিকাতার একদল ব্যবসায়ী এই মানুষ পাচারের ব্যবসা চালায়। এই সকল ব্যবসায়ীর সহিত সীমান্তের উভয় পার্শ্বের শাস্ত্রী ও চেকপোষ্টের নাকি একটি বন্দোবস্ত আছে। যাহারা পাকিস্তান হইতে আসিতে চায়, তাহারা মাথা প্রতি কুড়ি টাকা ঐ ব্যবসায়ীদের দিলে তাহারা নির্বিঘ্নে ভারতে চলিয়া আসিতে পারে। এই ধরনের কারবার নাকি দীর্ঘ ধরিয়া চলিতেছে। গত পনেরো দিনের মধ্যে গোবরডাঙ্গা ও মসলন্দপুরের নিকট কিছু সংখ্যক পাকিস্তানী মুসলমান কে স্থানীয় জনসাধারণ পাকড়াও করে। গত সপ্তাহে পুরন্দরপুর, ঝাউডাঙা, আংরাইন প্রভৃতি স্থানে কয়েকজন পাকিস্তানী মুসলমান ধরা পড়ে। ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের তেঁতুলিয়া, পুরন্দরপুর, ঝাউডাঙা প্রভৃতি স্থান দিয়া হামেশাই পাকিস্তানী মুসলমানরা ভারতে প্রবেশ করে।

শনিবার, ২১ ভাদ্র, ১৩৭০ SATUSDAY, SEPT. 7. 1983
• শিয়ালদহ বিভাগে বৈদ্যুতীকরণ, ২৮খানি ট্রেলার কোচ কলিকাতায় পৌঁছিয়াছে: পূর্ব রেলের শিয়ালদহ বিভাগে যে সকল এলাকায়— বৈদ্যুতীকরণ হইয়াছে, তাহার জন্য প্রয়োজনীয় ট্রেলার কোচ কলিকাতায় পৌঁছিতে শুরু করিয়াছে। ইতিমধ্যেই ২৮খানি ‘ট্রেলার কোচ’ এখানে আসিয়া পৌঁছিয়াছে। শীঘ্রই আরও আসিয়া পড়িবে। গত মাসে আসানসোলে এই ট্রেলারগুলি পরীক্ষামূলকভাবে চালান করা হইয়াছিল। চারটি কোচবিশিষ্ট এই ট্রেনে তৃতীয় শ্রেণীতে ৩৭০টি আসন এবং প্রথম শ্রেণীতে ২৫টি আসন থাকিবে। ইহা ছাড়া দাঁড়াইয়া যাইবার যথেষ্ট জায়গা থাকিবে। একটি কোচে ভেন্ডরদের মালপত্র রাখিবার ব্যবস্থা থাকিবে। এই ট্রেনগুলির গতিবেগ ঘণ্টায় ষাট মাইল। পেরাম্বুর ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরীতে এই কোচগুলি নির্মিত হইয়াছে। ইহাদের সামনে ও পিছনে উভয় দিকেই একখানি করিয়া ইঞ্জিন থাকিবে।

রবিবার, ২২ ভাদ্র, ১৩৭০ SUNDAY, SEPT. 8, 1963
• আদিগঙ্গার উপর কাঠের পুল ভাঙ্গিয়া পাকা করার সিদ্ধান্ত: কেওড়াতলার নিকট আদিগঙ্গার উপর যে কাঠের পুলটি আছে, উহা ভাঙ্গিয়া একটি পাকা পুল করিবার পরিকল্পনা লওয়া হইয়াছে। রাজ্য সেচ দপ্তর কলিকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্টের সহযোগিতায় ওই পাকা পুলটি নির্মাণ করিবেন স্থির হইয়াছে। এই পাকা পুলটি নির্মিত হইলে চেতলা ও কালিঘাটের সংযোগ সহজ হইয়া উঠিবে।

