‘ম্যান মেড’ নয়, মমতাকে বোঝাতে আসছে ডিভিসি
দ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে নয়, রাজ্যকে অন্ধকারে রেখেও নয়— প্রাকৃতিক কারণ এবং জলাধারের ধারণক্ষমতা ছাপিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হওয়ার ফলেই জল ছাড়তে হয়েছে বলে এ বার রাজ্য সরকারের কাছে নথিপত্র দিয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল ডিভিসি।
জলাধারের ছাড়া জলে রাজ্যের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হওয়ার ঘটনা যে মানুষের তৈরি (ম্যান-মেড) নয়, অতিবৃষ্টির জন্যই বাড়তি জল ছাড়তে হয়েছে— তা বোঝাতে ডিভিসি-র কর্তারা যাবতীয় তথ্য নিয়ে হাজির হবেন রাজ্য প্রশাসনের সদর দফতর নবান্ন-য়। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী সোমবার ওই বৈঠক হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ডিভিসি-র চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ সেন।
রাজ্যের চার জেলা— হাওড়া, হুগলি এবং দুই মেদিনীপুরের বেশ কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় গত দু’দিন ধরে ডিভিসি-কে দুষছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ ঝাড়খণ্ডের বিরুদ্ধেও। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, রাজ্যকে আগাম না-জানিয়ে নিজেদের খেয়ালখুশিমতো জল ছেড়েছে ডিভিসি ও ঝাড়খণ্ড। তার জেরেই বহু মানুষকে দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হয়েছে। প্রতিবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে চিঠি লেখার পাশাপাশি গোটা ঘটনাকে মানুষের তৈরি (ম্যান-মেড) বলেও অভিহিত করেছেন তিনি।
বস্তুত, বিরোধী নেত্রী হিসেবে এক দশক আগে ‘ম্যান মেড’ বন্যার অভিযোগই তুলেছিলেন মমতা। তবে তখন তাঁর নিশানায় ছিল রাজ্যের তৎকালীন বাম সরকার। এখন তাঁর তোপ ডিভিসি এবং অন্য রাজ্যের দিকে। ডিভিসি জল ছাড়ার ব্যাখ্যা দিলেও মুখ্যমন্ত্রী তাঁর অভিযোগে অনড়। ডিভিসি এবং ঝাড়খণ্ডের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ বৃহস্পতিবারও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। শিন্দের সঙ্গে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর এই বিষয়ে ফোনে কথা হয়েছে।

দু’মাসের ব্যবধানে দু’বার বাঁধ ভেঙেছে কংসাবতীর। সেই বাঁধ সারাতেই এ বার তৎপর
ভারতীয় সেনাবাহিনী। বুধবার দুপুর থেকে সেচ দফতরের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ শুরু করেন
সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ও জওয়ানরা। বৃহস্পতিবারও কাজ চলে দিনভর। সেচ দফতরের আশা,
শুক্রবারের মধ্যে বাঁধ মেরামতির কাজ শেষ হয়ে যাবে। ছবি সেনাবাহিনীর সৌজন্যে।
এমন চাপানউতোরের পরিবেশে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি অবশ্য ডিভিসি-রই পাশে দাঁড়িয়েছে। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র জানিয়েছেন, জল ছাড়ার কমিটিতে রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি থাকেন। জল ছাড়া হবে, এই তথ্য না-জানার কোনও কারণ নেই। বরং, জেনেও রাজ্য সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথেষ্ট সতর্ক হয়নি বলে তাঁর অভিযোগ। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য এবং প্রাক্তন সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়াও অভিযোগ করেছেন, ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে রাজ্য সরকার। আড়াল করতে চাইছে নিজেদের গাফিলতিও।
এ দিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় তেমন ভাবে বৃষ্টি না-হলেও অবশ্য এ দিন মাইথন ও পাঞ্চেত থেকে ৩২ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছে ডিভিসি। এর মধ্যে মাইথন থেকে ১২ হাজার ও পাঞ্চেত থেকে ২০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। বৃষ্টি বন্ধ হলেও কেন জল ছাড়তে হচ্ছে ডিভিসি-কে? ওই সংস্থার এক কর্তার ব্যাখ্যা, “জলাধারগুলিতে ধারণক্ষমতার বেশি জল ধরে রাখা হয়েছে। মাইথন ও পাঞ্চেতের বিপদসীমা যেখানে ৪৫৩ এবং ৪২৫ ফুট, সেখানে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত জলতল ছিল যথাক্রমে ৪৯৪ এবং ৪২৬ ফুট।” সেই অধিক জলচাপ কমাতেই এ দিনও কিছুটা জল ছাড়তে হয়েছে। মাইথনের ম্যানেজার (অপারেশন্স) সমীর মাজি এ দিন বলেন, “মানুষের কথা ভেবে, একই সঙ্গে জলাধারের ক্ষমতার কথা মাথায় রেখে জল ছাড়া হচ্ছে। তার পরেও ধারণ ক্ষমতার বেশি জল জলাধারগুলিতে রয়ে গিয়েছে।”
ডিভিসি-র এই যুক্তির কথাই শোনা গিয়েছে বিরোধী দলনেতার মুখে। সূর্যবাবুর বক্তব্য, “ম্যান মেড, উওম্যান মেড— এ সবে বিশ্বাস করি না! নিম্নচাপের ফলে উপর থেকে জল নামলে নীচের দিকে গড়াবে। বন্যা হবে। এ ক্ষেত্রেও হয়েছে। বাঁধ তো রক্ষা করতে হবে! জল না ছাড়লে বাঁধ ভেঙে গেলে কী হবে!” বিরোধী দলনেতার আরও মন্তব্য, “বাঁধ রক্ষার জন্য জল ছাড়তে হবে, আড়াই বছর ধরে সরকারে থেকে এটা না-জানার কোনও কারণ নেই!”
