হামলা, ভাঙচুরে অশান্তি জেলা জুড়ে
য়াদিল্লিতে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে নিগ্রহের ঘটনার পরে অশান্তি হল জেলা জুড়ে। জায়গায় জায়গায় সিপিএম এবং সিটুর অফিসে হামলার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। প্রহৃত হলেও বাম নেতারাও। এমনকী দুর্গাপুরে একটি আইএনটিইউসি অফিসেও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার নয়াদিল্লির ঘটনার পরে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতিবাদ, আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। কিন্তু দলের নিচুতলার কর্মীরা যে সেই নির্দেশ মানেননি, একের পর এক হামলা, ভাঙচুরের ঘটনাই তার প্রমাণ। সন্ধ্যা থেকেই দুর্গাপুর শহরে পরপর অশান্তির অভিযোগ ওঠে। বিভিন্ন এলাকার দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। শুরু হয় সগড়ভাঙা দিয়ে। সেখানে সিপিএমের তিনটি অফিসে ভাঙচুর চালানো হয়। তার পরে গোলমাল ছড়িয়ে পড়ে শহরের অন্যত্রও। এইচএফসিএলে সিটু অফিসে ভাঙচুর হয়।
বর্ধমান শহরের কার্জন গেটে পথ অবরোধ ও মিছিল তৃণমূলের।
কিছুক্ষণ পরে আক্রমণ হয় ইস্পাতপল্লির জোনাল অফিস আশিস জব্বর স্মৃতি ভবনে। অশান্ত হয়ে ওঠে নিউটন রোড, এডিসন রোড এলাকা। হর্ষবর্ধন রোডে সিপিএম অফিসে আগুন লাগানো হয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ ও দমকলের একটি ইঞ্জিন। দুর্গাপুর কেমিক্যালস লিমিটেড-এর সিটু অফিসে ভাঙচুর চালানো হয়। বিধাননগর সেক্টর অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ভাঙচুর ফুলঝোর, কালীগঞ্জ, ভারতী রোডে সিপিএম অফিসেও। ডিপিএলের সিটু অফিসেও হামলা হয় বলে অভিযোগ হয়।দুর্গাপুরের আইএনটিইউসি নেতা নীলমাধব গুপ্ত অভিযোগ করেন, রানা প্রতাপ রোডে সংগঠনের অফিসে এক দল তৃণমূল নেতা-কর্মী ঢুকে চেয়ার-টেবিল ভেঙে দেয়। তাঁকে মারধরও করা হয়। দুর্গাপুর ইস্পাত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। শহর জুড়ে একের পর এক এই ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকায় চৈত্র সেলের সময় সত্ত্বেও বিভিন্ন জায়গায় দোকানপাট দ্রুত বন্ধ হয়ে যায়। তবে বেনাচিতি বাজার রাত পর্যন্ত ছিল জমজমাট। মিনিবাস চলাচলও স্বাভাবিক ছিল।
সন্ধ্যায় গলসিতে সিপিএমের জোনাল কমিটির অফিসে ঢুকে তৃণমূলের লোকজন ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ। দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডলের অভিযোগ, “ওই জোনাল কমিটির সম্পাদক সৈয়দ হোসেনকে লক্ষ করে ইট ছোড়া হয়। তাঁর পায়ে চোট লেগেছে। অফিসের এক সর্বক্ষণের কর্মীকেও মারধর করা হয়েছে।” রাজ্জাক মণ্ডলের দাবি, জেলা জুড়েই এই হামলা হয়েছে। অধিকাংশ জায়গায় সিপিএমের নানা জোনাল, লোকাল ও গ্রাম কমিটির অফিস আক্রান্ত হয়েছে।