মঙ্গলবার, ২৪ ভাদ্র, ১৩৭০ (১৯ ভাদ্র, ১৮৮৫ শক) TUESDAY, SEPTEMBER 10, 1963
• কলিকাতায় নূতন ধরনের রোগ: কলিকাতায় নূতন ধরনের একটি রোগ দুশ্চিন্তা ও শঙ্কার সৃষ্টি করিয়াছে। এই রোগে আক্রান্তদের অকস্মাত্ প্রবল জ্বর হইতেছে। এবং অল্পক্ষণের মধ্যেই রোগী রক্তবমি সুরু করিতেছে। চিকিত্সকদের বহু চেষ্টা সত্ত্বেও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অনেকের প্রাণহানি ঘটিতেছে। প্রধানত অল্পবয়স্ক বালক-বালিকা ও শিশুদের মধ্যে এই রোগ দেখা দিতেছে। গত কয়েক দিনে কলিকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে এই রোগাক্রান্ত সন্দেহে বহু রোগী ভর্তি করা হয়। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগে ইতিমধ্যে কয়েকটি শিশুর অকালমৃত্যু ঘটিয়াছে। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে রোগী আরোগ্যলাভ করিতেছে।

মঙ্গলবার, ২৪ ভাদ্র, ১৩৭০ (১৯ ভাদ্র, ১৮৮৫ শক) TUESDAY, SEPTEMBER 10, 1963
• পরলোকে ডঃ রামকুমুদ মুখার্জি: বিশ্রুতকীর্তি ঐতিহাসিক ও শিক্ষাবিদ ডঃ রাধাকুমুদ মুখোপাধ্যায় সোমবার দুপুর ১২-৫ মিনিটের সময় বালীগঞ্জে তাঁহার ৩৯, একডালিয়া প্লেসস্থিত বাসভাবনে পরলোকগমন করেন। তাঁহার বয়স ৭৯ বত্সর হইয়াছিল। এইদিন বিধান পরিষদের অধিবেশন মুলতুবী হওয়ার অব্যবহিত পূর্বে চেয়ারম্যান ডঃ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় তাঁহার মৃত্যুর উল্লেখ করেন।
সদস্যগণ দুই মিনিটকাল নীরবে দাঁড়াইয়া তাঁহার উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং একটি শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়। হঠাত্ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হইয়া তাঁহার মৃত্যু হয়। পৌনে বারটা নাগাদ মধ্যাহ্ন ভোজনের পর তিনি তাঁহার একমাত্র পুত্র কলিকাতাস্থ আকাশবাণীর অফিসার শ্রী পি কে মুখার্জি এবং বাড়ীর অন্যান্য লোকজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। তাঁহার পুত্রও অফিসে বাহির হইয়াছেন আর পাঁচ মিনিটের মধ্যে সব শেষ।

মঙ্গলবার, ২৪ ভাদ্র, ১৩৭০ (১৯ ভাদ্র, ১৮৮৫ শক) TUESDAY, SEPTEMBER 10, 1963
• ট্যাপা মাছ হইতে সাবধান, প্রাণহানি হইতে পারে: মাছের চড়া বাজারে কলিকাতায় সস্তায় “ট্যাপা মাছ” খাইয়া জীবনসংশয় এবং প্রাণহানির সংবাদ পাওয়া যাইতেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একই পরিবারের কয়েকজন একসঙ্গে পীড়িত হইতেছে। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জনসাধারণকে “ট্যাপা মাছ” হইতে সাবধান করিয়া দেন। তাহারা বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরিয়া হাসপাতালে “ট্যাপা মাছ” খাওয়ায় পীড়িত রোগীর ভীড় লাগিয়া আছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়জনের ‘মৃত্যু’ও হইয়াছে। “ট্যাপা মাছ” জেলাবিশেষে ফটকা কিংবা “ব্যাঙ মাছ” বলিয়াও পরিচিত। সাধারণত লোকে খায় না। ছেলেপিলেরা এই মাছের পেট ফুলাইয়া “বোম ফাটাইতে” আনন্দ পায়। জেলেরাও সাধারণত এই মাছ ফেলিয়া দেয়। কিন্তু কলিকাতায় মাছের আকালে “ট্যাপা মাছের”ও ইজ্জত বাড়িয়াছে। কিছুদিন ধরিয়া বাজারে এই মাছ রীতিমত ওজন করিয়া বিক্রী হইতে দেখা যাইতেছে।

