|
|
|
|
জল ছাড়া নিয়ে কাজিয়া চলছেই রাজ্য-ডিভিসির
নিজস্ব প্রতিবেদন |
প্লাবিত এলাকাগুলি থেকে জল নামছে বলে শুক্রবার দাবি করল রাজ্য সরকার। এ দিন পাঞ্চেত এবং মাইথন জলাধার থেকে মোট ৩৭ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিভিসি। বৃহস্পতিবারের তুলনায় যা পাঁচ হাজার কিউসেক বেশি। তবে ডিভিসি-র দাবি, জলাধারগুলিতে জলের চাপ না বাড়লে আজ, শনিবার থেকে জল ছাড়া বন্ধ করা হবে।
আজ, শনিবারই বেলা ১১টায় দিল্লিতে শ্রমশক্তি ভবনে জল ছাড়ার জন্য ডিভিসি-রাজ্য গোলমাল নিয়ে বৈঠক ডেকেছে কেন্দ্র। কারণ, কেন্দ্র বিষয়টা মিটিয়ে নিতে চায়।
রাজ্যের চার জেলা হাওড়া, হুগলি এবং দুই মেদিনীপুরের বেশ কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় গত কয়েক দিন ধরে ডিভিসি-কে দুষছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডিভিসি কর্তৃপক্ষও বারবার দাবি করে এসেছেন, জলাধারগুলিতে জল বিপদসীমার ছাড়ানোতেই বাধ্য হয়ে তাঁরা জল ছেড়েছেন। দু’পক্ষের এই কাজিয়া এখনও চলছে। আগামী সোমবার ডিভিসি কর্তৃপক্ষ নবান্নতে গিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বসে যাবতীয় তথ্য পেশ করবেন বলে জানিয়েছেন। সংস্থার এক কর্তার বক্তব্য, জল ছাড়ার আগে সরকারি আধিকারিকদের কাকে, কখন ফ্যাক্স করে বিশদে জানানো হয়েছিল সে সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্যই রাজ্যের কাছে পেশ করা হবে। ওই কর্তা বলেন, “নিয়মমতো আমরা জেলাশাসকদের জানিয়েই দায়িত্ব শেষ করে ফেলতে পারতাম। কিন্তু তা করা হয়নি। সরকারের অন্য পদস্থ কর্তাদেরও প্রথম দিন থেকে জল ছাড়ার বিষয়ে জানানো হয়েছে।” পক্ষান্তরে নবান্ন সূত্রের খবর, পাল্টা নথি নিয়ে তৈরি হচ্ছে রাজ্য সরকারও।
শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন যান খানাকুলের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে। খানাকুল ১ ব্লক অফিসে হুগলি জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন। পরে নৌকোয় খানাকুল ২ ব্লকের কিছু এলাকা ঘুরে দেখেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথার রেশ টেনে পার্থবাবু এ দিন ফের বলেন, “ডিভিসি-র ছাড়া জলেই এই অবস্থা। মুখ্যমন্ত্রী নিজে সমস্ত বিষয়টি তদারক করছেন।”
রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, বন্যা কবলিত এলাকার অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। ত্রাণ শিবিরে যাঁরা আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই বাড়ি ফিরেছেন। বুধবার পর্যন্ত শিবিরগুলিতে ৮২ হাজারেরও বেশি মানুষ ছিলেন। শুক্রবার তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৮ হাজারের কিছু বেশি। এই পরিস্থিতিতে ত্রাণ শিবিরের সংখ্যাও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে রাজ্যের তরফে জানানো হয়েছে।
সরকারের আরও দাবি, পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রায় সব জায়গাতেই জল নেমে গিয়েছে। যদিও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ঘাটাল মহকুমায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত। দাসপুরে জল কমলেও তা উল্লেখযোগ্য নয়। তবে নতুন করে কোনও এলাকা জলমগ্ন হয়নি। গত কাল ঘাটালে গিয়েছিলেন পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। এ দিন যান রাজ্যের জলসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। ঘাটাল ও দাসপুরের জলমগ্ন এলাকা ঘুরে দেখার পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতির হিসাব জানতে তিনি। প্রশাসনিক অধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
হুগলির খানাকুল ১ ব্লকের বেশির ভাগ এলাকা থেকেই জল নেমে গিয়েছে। খানাকুল ২ ব্লকের মাড়োখানা-সহ কিছু এলাকায় এখনও জল দাঁড়িয়ে। হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরেও দ্রুত জল নামছে বলে দাবি করেছে রাজ্য। এ দিন সেখানে যান কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায়। তবে পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া-সহ আশপাশের অঞ্চলগুলি থেকে জল নামলেও, তা ঢুকে যাচ্ছে তমলুক এবং নন্দকুমারে। ফলে, ওই সব অঞ্চলে পরিস্থিতি এখনও কিছুটা খারাপ বলে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের এক আধিকারিক জানান।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জল নামলেও নানা কারণে মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। এ দিন পর্যন্ত প্লাবিত এলাকাগুলিতে মোট ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। মূলত জলে ডুবে, বিষধর সাপের ছোবলে, গাছ পড়ে, দেওয়াল ধসে মৃত্যু ঘটেছে বলে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সূত্রের খবর। রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটক জানান, বন্যার কারণে হুগলি, হাওড়া ও দুই মেদিনীপুরে ৮৪ হাজার টনের মতো ফসল নষ্ট হয়েছে। এর বেশিটাই ধান ও সব্জি।
|
পুরনো খবর: ‘ম্যান মেড’ নয়, মমতাকে বোঝাতে আসছে ডিভিসি |
|
|
|
|
|