অনিশ্চিত পঞ্চায়েত নির্বাচন
বরাদ্দ কমার আশঙ্কা অল্প, ভয় খরচ না-হওয়ার
ঞ্চায়েত নির্বাচন যদি অনির্দিষ্ট কালের জন্য পিছিয়ে যায়, কী হাল হবে রাজ্যের গ্রামগুলোর?
কেন্দ্রীয় সরকার কি উন্নয়নের টাকা বন্ধ করে দিতে পারে?
কেন্দ্র ও রাজ্যের ওয়াকিবহাল মহলে কথা বলে স্পষ্ট হল, নির্বাচিত পঞ্চায়েত না থাকলে কিছু বরাদ্দ টাকা রাজ্য হারাবে ঠিকই। কিন্তু তার অঙ্ক গ্রাম উন্নয়নের সামগ্রিক বরাদ্দের নিরিখে অল্পই হবে।
নির্বাচিত পঞ্চায়েত নেই বলে একশো দিনের কাজের প্রকল্পের টাকা কেন্দ্র আটকে দেবে, তার সম্ভাবনা খুব কম। সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ সফরে এসে কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত মন্ত্রী জয়রাম রমেশ বলে গিয়েছেন যে নির্বাচিত পঞ্চায়েতের মাধ্যমে এনআরইজিএ প্রকল্প করানোর কথাই আইনে বলা হয়েছে। তাই নির্বাচিত পঞ্চায়েত না থাকলে টাকা বরাদ্দ করা যাবে না। কিন্তু একে রাজনীতির যুক্তি বলেই মনে করছেন প্রাক্তন পঞ্চায়েত কমিশনার অমলেন্দু ঘোষ।
তাঁর বক্তব্য, “যে কাজ চাইবে, তাকেই কাজ দিতে হবে, এটাই বলছে আইন। নির্বাচন আটকে রয়েছে বলে গ্রামের মানুষকে বঞ্চনা করা হবে কেন?”
কাজের বেলায় তা করেও না কেন্দ্র। অন্ধ্র প্রদেশে পঞ্চায়েত নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল ২০১১ সালের মাঝামাঝি। কিন্তু আদালতে সংরক্ষণ সংক্রান্ত মামলার কারণে এখনও নির্বাচন আটকে রয়েছে। তার জন্য কিন্তু আটকে নেই এনআরইজিএ-র বরাদ্দ। বরং পশ্চিমবঙ্গের চাইতে প্রায় দশ কোটি বেশি কর্মদিবস তৈরি করেছে, তার জন্য খরচ হয়েছে কেন্দ্রীয় বরাদ্দের ১৪৭৭ কোটি টাকা।
তবে ত্রয়োদশ অর্থ কমিশন যে টাকা সরাসরি গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে দেয়, সে টাকা দেয়নি কেন্দ্র থেকে। তার ফলে অন্ধ্র প্রদেশ প্রায় ৩০০০ কোটি টাকা হারিয়েছে, জানালেন সেকেন্দ্রাবাদের একটি গ্রাম উন্নয়ন গবেষণা সংস্থার প্রধান সি ভি শ্যামলা।
কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের এক শীর্ষ সারির আমলা জানান, অন্ধ্রে নির্বাচন না-হওয়ার কারণে পানীয় জলের জন্য ৩৫০ কোটি টাকা কিছু দিন আটকে রেখেছিল কেন্দ্র। কিন্তু গত বছর পানীয় জল ও নিকাশি বাবদ ৫৬৩ কোটি টাকা পেয়েছে অন্ধ্র প্রদেশ। ঝাড়খণ্ডে ১০ বছর ধরে পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়নি। তাই এক বছর অনুন্নত এলাকার অনুদান (বিআরজিএফ) দেয়নি কেন্দ্র। কিন্তু অনির্দিষ্ট কালের জন্য বরাদ্দ বন্ধ করার নজির নেই। রাজনৈতিক ভাবে তা কেন্দ্রীয় সরকারেরই ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
তাই নির্বাচন না হলে কিছু টাকা আটকে থাকতে পারে এ রাজ্যেরও। কিছু টাকা হয়তো হারাবেও পশ্চিমবঙ্গও। এ রাজ্য অর্থ কমিশন থেকে বছরে প্রায় ছ’শো কোটি টাকা পায়। নির্বাচিত পঞ্চায়েতগুলিকে তাদের নিজেদের পরিকল্পনা অনুসারে ওই টাকা খরচ করার জন্য দেওয়া হয়। বিডিও-দের কাছে অন্যান্য কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা দেওয়া হলেও, অর্থ কমিশনের টাকা দেওয়া যাবে না।
একই কারণে ‘বিআরজিএফ’ বাবদ অন্তত ৩০০ কোটি টাকা হারাবে রাজ্য। এ ছাড়া রাজ্যের হাজারটি গ্রাম পঞ্চায়েতে চলছিল বিশ্ব ব্যাঙ্কের একটি প্রকল্প, যার জন্য পাঁচ বছরে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত চারশো কোটি টাকা খরচ হয়েছে। ওই টাকা পাওয়া না গেলে বছরে দু’শো কোটি টাকা মতো হারাবে রাজ্য।
সব মিলিয়ে রাজ্যের পঞ্চায়েতগুলি বছরে ৫০ লক্ষ থেকে ৮০ লক্ষ টাকা মতো হারাবে, মনে করছেন পঞ্চায়েত বিষয়ে গবেষকরা।
এক একটি পঞ্চায়েত যেখানে কেবল একশো দিনের প্রকল্পের জন্যই বছরে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে, সেখানে কয়েক লক্ষ টাকা হাতে না-পাওয়া খুব বড় ক্ষতি নয়।
কিন্তু টাকার অঙ্কের চাইতেও, উন্নয়নের প্রকল্প আমলাতান্ত্রিক হয়ে পড়া, এবং তার ফলে দুর্নীতি আরও বাড়ার সম্ভাবনা নিয়ে চিন্তিত বিশেষজ্ঞরা। কোন প্রকল্পে কত টাকা ব্লক স্তরে আসছে, তা জানার কোনও সম্ভাবনা গ্রামের মানুষের থাকে না। তাই টাকা খরচ না-হয়ে ফিরে যাওয়া, কিংবা স্রেফ চুরি হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায় আমলা-মুখী প্রশাসনে, মনে করছেন বেশ কিছু প্রাক্তন আমলাই।
যার অর্থ, প্রচারের মঞ্চ থেকে যে সব আশঙ্কার কথা বলেন কেন্দ্রের বা রাজ্যের নেতা-মন্ত্রীরা, তার অধিকাংশই লোক-দেখানো সংলাপ। প্রশাসনের সমস্যা অন্যত্র। নির্বাচন না হলে কত টাকা আসবে, সে প্রশ্নের চাইতেও বড় হয়ে উঠছে এই প্রশ্ন, এলাকার উন্নয়নের রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা না থাকলে কাকে দিয়ে, কোন পদ্ধতিতে প্রকল্প রূপায়ন করাতে পারবেন সরকারি কর্মীরা। টাকা আসবে কি না, তার চাইতেও বড় দুশ্চিন্তা, টাকা কী করে লাগানো যাবে গরিব মানুষের কাজে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.