সিপিএমের দামোদর-অজয় জোনাল সম্পাদক তুফান মণ্ডল অভিযোগ করেন, সন্ধ্যায় তৃণমূলের একটি প্রতিবাদ মিছিল পাণ্ডবেশ্বর শহর পরিক্রমা করছিল। সিপিএম অফিসের সামনে দলের অঞ্চল সম্পাদক মানিক রুইদাস দাঁড়িয়ে ছিলেন। মানিকবাবুকে মিছিল থেকে গালিগালাজ করা হলে তিনি অফিস বন্ধ করে চলে যান। এর পরে তৃণমূলের লোকজন সেখানে যথেচ্ছ ভাঙচুর চালায়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। অন্ডালে একটি তৃণমূল অফিসেও হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে সিপিআইয়ের বিরুদ্ধে।
দুর্গাপুরের হর্ষবর্ধন রোডে
সিপিএমের পার্টি অফিসে ভাঙচুর।
হামলা ইস্পাতনগরীর রানা প্রতাপ
রোডের আইএনটিইউসি-র অফিসেও।
সন্ধ্যায় গলসিতে সিপিএমের জোনাল কমিটির অফিসে ঢুকে তৃণমূলের লোকজন ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ। দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডলের অভিযোগ, “ওই জোনাল কমিটির সম্পাদক সৈয়দ হোসেনকে লক্ষ করে ইট ছোড়া হয়। তাঁর পায়ে চোট লেগেছে। অফিসের এক সর্বক্ষণের কর্মীকেও মারধর করা হয়েছে।” রাজ্জাক মণ্ডলের দাবি, জেলা জুড়েই এই হামলা হয়েছে। অধিকাংশ জায়গায় সিপিএমের নানা জোনাল, লোকাল ও গ্রাম কমিটির অফিস আক্রান্ত হয়েছে।
সিপিএমের দামোদর-অজয় জোনাল সম্পাদক তুফান মণ্ডল অভিযোগ করেন, সন্ধ্যায় তৃণমূলের একটি প্রতিবাদ মিছিল পাণ্ডবেশ্বর শহর পরিক্রমা করছিল। সিপিএম অফিসের সামনে দলের অঞ্চল সম্পাদক মানিক রুইদাস দাঁড়িয়ে ছিলেন। মানিকবাবুকে মিছিল থেকে গালিগালাজ করা হলে তিনি অফিস বন্ধ করে চলে যান। এর পরে তৃণমূলের লোকজন সেখানে যথেচ্ছ ভাঙচুর চালায়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। অন্ডালে একটি তৃণমূল অফিসেও হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে সিপিআইয়ের বিরুদ্ধে।
রানিগঞ্জের পুরপ্রধান অনুপ মিত্রের অভিযোগ, এ দিন তৃণমূলের কিছু লোকজন তাঁকে মারধর করে। জেকে নগর কোলিয়ারির সিটু অফিসে তৃণমূলের মিছিল থেকে ঢিল-পাটকেল ছোড়ার অভিযোগও উঠেছে। জেমারি পঞ্চায়েতের প্রধান সিপিএমের নিমাই ঘোষ বলেন, “দিল্লিতে একটি অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটেছে। সে জন্য কিছু তৃণমূল কর্মী আমাদের শ্রমিক সংগঠনের অফিসের জানালা ভেঙেছে। আমরা দু’টি ঘটনারই নিন্দা করছি।” বারাবনির অলিগঞ্জে সিপিএমের ১ নম্বর লোকাল কমিটি অফিসে ঢিল-পাটকেল ছোড়া হয়। ওই কমিটির সম্পাদক শ্রীধর রাউত, পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি জয়তারা বাউরি-সহ তিন জনকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। গৌরান্ডি লাগোয়া কাটাপাহাড়ি এলাকায় সিটু অফিসে পতাকা ছিঁড়ে দেওয়া এক নেতাকে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে। পাণ্ডবেশ্বরের হরিপুর ও গাইঘাটায় ডিওয়াইএফ অফিসেও হামলা হয় বলে অভিযোগ। নয়াদিল্লির ঘটনার প্রতিবাদে আসানসোলে সিটি বাসস্ট্যান্ড থেকে মহকুমা মোটর ট্রান্সপোর্ট ইউনিয়ন একটি ধিক্কার মিছিল করে। বিকেলে দুর্গাপুর আদালতের আইনজীবীদের তৃণমূল সংগঠন প্রতিবাদে মিছিল করে। কাঁকসায় প্রদেশ তৃণমূল সদস্য দেবদাস বক্সী এবং যুব সভাপতি পল্লব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মিছিল হয়।
