মন্ত্রী অমিত মিত্র দিল্লিতে এসএফআইয়ের হাতে নিগৃহীত হওয়ার পরে মঙ্গলবার তৃণমূলের নেতৃত্বে পাল্টা ‘প্রতিবাদ’-এর সাক্ষী থাকল গোটা রাজ্য। যার জেরে সিপিএমের অসংখ্য দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর চলে। কোথাও প্রাক্তন মন্ত্রীর গাড়িতে ঢিল পড়ে। রাস্তা অবরোধ হয়। কংগ্রেস সাংসদ দীপা দাশমুন্সির গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখানো হয় নামখানায়।
তবে হাওড়া-হুগলি, দুই ২৪ পরগনায় সব থেকে বড় ঘটনায় কেন্দ্রবিন্দুতে সেই রেজ্জাক মোল্লা। গত ২ জানুয়ারি ভাঙড়ে যাঁর উপরে আক্রমণ চলে। এ দিন ফের তাঁর গাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে ভাঙড়ে। ঘটনাস্থল, ঘটকপুকুর।
|
সুদর্শন রায়চৌধুরীর গাড়ির কাচ ভাঙল ইটে। |
এ দিন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সমস্ত বিডিও অফিসে বামফ্রন্টের স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি ছিল। সেখান থেকেই ফিরছিলেন ভাঙড়ের বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লা ও জেলা সিপিএমের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সাত্তার মোল্লা। ঘটকপুকুরে তৃণমূলে জমায়েতে তাঁদের গাড়ি আটকে পড়ে। অভিযোগ, রেজ্জাকের গাড়ির সামনে বোমা ছোড়া হয়। গাড়িতে ইট পড়ে। হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা যুব তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি কাইজার আহমেদ। তিনি বলেন, “আমরাই দায়িত্ব নিয়ে ওঁদের গাড়ি বের করে দিয়েছি। আমরা সৌজন্যর রাজনীতিতে বিশ্বাস করি।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, “তৃণমূল সমর্থকেরা বারুইপুরেও সিপিএমের জেলা অফিসে হামলা চালিয়েছে।”
ব্যারাকপুরে স্টেশন চত্বরে মঙ্গলবার বিকেলে ডিওয়াইএফের সভা শুরুর আগে এক দল তৃণমূল সমর্থক সভার মঞ্চ, চেয়ার, টেবিল ভেঙে দেয়। ফ্লেক্স পুড়িয়ে দেয় বলেও অভিযোগ। ডিওয়াইএফ কর্মীদের মারধর করে। সিপিএমের ব্যারাকপুর জোনাল অফিস-সহ শহরের ১০টি অফিস তৃণমূল কর্মীরা ভাঙচুর করেছে বলে অভিযোগ। ব্যারাকপুর পুরসভার চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল নেতা উত্তম দাস বলেন, “দিল্লির ঘটনার প্রতিবাদ করতে আমরা মিছিল করছি। পার্টি অফিসে হামলা করে আমরা প্রতিবাদ করি না।” হাবরা থানার কাছে সিটুর পার্টি অফিস ভাঙচুর হয়। গোপালনগর পাল্লা ন’হাটা সড়কে বেশ কয়েকশো তৃণমূল সমর্থক বিকেল ৫-৬টা পর্যন্ত অবরোধ করে। |
|
|
মশাটে তৃণমূলের মিছিল ও শ্রীরামপুরে সিপিএম কার্যালয়ের সামনে তৃণমূলের বিক্ষোভ। |
|
গোপালনগর চৌবেড়িয়া এলাকায় সিপিএমের পার্টি অফিসে তালা দিয়ে দেওয়া হয়। বনগাঁ শহরে সিপিএমের জোনাল অফিস, হাবরা জোনাল অফিসে হামলা হয়েছে। হাবরার দু’টি সিটু অফিসেও হামলার ঘটনা ঘটে। কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর চলে। হিঙ্গলগঞ্জের কালীবাড়ির সামনে তৃণমূল পথ অবরোধ করে। ভ্যাবলায় ট্রেন অবরোধ হয়। বসিরহাটে সিপিএম পার্টি অফিসেও ভাঙচুর চলে। বউবাজারে সিপিএমের পার্টি অফিসে হামলায় এক কর্মী আহত হন। ময়নায় সিপিএম সমর্থকদের বেশ কয়েকটি দোকান ও সিপিএমের স্থানীয় পার্টি অফিসে ভাঙচুর হয়।
হামলা চালান হয় সিপিএমের পুড়শুড়া জোনাল পার্টি অফিসে। সামতা গ্রামে সিপিএম পার্টি অফিসে আগুন দেওয়া হয়। আরামবাগের পুরা গ্রামে সিপিএম পার্টি অফিসে ভাঙচুর হয়েছে। কামারপুকুর কলেজ মোড়ে দুই সিপিএম কর্মীকে মারধর করা হয়। বালি গ্রামে এক সিপিএম কর্মীর বাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। বিকেলের দিকে কয়েকশো তৃণমূল সমর্থক শ্রীরামপুরে সিপিএমের জেলা কার্যালয় ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। ইট-পাটকেল ছোড়া হয়। সে সময়ে ওই কার্যালয়ের ভিতরে দলের বর্ষীয়ান নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরীর গাড়িতে ইট পড়ে। ধাক্কাধাক্কিতে পড়ে জখম হন এক পুলিশ কর্মী। |
|
|
হাবরায় সিপিএমের জোনাল অফিসে ভাঙুচুর ও হিঙ্গলগঞ্জে অবরোধ তৃণমূলের। |
|
হরিপালে সিপিএমের জোনাল অফিসে তৃণমূল সমর্থকরা চড়াও হয়ে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। জাঙ্গিপাড়া জোনাল অফিসেও তৃণমূল সমর্থকেরা হামলা চালায় বলে খবর। আগুন লাগানো হয়। পাণ্ডুয়ার সিটু কার্যালয়ে ও শিয়াখালায় একটি ক্লাবে ভাঙচুর হয়। জেলা সিপিএমের সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরী বলেন, “বেশ কিছু পার্টি অফিসে হামলা, নেতাদের বাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। জেলা অফিসে আমাদের দীর্ঘ ক্ষণ আটকে রাখা হয়।” পূর্ব রেলের হাওড়া-কাটোয়া শাখার গুপ্তিপাড়া স্টেশনে তৃণমূল রেল অবরোধ করে। হাওড়াতেও মিছিল করে তারা।
|
মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র। |