বুধবার, ২৫ ভাদ্র, ১৩৭০ WEDNESDAY, SEPT. 11, 1963
• সরকারী হাসপাতালে বহির্বিভাগে বৈকালিক শিফট চালু করার সিদ্ধান্ত অনুমোদিত: হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীদের ভিড় কমাইবার জন্য রাজ্য সরকার সরকারী হাসপাতালগুলিতে বৈকালিক শিফট চালু করার সিদ্ধান্তটি অনুমোদন করিয়াছেন। সোম ও মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিষয়টি অনুমোদিত হইয়াছে। স্থির হইয়াছে প্রথমে শেঠ সুখলাল করনারী হাসপাতাল ও আর জি কর হাসপাতালের বহির্বিভাগে এই বৈকানিক শিফট চালু করা হইবে। রোগী পিছু দক্ষিণা— প্রথমবারের জন্য দুই টাকা ও পরবর্তীকালের জন্য এক টাকা ফি লওয়া হইবে। বর্তমানে হাসপাতালগুলিতে বহির্বিভাগে মাত্র প্রাতঃকালীন শিফট চালু আছে।

বৃহস্পতিবার, ২৬ ভাদ্র, ১৩৭০ (২১ ভাদ্র, ১৮৮৫ শক) THURSDAY, SEPTEMBER 12, 1963
• ট্রাম-বাস স্টপ ছাঁটাই: ‘একেই মা মনসা, তায় ধুনোর গন্ধ।’ ভদ্রলোক সখেদে কহিছেন, ‘একেই ট্রাম-বাস একবার চলা শুরু করিলে সহজে থামিতে চায় না, তার উপর এই সিদ্ধান্ত!’ যে-সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ভদ্রলোকের এই খেদ তাহা হইল— কলিকাতার ট্রাম ও বাসের ‘স্টপ’-এর সংখ্যা কমাইয়া দেওয়া হইবে। সিদ্ধান্তটি লইয়াছেন যানবাহন উপদেষ্টা বোর্ডের উপসমিতি। উপসমিতি মনে করেন— ঐসব ‘স্টপ’-এর দূরত্বের কোন মাথামুণ্ডু নাই। সংখ্যাতেও বেশি। ট্রাম-বাসের গতি ঠিকমত বহাল রাখিতে হইলে কিছু কিছু ‘স্টপ’কে বাতিল করা ছাড়া নানা পন্থা। প্রথম কিস্তিতে খুব সম্ভব কোতল হইতেছে— মহাত্মা গান্ধী রোড, চিত্পুর রোড ও আশুতোষ মুখার্জী রোডের কয়েকটি ‘স্টপ’। বোর্ডের পরবর্তী বৈঠকে পাকাপাকি সিদ্ধান্ত লওয়া হইবে।

শুক্রবার, ২৭ ভাদ্র, ১৩৭০ FRIDAY, SEPT. 13, 1963
• ১৫ বছরে কলিকাতায় কলেরায় ২১ হাজার লোকের মৃত্যু: ১৯৪৮ হইতে ১৯৬২— এই পনের বছরে কলিকাতায় কলেরায় ২১ হাজার লোকের মৃত্যু হইয়াছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গার্ডেনরীচে কলিকাতা দক্ষিণ-পশ্চিম রোটারী ক্লাবের সাপ্তাহিক সভায় সি এম পি ও’র সেক্রেটারী লেঃ জেঃ ডি এন চক্রবর্তী এই কথা জানান। তিনি বলেন, ঐ সময়ে কলিকাতায় কলেরা রোগে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশীই দাঁড়াইবে, তবে অতগুলি মৃত্যু সম্পর্কে রিপোর্ট পাওয়া গিয়াছে। কলিকাতার উন্নয়ন সম্বন্ধে শ্রীচক্রবর্তী এই সাপ্তাহিক সভায় বক্তৃতা করিতেছিলেন। মহানগরীর অন্যান্য সমস্যা আলোচনা করিয়া তিনি জানান, বস্তী উন্নয়ন, পানীয় জল সরবরাহ বৃদ্ধি এবং পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতির উপরই সি-এম-পি-ও তাহাদের পরিকল্পনায় সর্বোচ্চ স্থান দিয়াছে। বৃহত্তর কলিকাতার জরুরী জলসরবরাহ প্রকল্পটি আগামী দুই বত্সরের মধ্যেই সম্পন্ন করা যাইবে বলিয়া তিনি মনে করেন।

