মাদক খাইয়ে লুঠে সচেতন করতে নাটক আরপিএফের
রনে গেরুয়া পোশাক। হাতে-গলায় গোছা গোছা তাবিজ, মাদুলি। দুই শিষ্যকে সঙ্গে নিয়ে ট্রেনের কামরায় চেপে বসলেন এক সাধু। তল্পিতল্পা গুছিয়ে জমিয়ে বসার ফাঁকেই সহযাত্রীদের সঙ্গে ভাব জমালেন শিষ্যেরা। ট্রেন চলতেই শুরু হল সাধুর মাহাত্ম্য প্রচার। তার পরে বিলি হল মন্ত্রপুত জল, প্যাঁড়া, ফল ইত্যাদি। ভক্তিভরে সে সব প্রসাদ খাওয়ার পরেই যাত্রীদের চোখের পাতা ভারি। আস্তে আস্তে সবাই ঘুমের দেশে যেতেই আসল রূপ ধরলেন সাধু ও তাঁর শিষ্যেরা। যাত্রীদের জিনিসপত্র নিয়ে নেমে গেলেন পরের স্টেশনে।
দৃশ্য ২: অসংরক্ষিত কামরায় উঠলেন হাসিখুশি তিন যুবক। পরিচয়, গন্তব্য জানার ফাঁকে আলাপ জমালেন আশপাশের যাত্রীদের সঙ্গে। জমে উঠল আড্ডা। ঠিক মতো সাজিয়ে রাখার অছিলায় ব্যাগপত্র সব ওলটপালট করে রাখলেন। খানিক পরে হকার ডেকে চা খেলেন ও সহযাত্রীদের খাওয়ালেন। কয়েক মুহূর্ত যেতে না যেতেই ঘুমে জুড়ে এল যাত্রীদের চোখ। জিনিসপত্র হাতিয়ে চম্পট দিতে আর দেরি করল না তিন যুবক।
নাটক চলছে আসানসোল স্টেশনে। —নিজস্ব চিত্র।
মাদক মেশানো খাবার খেয়ে আচ্ছন যাত্রীদের প্রায়শয়ই ট্রেন থেকে উদ্ধার করে রেল পুলিশ। হুঁশ ফেরার পরে তাঁর বুঝতে পারেন, খোয়া গিয়েছে সব জিনিস। তাঁদের কাছে শোনা ঘটনার বিবরণ অবলম্বনে এ বার নাটক তৈরি করেছে পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের আরপিএফ। উপরের দু’টি দৃশ্য সেই নাটকেরই। যাত্রীদের সচেতন করতে এই নাটক অভিনীত হচ্ছে ওই ডিভিশনের নানা স্টেশনে। অভিনয় করছেন আরপিএফ কর্মীরাই। যাত্রীদের উদ্দেশ্যে তাঁদের বার্তা, ট্রেনে ভ্রমণের সময়ে অপরিচিত কারও দেওয়া খাবার বা পানীয় খাবেন না।
আরপিএফের আসানসোল ডিভিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ড্যান্ট এস পি নিরালা জানান, রেলযাত্রার সময়ে এ রকম ঘটনা যাত্রীদের সঙ্গে প্রায়ই ঘটছে। মাইকে প্রচার, দেওয়াল লিখন, লিফলেট ছড়িয়েও যাত্রীদের সচেতন করা যাচ্ছে না। তাই নাটকের মাধ্যমে চাক্ষুস দেখিয়ে যাত্রীদের সহজে বিষয়টি বোঝানো হচ্ছে। তিনি বলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করে আমাদের কাছে নাটকের মাধ্যমে অপরাধের বিষয়ে তুলে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা তা শুরু করেছি।”
আরপিএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝাড়খণ্ডের মিহিজাম, জামতাড়া এলাকার এক দল দুষ্কৃতী নিয়মিত চলন্ত ট্রেনের অসংরক্ষিত কামরায় চেপে যাত্রীদের মাদক মেশানো পানীয় ও খাবার খাইয়ে অচেতন করে সর্বস্ব লুঠ করছে। মাদকের পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে অনেক সময়ে যাত্রীর মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। এই ঘটনায় কিছু অভিযুক্তকে পাকড়াও করেছে আরপিএফ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ও জ্ঞান ফেরার পরে যাত্রীদের কথা শুনে অপরাধের ধরন জেনে নিয়ে ছোট ছোট নাটিকা তৈরি করেছিলেন আরপিএফের মুঘলসরাই ডিভিশনের কর্মীরা। তাতে অনুপ্রাণিত হয়ে আসানসোল ডিভিশনের বিভিন্ন স্টেশনেও নাটকের মাধ্যমে যাত্রীদের সচেতন করার চেষ্টা করছে আরপিএফ। তারা বোঝাচ্ছেন, একমাত্র রেলের ব্যাচ পরা হকারদের কাছ থেকেই যেন খাবার কিনে খান যাত্রীরা। কারণ, তদন্তে নেমে আরপিএফ জেনেছে এই সমস্ত দুষ্কৃতীদের সঙ্গে বিভিন্ন স্টেশনের একাধিক হকারের যোগসাজশ রয়েছে।
আরপিএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই দুষ্কৃতীরা কখনও টিকিট কাউন্টার থেকে যাত্রীদের নিশানা করে নেয়। কখনও আবার কামরায় চেপে যাত্রীকে লক্ষ্য হিসেবে বেছে নেয়। সচেতনতামূলক এই নাটকের অন্যতম চরিত্রাভিনেতা অসীম মণ্ডল জানালেন, নাটকের মাধ্যমে যাত্রীদের কাছে এই বার্তা পৌঁছতে পেরে তাঁরা আনন্দিত।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.