সুপারিশের চিঠি হাতে, তবু চাকরি মেলেনি তিন দশকেও
হাতে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের চিঠি, শংসাপত্র। অনুরোধ এসেছে রাষ্ট্রপতির সচিবালয় থেকে। দেশে জরুরি অবস্থা ও তার পরবর্তী সময়ে ‘বিশ দফা প্রকল্প’ সফল ভাবে রূপায়ণের পরে তাদের কর্মীদের সরকারি নিয়োগের আশ্বাস মিলেছিল। কিন্তু প্রায় তিন দশক পেরোলেও নিয়োগপত্র মেলেনি, এমনই অভিযোগ ‘কৃষিবিকাশ শিল্পকেন্দ্র’ নামে এক সংস্থার। সত্তরের দশকের শেষ দিকে দেশে জরুরি অবস্থা চলাকালীন ও তার পরপর গ্রামীণ এলাকার যুবকদের নিয়ে গড়ে ওঠে নানা সংস্থা। বেসরকারি এই সব সংস্থাগুলিকে কেন্দ্রীয় সরকার এলাকার চাষিদের চাষাবাদে সাহায্য করার কাজ দেয়। সরকারের পাঠানো সার, বীজ ইত্যাদি এই সব সংস্থাগুলি দিত চাষিদের। তা দিয়ে ধান, গম, আলু, পাট, সর্ষে ইত্যাদি চাষ হতো। এ ছাড়া উদ্যান পালন, তাঁত বোনায় এলাকাবাসীকে সাহায্য, কৃষিমেলা, আলোচনাচক্র, কর্মশালা ইত্যাদি আয়োজনের দায়িত্বও ছিল। বীরভূম, বর্ধমান, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ ও মালদহে এই কাজ করেছিল স্থানীয় যুবকদের নিয়ে গড়া ‘কৃষিবিকাশ শিল্পকেন্দ্র’। পরে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের তরফে তার কর্মীদের সরকারি নিয়োগের আশ্বাসও দেওয়া হয়। তবে ১৯৮২ সালে সংবিধান পরিবর্তনের পরে এই নিয়োগের দায়িত্ব বর্তায় রাজ্য সরকারের উপরে।
এই সংস্থার কর্মীরা কেমন কাজ করেছেন, কেন্দ্র তা জানতে চাওয়ায় ১৯৮৫ সালের ২৩ মে রাজ্য কৃষি দফতরের সচিব পি ভি শেনয় একটি রিপোর্ট পাঠান। তাতে তিনি জানান, যেখানে সংস্থাটি কাজ করেছে সেখানকার জেলাশাসকদের কাছে সংস্থাটির কাজকর্ম সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তাঁরা জানিয়েছেন, সংস্থাটি স্থানীয় চাষিদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে চাষাবাদ করছে। উৎপাদিত ফসলের ভাগ জমির মালিক ও সংস্থার মধ্যে আধাআধি ভাগ হচ্ছে। সভা-আলোচনার আয়োজনও হয়েছে ঠিক মতো। উচ্চ ফলনশীল বীজের ব্যবহার নিয়ে চাষিদের উৎসাহ দিয়েছেন কর্মীরা। জেলাশাসকেরা আরও জানান, সংস্থার কর্মীরা কোথাও স্কুল তৈরি করছেন, গরিব পড়ুয়াদের শিক্ষা সরঞ্জাম দিয়েছেন, নলকূপও বসিয়েছেন। এ ছাড়া ফাঁকা জমি, নদী ও খালের পাশে বৃক্ষরোপণও করেছেন। উৎপাদিত দ্রব্যের লভ্যাংশ ও স্থানীয় মানুষের চাঁদায় ওই কর্মীদের সামান্য ভাতাও দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।
শেনয় তাঁর রিপোর্টে জানান, পাঁচ জেলায় সংস্থাটির ৭০টি শাখা রয়েছে। প্রধান শাখা বীরভূমের সাঁইথিয়ায়। সব মিলিয়ে মোট ২৪৫০ জন কর্মী এই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর সুপারিশ ছিল, রাজ্য সরকারের পক্ষে এই কেন্দ্রগুলি অধিগ্রহণ করা সম্ভব নয়। তবে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নির্দেশে এই কর্মীরা নানা কৃষি ও গ্রামীণ ক্ষেত্রে কাজ করেছিলেন। ওই দফতরের তরফে তাঁদের নিয়োগ করার কথাও বলা হয়েছিল। তাই এই কর্মীদের সরকারি চাকরি দেওয়ার বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করা প্রয়োজন। তার পরে সাতাশ বছর পেরিয়েছে। সেই যুবকেরা এখন বার্ধক্যের দোরগোড়ায়। কিন্তু সুপারিশ এখনও কার্যকর হয়নি। সংস্থার সম্পাদক অমর দাম, সদস্য শেখ ইমদাদুল হক লাল্টুদের দাবি, “আমাদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে নানা সময় পাঠানো নথিপত্র রয়েছে। সেগুলি আমরা বারবার জামা দিয়েছি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে। আমাদের কাজ নিয়ে নানা সময়ে বিভিন্ন জেলা প্রশাসন তদন্ত করেছে। সমস্ত রিপোর্টই আমাদের অনুকূলে রয়েছে। তবু আমাদের কর্মীদের নিয়োগ করা হয়নি।” তাঁরা জানান, গত বছর ৫ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে তাঁদের সরকারি নিয়োগের দাবি জানিয়ে চিঠি পাঠান। এর পরে গত ১৭ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির সচিবালয় থেকে এ রাজ্যের মুখ্য সচিবকে পাঠানো চিঠিতে বিষয়টি বিবেচনা করার অনুরোধ জানানো হয়। তার পরে প্রায় সাড়ে তিন মাস পেরোলেও রাজ্য সরকারের তরফে কোনও সাড়াশব্দ নেই, অভিযোগ অমরবাবুদের।
বামফ্রন্টের আমলের কৃষিমন্ত্রী নরেন দে অবশ্য এই কর্মীদের কথা মনেই করতে পারলেন না। তাঁর বক্তব্য, “আমার পক্ষে মনে করা সম্ভব হচ্ছে না। নিশ্চয়ই তাঁদের দাবির সারবত্তা ছিল না।” এই কর্মীদের নিয়োগের ব্যাপারে কিছুটা অনীহা রয়েছে, তা অবশ্য ধরা পড়ে বর্তমান কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটকের কথায়। তিনি বলেন, “সুপারিশ বা অনুরোধ তো আমরা পেয়েই থাকি। কিন্তু এই ২৪৫০ জনকে সরকারি দফতরে নেওয়ার ক্ষেত্রে তো আমাদের আইনকানুন মেনে চলতে হবে। দফতরে আগে থেকেই অনেক কর্মী রয়েছেন, যাঁরা এখনও অস্থায়ী ও সামান্য বেতনে তাঁরা কাজ করছেন। আগে তো তাঁদের কথা ভাবতে হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.