শুক্রবার, ২৭ ভাদ্র, ১৩৭০ (২২ ভাদ্র, ১৮৮৫ শক) FRIDAY, SEPTEMBER 13, 1963
• শিয়ালদহ সেকসনে বিলম্বে ট্রেন চলাচলের ফলে সমস্যা: পূর্ব রেলওয়ের শিয়ালদহ সেকশনে দেরীতে ট্রেন চলাচলের ব্যাপারে পর পর তিন দিন ঝড় বহিয়া যাওয়ার পর অবশেষে রাজ্য সরকার এবং রেল কর্তৃপক্ষের টনক নড়িয়াছে। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন সরকারী দপ্তরে রেল কর্তৃপক্ষের সহিত উদ্ভূত সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করেন। প্রকাশ, এই আলোচনাকালে রেল কর্তৃপক্ষ ট্রেন আটকের ফলে যাত্রী ও মাল পরিবহণ ব্যবস্থার যে দারুণ সঙ্কটের সৃষ্টি হইয়াছে এবং প্রতিরক্ষা প্রচেষ্টায় যে বিঘ্ন দেখা দিয়াছে তাহা বিভিন্ন তথ্যের সহিত মুখ্যমন্ত্রীর গোচরে আনেন। ট্রেন চলাচল ব্যবস্থায় বিপর্যয় এবং সেজন্য যাত্রিসাধারণের দুর্গতির কথা মানিয়া লইয়াও কোন কোন মহল বলেন যে, ইহা কোন মতেই অস্বীকার করা যায় না যে, দিনের পর দিন গাড়ী চলাচলে বিলম্ব ঘটিলে অফিস ও পড়ুয়া যাত্রীদের নানা অসুবিধা ভোগ করিতে হয়। অফিস যাত্রীদের ক্ষেত্রে তিনদিন হাজিরা দিতে বিলম্ব হইলে একদিনের ক্যাজুয়েল লিভ কাটা যায়। সেক্ষেত্রে তাঁহাদের ধৈয্যচ্যুতি ঘটিলে তাহা একেবারে অস্বাভাবিক বলিয়া মনে করা যায় না।

Sunday, September 15, 1963, রবিবার, ২১ ভাদ্র, ১৩৭০( ২৪ ভাদ্র, ১৮৮৫ শক)
• দক্ষিণ কলকাতায় বাড়ি ধসিয়া ছয়জন নিহত: শুক্রবার গভীর রাত্রে প্রবল বর্ষণের ফলে দক্ষিণ কলিকাতার হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রীটে একটি দোতলা বাড়ি ধসিয়া পড়ায় ছয় জন নিহত হইয়াছে। ইহা ছাড়া এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ১০ জন আহত হয়। নিহতদের মধ্যে এক সন্তান-সম্ভবা মহিলা ও তাঁহার তিনটি শিশু এবং অপর এক পরিবারের দুইটি শিশু আছেন। হতভাগ্য পরিবার দুইটি এই ‘মৃত্যুপুরী’র একতলায় পাশাপাশি ঘরে বাস করিতেছেন এবং ঐ সময়ে তাঁহারা নিদ্রিত ছিলেন। সংবাদ পাইয়া দমকলবাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটিয়া যান এবং সারা রাত ধরিয়া উদ্ধার কার্য চালান। ধ্বংসস্তূপের ভিতর হইতে ছয়টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। দুর্ঘটনার আকস্মিকতায় হতচকিত পাড়ার লোকেরাও মুহ্যমান ভাব কাটাইয়া সাহায্য করিতে ছুটেন। পুলিসও আসে। প্রকাশ, রাত্রি সাড়ে বারটা নাগাদ হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রীটের এই বাড়িটির দোতালায় ছাদ এবং মেঝে হঠাত্ ভাঙ্গিয়া পড়ে। উপরতলায় যে পাঁচজন বাস করিতেন তাঁহারা লাফাইয়া নীচে পড়েন। এবং রক্ষা পান। কিন্তু নীচতলায় দুইটি ঘরের ১৬জন আটক পড়েন।

