ডিভিসি জল ছাড়ার পরিমাণ কমানোয় হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর ব্লকের সামগ্রিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। পক্ষান্তরে, পাশের আমতা-২ ব্লক অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা হওয়ায় নতুন করে প্লাবিত হয়েছে সেখানকার দু’টি পঞ্চায়েত এলাকা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ত্রাণের চিঁড়ে ছাড়া কিছুই মেলেনি বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তেরা। হাওড়ার দু’টি ব্লকের প্লাবিত হওয়া নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক কাজিয়াও।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে দামোদরের জল বিপদসীমার নীচে দিয়ে বইছে। ডিভিসি-র ছাড়া জলে উদয়নারায়ণপুরের ১১টি এবং আমতা-২ ব্লকের চারটি ব্লক প্লাবিত হয়। এর মধ্যে বুধবার রাতে জল ঢোকে আমতা-২ ব্লকের থলিয়া এবং বিকেবাটি পঞ্চায়েতে। ফসল, মাছ এবং ফুলের ক্ষতির পরিমাণ জানতে মূল্যায়ন চলছে বলে জানিয়েছেন হাওড়া জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ ছিল, ত্রাণ শিবিরের প্রতিটি পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল, পাঁচ কেজি করে আলু এবং এক কেজি করে চিঁড়ে দিতে হবে। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত দুর্গতদের চিঁড়ে ছাড়া কোনও ত্রাণসামগ্রী না পাওয়ার কথা মেনে নিয়েছেন প্রশাসনের কর্তারা। রাস্তায় জল জমে থাকার কারণে ত্রাণ নিয়ে লরি ঢুকতে পারছে না বলে তাঁরা জানিয়েছেন। আমতার কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্রের অভিযোগ, ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান এবং ভাটোরা এই পঞ্চায়েতগুলি ডুবে গেলেও এলাকার মানুষ কিছু ডিঙিনৌকা এবং গুটিকয়েক ত্রিপল ছাড়া কিছুই পাননি। |
উদয়নারায়ণপুরের তৃণমূল বিধায়ক সমীর পাঁজা বলেন, “কনফেড ১০০ টন চাল পাঠাচ্ছে। কিন্তু রাস্তায় জল জমে থাকায় লরি ঢুকতে পারছে না।” রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “বিভিন্ন হিমঘর থেকে আমরা আলু সংগ্রহ করছি। শীঘ্রই তা সংশ্লিষ্ট ব্লকে পৌঁছে দেওয়া হবে।” উলুবেড়িয়ার তৃণমূল সাংসদ সুলতান আহমেদের আশ্বাস, সব জায়গায় ত্রাণ পৌঁছনোর চেষ্টা হচ্ছে।
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, উদয়নারায়ণপুরের ডিহিভুরসুট থেকে আমতা-২ ব্লকের থলিয়া পর্যন্ত দামোদরের ২৬ কিলোমিটার অংশ ‘স্পিল’ এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করেছে ডিভিসি। নদীর কোনও অংশ ‘স্পিল’ এলাকা হিসেবে ঘোষিত হলে সেখানে নদীর দু’পারেই বাঁধ দেওয়া হয় না। একটি পাড় খোলা রাখতে হয়। যাতে সেখান থেকে ডিভিসি-র ছাড়া জল বেরিয়ে যেতে পারে। দামোদরের পূর্ব পাড়ের দিকটি যে হেতু শহরাঞ্চল, তাই সে দিকেই সেচ দফতর বাঁধ সংস্কার ও মেরামতি করে। অন্য দিকে, পশ্চিম পাড়টি খোলা রাখা হয়েছে। এই দিকেই পড়ে আমতা-২ এবং উদয়নারায়ণপুর ব্লকের বেশির ভাগ এলাকা। সেই কারণে ডিভিসি দেড় লক্ষ কিউসেকের উপর জল ছাড়লেই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। ডিভিসি-র ছাড়া জল পশ্চিম পাড়ের খোলা অংশ দিয়ে এসে এই দু’টি ব্লককে ভাসিয়ে দেয়। এ বারেও সেটাই হয়েছে।
তবে, এর পিছনে রাজ্য সরকারের ‘অবহেলা’কেই দায়ী করেছে সিপিএম। তাদের অভিযোগ, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে পশ্চিম পাড়ের পূর্বতন জমিদারি বাঁধগুলি যদি ঠিকঠাক সংস্কার করত এবং নদীর ভেঙে যাওয়া পাড় যদি মেরামত করত, তা হলে বন্যা হয় তো আটকানো যেত না, তবে ক্ষয়ক্ষতি অনেক কম হত। সিপিএমের জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার বলেন, “দামোদরের পশ্চিমে বাঁধ করা যাবে না জেনেই আমাদের সরকারের আমলে ২২ কোটি টাকা খরচ করে ১৩ কিলোমিটার লম্বা খাল (শর্টকাট চ্যানেল) কাটা হয়। সে জন্যই অনেক মানুষ বন্যা থেকে রেহাই পাচ্ছেন।”
রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা বলেন, “খাল কেটেও বামফ্রন্ট দিনের পর দিন তা সংস্কার করেনি। আমরা সাড়ে চার কোটি টাকা খরচ করে এ বারে ওই খালটি সংস্কার করেছি। সে কারণেই বন্যা ভয়াবহ আকার নেয়নি।” একই সঙ্গে তাঁর দাবি, “ডিহিভুরসুট থেকে বকপোতা পর্যন্ত দামোদরের পশ্চিম পাড় এবং জমিদারি বাঁধের প্রচুর সংস্কার করা হয়েছে। ডিভিসি যদি না জানিয়ে এত বেশি জল ছাড়ে, তা হলে কিছু করার নেই। আমতা, উদয়নারায়ণপুরের বন্যা নিয়ন্ত্রণে একটি মাস্টার-প্ল্যান তৈরি হচ্ছে। এই মাস্টার-প্ল্যান নিয়ে আমরা কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলব।” আমতার কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্র দাবি করেছেন, ডিভিসি-র সঙ্গে কথা বলে দামোদরের পশ্চিম পাড়ে যাতে বাঁধ উঁচু করা যায়, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিক রাজ্য সরকার। |