‘ম্যান মেড’ বন্যার তত্ত্ব খারিজ করেছেন কংগ্রেস নেতারাও। প্রদীপ ভট্টাচার্যের দাবি, “আমি ডিভিসি-র চেয়ারম্যান এবং সেচ আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, জল ছাড়ার আগে রাজ্য সরকারের সেচসচিবকে জানানো হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী ভুল তথ্য দিয়ে রাজ্যবাসীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন!” ডিভিসি জানানো সত্ত্বেও কোনও এলাকার মানুষ সতর্কতা না-পেয়ে থাকলে তা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনেরই গাফিলতি বলে অভিযোগ করেছেন প্রদীপবাবু। একই অভিযোগ করেছেন সূর্যবাবুও। তাঁর কথায়, “পুজোর মধ্যেই মুখ্যসচিব এবং পরিষদীয় মন্ত্রীকে বন্যার আশঙ্কা সম্পর্কে সতর্ক করেছিলাম। বলেছিলাম, যে ভাবে নিম্নচাপের সৃষ্টি হচ্ছে, তাতে দামোদর অববাহিকায়, ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি হলে এখানে বন্যা হবে। তবু আগে থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যাঁরা সরকারে আছেন, তাঁরা পুজোর কাজে ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু পুজোর মধ্যেই বন্যার ব্যাপারে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত ছিল।”
মানসবাবুও জানান, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা এবং বিহারের সেচ সচিবেরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রেখেই কাজ করেন। সুতরাং, এ রাজ্যকে না-জানিয়ে ঝাড়খণ্ডের জল ছাড়ার প্রশ্নই ওঠে না। মানসবাবুর বক্তব্য, “মানুষকে আশ্বস্ত করার বদলে ভুল তথ্য দিয়ে কেন্দ্র-বিরোধী জিগির তুলে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে! বলা হচ্ছে, ম্যান মেড বন্যা। কিন্তু গত ১৩ থেকে ১৫ অক্টোবর যে বিপুল পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে, গত ৩৫ বছরে তা হয়েছে কি?”
ডিভিসি এবং বিরোধীদের যুক্তির পাল্টা হিসাবে তৃণমূলের সংসদীয় দলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য এ দিনও ‘ম্যান মেড’ তত্ত্বের পক্ষেই সওয়াল করেছেন। শিয়ালদহে দলীয় এক সভায় তাঁর মন্তব্য, “আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১০ বছর আগে যখন ম্যান মেড বন্যা বলেছিলেন, তখন তাঁকে কটাক্ষ করা হয়েছে। হাসাহাসি করা হয়েছে! কিন্তু আজ সত্যি প্রমাণিত হচ্ছে যে, রাজ্যে ম্যান মেড বন্যাই হচ্ছে! অন্য রাজ্য থেকে অকারণে জল ছাড়া হচ্ছে!”
দুর্গত এলাকায় ত্রাণের অপ্রতুলতার অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস, সিপিএম। ত্রাণ নিয়ে দলবাজি রুখতে জেলা বা ব্লক স্তরে সর্বদল কমিটি গড়ে বৈঠক করার দাবি তুলেছেন প্রদীপবাবুরা। আর সূর্যবাবুর দাবি, কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম খুলে প্রতিদিন জেলাওয়াড়ি পরিস্থিতি জানাক সরকার।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.