দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরে বিক্ষোভ ও অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে নিগ্রহের অভিযোগ নিয়ে তেতে উঠল উত্তরবঙ্গও। এসএফআইয়ের নেতৃত্বে হওয়া দিল্লির ওই ঘটনার প্রতিবাদে বিকেল থেকেই উত্তরের নানা এলাকায় পথে নামে তৃণমূল। বালুরঘাট, মালদহ, রায়গঞ্জ, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারের মিছিল করেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। কয়েকটি এলাকায় পথ অবরোধও হয়। বিক্ষোভ মিছিল চলার সময় কোচবিহার, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, ফালাকাটা, ইসলামপুর সহ কয়েকটি এলাকায় সিপিএম অফিসে হামলা, ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পক্ষান্তরে, তৃণমূলও তাদের মিছিলে সিপিএমের পক্ষ থেকে ঢিল, পাটকেল ছোড়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে। শিলিগুড়িতে তৃণমূলের এক মহিলা কর্মীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করা হয়েছে বলে এই দিন পুলিশের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে।
ওই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে সিপিএম। সিপিএমের পক্ষ থেকে দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের দাবি, “আমাদের অফিসে তৃণমূল হামলা করেছে। সুদীপ্ত গুপ্তের ফ্লেক্স ছিঁড়েছে। আমরা রুখে দাঁড়ানোয় সব পিছু হটেছে। আমরা পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছি। পাল্টা প্রতিবাদ মিছিল করেছি। সেই মিছিলে শিলিগুড়ির মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সামিল হয়েছেন।” বুধবার বিকেলে হিলকার্ট রোডে মহামিছিল ও প্রতিবাদ সভা হবে বলে অশোকবাবু জানান। |
তৃণমূল কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলা মহাসচিব কৃষ্ণ পালের অভিযোগ, সিপিএম বিনা প্ররোচনায় তাঁদের মিছিলের উপরে ঢিল ছোড়ে। তাঁর দাবি, “আমাদের প্রতিবাদ মিছিল সিপিএমের পার্টি অফিসের সামনে যেতেই হামলা হয়। ঢিল ছুড়ে মারধর শুরু হয়। আমাদের তিন জন কর্মী জখম হয়ে হাসপাতালে চিকিত্সা করাতে যান। এক জন মহিলা কর্মীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা হয়। পুলিশকে সব জানানো হয়েছে।” আজ, বিকেলে শিলিগুড়িতে ধিক্কার মিছিল করবে তৃণমূল। এ দিন বালুরঘাটে তৃণমূলের বিক্ষোভ মিছিল শহরের কাছারি রোডে এসএফআইয়ের জেলা কার্যালয়ের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। এসএফআইয়ের দাবি, বিক্ষোভকারীদের একাংশ তাদের দফতর লক্ষ করে ইট ছোড়ে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জ্যাকলিন দর্জির নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী যায়। নামানো হয় কমব্যাট ফোর্সও। তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক প্রবীর রায় বলেন, “বিক্ষোভ মিছিল শান্তিপূর্ণ থাকলেও নানা ভাবে উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে সিপিএম।” এসএফআইয়ের জেলা সহকারী সম্পাদক কৌশিক ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “মিছিল থেকেই তৃণমূল সমর্থকেরা হামলা চালায়।” রাতে দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক দূর্গাদাস গোস্বামী পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়ে নিজেই শহরে ঘোরেন।
জলপাইগুড়িতেও গোলমালের ঘটনা ঘটে। কামারপাড়ায় সিপিএমের জোনাল অফিসে ঢিল ছোড়ার নালিশ ওঠে। সিপিএমের পার্টি অফিস থেকে উস্কানিমুলক মন্তব্যের পাল্টা অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। ডিওয়াইএফের জেলা কমিটি সদস্য দীপশুভ্র সান্যাল জানান, তৃণমূলের মিছিল থেকে পরিকল্পিত ভাবে হামলা হয়েছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি চন্দন ভৌমিক বলেন, “জেলা জুড়ে বিক্ষোভ হয়েছে।. কালও ধিক্কার কর্মসূচি নেওয়া হবে।”
সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ফালাকাটা থানা এলাকার রাইচেঙ্গা গ্রামে তৃণমূলের মিছিল থেকে স্থানীয় সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। সিপিএম নেতা ভবেশ বালো অভিযোগ করেন, টিনের বেড়া দেওয়া তাদের কার্যালয়ে চেয়ার টেবিল-সহ টেলিভিশন ভাঙচুর করা হয়। মিছিল চলাকালীন সিপিএম পার্টি অফিস থেকে কটূক্তি করাকে নিয়ে গণ্ডগোলের সূত্রপাত বলে তৃণমূল নেতা দীপক সরকার পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন। |
ময়নাগুড়ির ময়নাগুড়ি জোনাল অফিস এবং জল্পেশ মোড় এলাকায় এলাকায় সিপিএম অফিসে হামলার অভিযোগ উঠেছে। মালবাজার টাউন তৃণমূল কংগ্রেস প্রায় আধ ঘন্টা জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রাখে।
রায়গঞ্জে ধিক্কার মিছিল করেন তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকেরা। ইসলামপুরে সিপিএম-এর লোকাল পার্টি অফিসে গিয়ে তৃণমূলের লোক হামলা চালায় বলে অভিযোগ। জানা গিয়েঠে, এ দিন ইসলামপুরের চৌরঙ্গি মোড় এলাকায় হামলা চালায় ১০-১২ জনের একটি দুষ্কৃতী দল। তারা এসে দরজা ভেঙে ফেলার চেষ্টা চালায়।
এ দিন সবচেয়ে বেশি গোলমালের অভিযোগ উঠেছে কোচবিহারে। সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক তারিণী রায় বলেন, “সন্ধে পর্যন্ত নানা এলাকায় আমাদের ১৫টি ভাঙচুরের খবর এসেছে। বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূল মিছিল করলেও পুলিশ নির্বিকার।” ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ বলেন, “দিল্লিতে যা হয়েছে তা অসভ্যতা। ওটা বামপন্থী আন্দোলনের নমুনা নয়। তাই বলে কোচবিহারে আমাদের যে ৬টি অফিস ভাঙচুরের ঘটনা হয়েছে তাও কাঙ্ক্ষিত নয়।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে যারা অশোভন আচরণ করেছেন তাদের কথার উত্তর দিতে রুচিতে বাঁধে।” জেলাশাসক মোহন গাঁধী ও কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়াল বলেন, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
|
মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র। |