দু’মাসের ব্যবধানে দু’বার বাঁধ ভেঙেছে কংসাবতীর। সেই বাঁধ সারাতেই এ বার তৎপর
ভারতীয় সেনাবাহিনী। বুধবার দুপুর থেকে সেচ দফতরের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ শুরু করেন
সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ও জওয়ানরা। বৃহস্পতিবারও কাজ চলে দিনভর। সেচ দফতরের আশা,
শুক্রবারের মধ্যে বাঁধ মেরামতির কাজ শেষ হয়ে যাবে। ছবি সেনাবাহিনীর সৌজন্যে। |
এমন চাপানউতোরের পরিবেশে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি অবশ্য ডিভিসি-রই পাশে দাঁড়িয়েছে। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র জানিয়েছেন, জল ছাড়ার কমিটিতে রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি থাকেন। জল ছাড়া হবে, এই তথ্য না-জানার কোনও কারণ নেই। বরং, জেনেও রাজ্য সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথেষ্ট সতর্ক হয়নি বলে তাঁর অভিযোগ। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য এবং প্রাক্তন সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়াও অভিযোগ করেছেন, ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে রাজ্য সরকার। আড়াল করতে চাইছে নিজেদের গাফিলতিও।
এ দিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় তেমন ভাবে বৃষ্টি না-হলেও অবশ্য এ দিন মাইথন ও পাঞ্চেত থেকে ৩২ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছে ডিভিসি। এর মধ্যে মাইথন থেকে ১২ হাজার ও পাঞ্চেত থেকে ২০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। বৃষ্টি বন্ধ হলেও কেন জল ছাড়তে হচ্ছে ডিভিসি-কে? ওই সংস্থার এক কর্তার ব্যাখ্যা, “জলাধারগুলিতে ধারণক্ষমতার বেশি জল ধরে রাখা হয়েছে। মাইথন ও পাঞ্চেতের বিপদসীমা যেখানে ৪৫৩ এবং ৪২৫ ফুট, সেখানে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত জলতল ছিল যথাক্রমে ৪৯৪ এবং ৪২৬ ফুট।” সেই অধিক জলচাপ কমাতেই এ দিনও কিছুটা জল ছাড়তে হয়েছে। মাইথনের ম্যানেজার (অপারেশন্স) সমীর মাজি এ দিন বলেন, “মানুষের কথা ভেবে, একই সঙ্গে জলাধারের ক্ষমতার কথা মাথায় রেখে জল ছাড়া হচ্ছে। তার পরেও ধারণ ক্ষমতার বেশি জল জলাধারগুলিতে রয়ে গিয়েছে।”
ডিভিসি-র এই যুক্তির কথাই শোনা গিয়েছে বিরোধী দলনেতার মুখে। সূর্যবাবুর বক্তব্য, “ম্যান মেড, উওম্যান মেড— এ সবে বিশ্বাস করি না! নিম্নচাপের ফলে উপর থেকে জল নামলে নীচের দিকে গড়াবে। বন্যা হবে। এ ক্ষেত্রেও হয়েছে। বাঁধ তো রক্ষা করতে হবে! জল না ছাড়লে বাঁধ ভেঙে গেলে কী হবে!” বিরোধী দলনেতার আরও মন্তব্য, “বাঁধ রক্ষার জন্য জল ছাড়তে হবে, আড়াই বছর ধরে সরকারে থেকে এটা না-জানার কোনও কারণ নেই!”
‘ম্যান মেড’ বন্যার তত্ত্ব খারিজ করেছেন কংগ্রেস নেতারাও। প্রদীপ ভট্টাচার্যের দাবি, “আমি ডিভিসি-র চেয়ারম্যান এবং সেচ আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, জল ছাড়ার আগে রাজ্য সরকারের সেচসচিবকে জানানো হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী ভুল তথ্য দিয়ে রাজ্যবাসীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন!” ডিভিসি জানানো সত্ত্বেও কোনও এলাকার মানুষ সতর্কতা না-পেয়ে থাকলে তা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনেরই গাফিলতি বলে অভিযোগ করেছেন প্রদীপবাবু। একই অভিযোগ করেছেন সূর্যবাবুও। তাঁর কথায়, “পুজোর মধ্যেই মুখ্যসচিব এবং পরিষদীয় মন্ত্রীকে বন্যার আশঙ্কা সম্পর্কে সতর্ক করেছিলাম। বলেছিলাম, যে ভাবে নিম্নচাপের সৃষ্টি হচ্ছে, তাতে দামোদর অববাহিকায়, ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি হলে এখানে বন্যা হবে। তবু আগে থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যাঁরা সরকারে আছেন, তাঁরা পুজোর কাজে ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু পুজোর মধ্যেই বন্যার ব্যাপারে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত ছিল।”
মানসবাবুও জানান, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা এবং বিহারের সেচ সচিবেরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রেখেই কাজ করেন। সুতরাং, এ রাজ্যকে না-জানিয়ে ঝাড়খণ্ডের জল ছাড়ার প্রশ্নই ওঠে না। মানসবাবুর বক্তব্য, “মানুষকে আশ্বস্ত করার বদলে ভুল তথ্য দিয়ে কেন্দ্র-বিরোধী জিগির তুলে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে! বলা হচ্ছে, ম্যান মেড বন্যা। কিন্তু গত ১৩ থেকে ১৫ অক্টোবর যে বিপুল পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে, গত ৩৫ বছরে তা হয়েছে কি?”
ডিভিসি এবং বিরোধীদের যুক্তির পাল্টা হিসাবে তৃণমূলের সংসদীয় দলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য এ দিনও ‘ম্যান মেড’ তত্ত্বের পক্ষেই সওয়াল করেছেন। শিয়ালদহে দলীয় এক সভায় তাঁর মন্তব্য, “আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১০ বছর আগে যখন ম্যান মেড বন্যা বলেছিলেন, তখন তাঁকে কটাক্ষ করা হয়েছে। হাসাহাসি করা হয়েছে! কিন্তু আজ সত্যি প্রমাণিত হচ্ছে যে, রাজ্যে ম্যান মেড বন্যাই হচ্ছে! অন্য রাজ্য থেকে অকারণে জল ছাড়া হচ্ছে!”
দুর্গত এলাকায় ত্রাণের অপ্রতুলতার অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস, সিপিএম। ত্রাণ নিয়ে দলবাজি রুখতে জেলা বা ব্লক স্তরে সর্বদল কমিটি গড়ে বৈঠক করার দাবি তুলেছেন প্রদীপবাবুরা। আর সূর্যবাবুর দাবি, কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম খুলে প্রতিদিন জেলাওয়াড়ি পরিস্থিতি জানাক সরকার। |