Monday, September 16, 1963, সোমবার, ৩০ ভাদ্র, ১৩৭০( ২৫ ভাদ্র, ১৮৮৫ শক)
• পরলোকে শুভময় ঘোষ: আনন্দবাজার ও দেশ পত্রিকার মস্কোর প্রতিনিধি শুভময় ঘোষ রবিবার সকালে কলিকাতায় শেঠ শুকলাল কারনানী হাসপাতালে পরলোকগমন করেন। সম্প্রতি তিনি রাশিযা হইতে দেশে ফিরিয়াছিলেন। তাঁহার বয়স মাত্র ৩৪ বত্সর হইয়াছিল। ইনফেকটিভ হেপাটাইটিস রোগের মারাত্মক আক্রমণে তাঁহার মৃত্যু ঘটে। শাহনগর বৈদ্যুতিক চুল্লিতে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। শুভময় শান্তিনিকেতন ও শ্রীনিকেতনের সংগঠন পর্বে রবীন্দ্রনাথের অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহকর্মী স্বর্গত কালীমোহন ঘোষের কনিষ্ঠ পুত্র এবং শ্রীশান্তিদেব ঘোষ ও শ্রীসাগরময় ঘোষের সহোদর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, একমাত্র নাবালক পুত্র, বৃদ্ধ মাতা, এক ভগিনী এবং পাঁচ ভ্রাতা রাখিয়া যান। মাতামহীও জীবিতা।

বৃহস্পতিবার, ২ আশ্বিন, ১৩৭০(২৮ ভাদ্র, ১৮৮৫ শক) Thursday, September 19, 1963
• শিয়ালদহ সেকশনে বৈদ্যুতীকরণের কাজ অনেকদূর অগ্রসর: বুধবার দুই ঘন্টা ধরিয়া পুর্ব রেলের অফিসারদের সহিত কলিকাতার একদল সাংবাদিক শিয়ালদহ সেকশনের বৈদ্যুতিকরণের কাজ পরিদর্শন করিয়াছেন। অনেক পয়েন্ট, অনেক জয়েন্ট, অনেক সিগন্যালের সূক্ষ্ম কারিকুরি তাঁহারা দেখিয়াছেন। সন্দেহ নাই বৈদ্যুতিকরণের জটিল কাজ বহুদূর অগ্রসর হইয়াছে। তবু স্বাভাবিক কারণেই যে দুইটি প্রশ্ন মাথা চাড়া দিয়ে উঠিয়াছে, তাহার পরিষ্কার জবাব কর্তৃপক্ষ দিতে পাবেন নাই। প্রশ্ন দুইটি ইহাইঃ
(১) শিয়ালদহ সেকশনে বৈদ্যুতিক ট্রেন কবে চলিবে? এবং (২) ট্রেনের ভিড় কমাইবার উপযুক্ত ব্যবস্থা কতদিনে গ্রহণ করা সম্ভব হইবে?

শুক্রবার, ৩ আশ্বিন, ১৩৭০(২৯ ভাদ্র, ১৮৮৫ শক) Friday, September 20, 1963
• সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের অফিস তছনছ: বৃহস্পতিবার দুপুরে একদল লোক বেলেঘাটা সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের সুপারিন্টেডেন্ট অফিসের আসবাবপত্র তছনছ করে। এই হাঙ্গামায় অফিসে কর্মরত এক মহিলা-সহ পাঁচ ব্যক্তি অল্পবিস্তর আহত হন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগে প্রকাশ, হাঙ্গামাকারীদের মধ্যে অনেকেই ঐ হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী। পুলিশ এই হাঙ্গামার অভিযোগে তিন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। ঘটনার পর হইতে চতুর্থ শ্রেণীর একদল কর্মী কাজ বন্ধ করিয়া অবস্থান ধর্মঘট সুরু করে। ফলে বিকাল হইতে রোগীদের তদ্বির তদারকে বিঘ্নের সৃষ্টি হল। রাত্রি ৮টা নাগাদ সংবাদ লইয়া জানা যায় তাহারা অবস্থান ধর্মঘট প্রত্যাহার করিয়া লয়। এই সম্পর্কে অভিযোগ পাওয়া যায় যে কিছু দিন পূর্বে হাসপাতালের দুইজন অধস্তন কর্মীকে কোন একটি ওয়ার্ডে কাজ করিবার নির্দেশ দেওয়া হয়। তাহারা নাকি কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করিয়া কাজে অনুপস্থিত থাকে।

আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এই সকল সংবাদের বানান ও ভাষা অপরিবর্তিত।
 
 


 

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player

 
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.