ব্লক অফিসে বৈঠক সেরে শিল্পমন্ত্রী গেলেন বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে। রাস্তার পাশে রাখা নৌকোয় সপার্ষদ উঠে বসলেন। জলে মেরেকেটে হাত কুড়ি দূরত্বে খান তিনেক পাক মারল সেই নৌকো। রাস্তার ধারে তখন বেশ কিছু উৎসুক চোখ। কী বলেন মন্ত্রী, জানার আগ্রহ গ্রামের মানুষের মধ্যে। তাঁদের দিকে হাত নেড়ে নৌকো থেকেই শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বললেন, “আলোচনা করে গেলাম। সব ব্যবস্থা হবে।” মিনিট পনেরো জলে চক্কর কেটে নৌকো ভিড়ল পাড়ে। সেখান থেকে গাড়িতে উঠে বেরিয়ে গেলেন পার্থবাবু। জনতার মন্তব্য ভেসে এল, “কেন যে এলেন, কী দেখলেন, কিছুই বোঝা গেল না।”
বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটে নাগাদ খানাকুল ১ ব্লক অফিসে পৌঁছন তৃণমূলের মহাসচিব তথা শিল্পমন্ত্রী পার্থবাবু। সেখানে হাজির ছিলেন হুগলির জেলাশাসক মনমীত নন্দা, পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী-সহ পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। ছিলেন জেলার বহু নেতা-বিধায়ক।
সকলকে নিয়ে ঘণ্টা খানেক বৈঠক সারেন শিল্পমন্ত্রী। পরে জানান, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই খানাকুলের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এসেছেন। বলেন, “জল নামছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাব মুখ্যমন্ত্রীকে।” মমতার সুরে সুর মিলিয়েই প্লাবনের দায় পার্থবাবু চাপিয়েছেন ডিভিসির উপরে। প্রশাসন সূত্রের খবর, মন্ত্রীকে ফসল, মাছচাষ, সম্পতির ক্ষতির সম্ভাব্য হিসাব দেওয়া হয়েছে। ত্রিপলের দাবি আছে সাধারণ মানুষের। মন্ত্রীকে জানানো হয়েছে সে কথাও। ইতিমধ্যেই খানাকুল ১ ব্লকে ৮০ কুইন্ট্যাল চাল, চিঁড়ে এবং অন্য আরও কিছু ত্রাণসামগ্রী বিলি হয়েছে। খানাকুল ২ ব্লকেও বেশ কিছু ত্রাণ বিলি হয়েছে। |
খানাকুলের পরিস্থিতি এ দিন অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। প্রশাসনেরই একটি সূত্র জানাচ্ছে, খানাকুল ১ ব্লকে গ্রামের ভিতরে জল পুরোপুরি নেমে গিয়েছে। তবে মাঠ-ঘাটে এখনও কোথাও কোথাও জল জমে। খানাকুল ২ ব্লকের মাড়োখানা-সহ কিছু এলাকায় সামান্য জল আছে। তা-ও দ্রুত নামছে।
খানাকুল ১ ব্লক অফিসে বৈঠক সেরে এ দিন খানাকুল ২ ব্লকের রাজহাটি পঞ্চায়েতের কুশালি গ্রামে যান শিল্পমন্ত্রী। মন্ত্রীর কনভয় থামে রাস্তার ধারে। পাশের মাঠে কোমর সমান জল। নৌকো রাখা ছিল আগে থেকেই।
প্রশাসনের লোকজন ভেবেছিলেন স্পিডবোটে উঠে গ্রামের ভিতরে যাবেন মন্ত্রী। কিন্তু স্পিড বোটের বদলে কাঠের বড় নৌকোই বেছে নেন পার্থবাবু। লোকলস্কর নিয়ে ওঠেন। কিন্তু মিনিট পনেরোর মধ্যেই সরেজমিনে দেখা শেষ। গাড়িতে উঠে পড়েন মন্ত্রী।
কুশালি গ্রামের পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা আকবর মল্লিক, শামসুল ইসলাম, পূর্বপাড়ার চূড়ামণি চোংদারেরা স্পষ্টই হতাশ। বললেন, “আমাদের কারও সঙ্গে তো কথাই বললেন না মন্ত্রী। কেন এলেন, কী দেখলেন, বুঝলামই না।”
|