আহত আইটিইউসি
নেতা নীলমাধব গুপ্ত
আগুনে পুড়ছে সিপিএমের
একটি পার্টি অফিসের জিনিসপত্র।
কংগ্রেস, সিপিএম এবং বিজেপি চক্রান্ত করে পঞ্চায়েত ভোট পিছিয়ে দিচ্ছে, এই অভিযোগে এ দিন বিকেলে বর্ধমান শহরে তৃণমূলের মিছিল করার কথা ছিল। নয়াদিল্লির ঘটনার পরে জেলার নানা প্রান্ত থেকে এসে সেই মিছিলে যোগ দেন বহু তৃণমূল কর্মী-সমর্থক। ঘণ্টাখানেক ধরে বিশাল এই মিছিল শহর পরিক্রমার পরে বিজয়তোরণ চত্বরে বিক্ষোভও দেখায়। এ দিন শহরের তৃণমূল নেতা সুজিত ঘোষ, আব্দুল রব, শঙ্করী দে-র নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল হয়। আব্দুল রবের বক্তব্য, “আমরা এ দিন এক সঙ্গে বেশ কয়েকটি বিষয়ের প্রতিবাদ জানাতে পেরেছি। পঞ্চায়েত ভোট পিছিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত ছাড়াও দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে হেনস্থার নিন্দা করা হয়েছে। শহর ও লাগোয়া নানা গ্রাম থেকে তৃণমূলের কর্মীরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ছুটে এসেছেন।”
মিছিলকে কেন্দ্র করে শহরে প্রায় দেড় ঘণ্টা তীব্র যানজট হয়। তৃণমূল নেতা সুজিতবাবু বলেন, “শহরে এত বড় মিছিল করলে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে ভেবে রাজ্যের এক মন্ত্রী বারণ করেছিলেন। তাই আমরা বড় মিছিল করার কথা ভাবিনি। কিন্তু নয়াদিল্লির ঘটনার খবর পেয়ে দলের কর্মী ও সাধারণ মানুষেরা ছুটে আসায় মিছিল জনসমুদ্রে পরিণত হয়।” বর্ধমানের তৃণমূলপন্থী আইনজীবীরাও কাউন্সিলর রত্না রায়ের নেতৃত্বে খোসবাগান এলাকায় এ দিন মিছিল করেন।
দুর্গাপুরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক তথা সিটু নেতা বিপ্রেন্দু চক্রবর্তীর বক্তব্য, “রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর উপরে হামলার নিন্দা করছি। কিন্তু যে ভাবে আমাদের একের পর এক অফিসে ভাঙচুর, আগুন লাগানোর খবর পাচ্ছি, তা খুবই উদ্বেগের। এ সব বন্ধ করতে তৃণমূল নেতৃত্বের উদ্যোগী হওয়া উচিত ছিল।” তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায় বলেন, “যা হয়েছে তা অনভিপ্রেত। মোটেও সমর্থনযোগ্য নয়। দলের উচ্চ নেতৃত্ব বারবার শান্তি বজায় রাখতে বলছেন। এর পরেও যারা এই ধরনের কাজ করছে তারা দলের প্রকৃত কর্মী নয়। প্রশাসন উপযুক্ত ব্যবস্থা নিক।”

মঙ্গলবার ছবিগুলি তুলেছেন উদিত সিংহ, বিকাশ মশান ও বিশ্বনাথ মশান।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.