শিল্পমহলকে বার্তা দিয়ে বিড়লার পাশেই সরকার
সিবিআই তদন্তের জেরে কয়লা কেলেঙ্কারির মেঘ আরও ঘনীভূত। তার কালো ছায়া পড়ছে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সত্‌ ভাবমূর্তির ওপরে। এই অবস্থায় দ্রুত ক্ষত মেরামতে নেমে পড়ল কংগ্রেস তথা সরকার।
কংগ্রেস নেতৃত্ব ও সরকারের মন্ত্রীরা যেমন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে জোরালো যুক্তি সাজাতে তত্‌পর হয়েছেন। তেমনই রাহুল গাঁধী এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শিল্পমহলের উষ্মা প্রশমনে নেমেছেন শিল্পমন্ত্রী আনন্দ শর্মা ও অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। সে দিক থেকে আজ সব থেকে বড় ঘটনা ছিল নর্থ ব্লকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ও শিল্পপতি কুমারমঙ্গলম বিড়লার বৈঠক।
মাত্র ৭২ ঘণ্টা আগে কয়লা খনি বণ্টনের ঘটনায় কুমার বিড়লার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে সিবিআই। আজ তাঁর সঙ্গেই অর্থমন্ত্রীর বৈঠকে বসাটা যথেষ্ট অর্থবহ। কারণ, দুর্নীতির ঘটনায় অভিযুক্ত কোনও ব্যক্তির সঙ্গে সরকারের কোনও শীর্ষ মন্ত্রীর প্রকাশ্যে এত দ্রুত বৈঠক করার নজির বিশেষ নেই। বিশ্লেষকদের মতে, বিড়লার সঙ্গে বৈঠক করে সামগ্রিক ভাবে শিল্পমহলকেই বার্তা দিতে চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বোঝাতে চেয়েছেন, সরকার তাঁদের পাশেই রয়েছে।
সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়েই চিদম্বরমের সঙ্গে আজ তাঁর বৈঠক করতে চেয়েছিলেন আদিত্য বিড়লা গোষ্ঠীর এই কর্ণধার। সে জন্য অর্থ মন্ত্রকের দরজা দিয়ে না ঢুকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রাস্তা দিয়ে নর্থ ব্লকে ঢোকেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাংবাদিকদের মুখোমুখি পড়ে যেতে হয় তাঁকে। তাঁদের প্রশ্নের জবাবে বিড়লা বলেন, “কোনও অন্যায্য কাজ করিনি। তাই এফআইআর নিয়ে আদৌ উদ্বিগ্ন নই।” কুমার বিড়লা স্বীকার করেন, এফআইআর-এর প্রসঙ্গেও চিদম্বরমের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। তিনি অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন, এ ঘটনার প্রভাব যাতে তাঁর অন্য ব্যবসায় না পড়ে। বিশেষ করে ব্যাঙ্কের লাইসেন্স চেয়ে তাঁর সংস্থা যে আবেদন করেছে তা যেন ব্যাহত না হয়।
যদিও কুমার বিড়লার সঙ্গে বৈঠকের ব্যাপারে চিদম্বরম আজ কিছু জানাতে রাজি হননি। তবে কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী তো বটেই, কুমার বিড়লার বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের ঘটনায় ক্ষুব্ধ রাহুল গাঁধীও। চিদম্বরম-বিড়লার বৈঠকের নেপথ্যে তাঁরও ভূমিকা রয়েছে।
লোকসভা ভোটের আগে শিল্পমহল যে ভাবে নরেন্দ্র মোদীতে মজেছে, তা নিয়ে কংগ্রেসের মধ্যে উদ্বেগের স্রোত বইছে। সম্প্রতি রাহুল নিজে ১২ নম্বর তুঘলক রোডে তাঁর বাসভবনে দফায় দফায় শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছেন। ক’দিন আগেই কুমার বিড়লার সঙ্গে তিনি বৈঠকে বসেছিলেন। দশ জনপথ-ঘনিষ্ঠ নেতাদের মতে, সিবিআইয়ের অতিসক্রিয়তা রাহুলের সেই তত্‌পরতাতেও কিছুটা জল ঢেলে দিয়েছে। উল্টে শিল্পমহল রোজই সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ উগরে দিচ্ছেন। আজও ইনফোসিসের প্রধান এন আর নারায়ণ মূর্তি বলেন, “কুমারমঙ্গলম বিড়লা এক জন মর্যাদাসম্পন্ন শিল্পপতি। তার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ আনার আগে তদন্ত এজেন্সির হাতে সব রকম তথ্য থাকাটা জরুরি। নইলে এ দেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে ভীতির সঞ্চার হবে।”
বণিকমহলের অসন্তোষ সামলানোর পাশাপাশি কংগ্রেসকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষেও দাঁড়াতে হচ্ছে। কারণ, সিবিআই একই সঙ্গে কুমার বিড়লা ও প্রাক্তন কয়লাসচিব পি সি পারেখের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে। তদন্ত এজেন্সির অভিযোগ, স্ক্রিনিং কমিটির সিদ্ধান্ত অগ্রাহ্য করে পারেখ হিন্দালকোকে খনি বণ্টন করেছিল। কিন্তু পারেখের যুক্তি, কয়লা মন্ত্রক তখন প্রধানমন্ত্রীর অধীনে থাকায় মনমোহনও সমান দায়ী।
এই যুক্তি খণ্ডন করতে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী মণীশ তিওয়ারি আজ বলেন, প্রধানমন্ত্রী বা কোনও দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী নীতিগত সিদ্ধান্ত নেন। প্রক্রিয়াগত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন আমলারা। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে প্রতিটি ফাইলের খুঁটিনাটি পড়া সম্ভব নয়। সেটা আমলাদের কাজ। তাই প্রধানমন্ত্রীকে এই ঘটনায় দায়ী করা যায় না। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কমলনাথও আজ একই যুক্তি দিয়েছেন।
সিবিআইয়ের একটি সূত্র আবার আজ জানিয়েছে, বিড়লার পাশাপাশি আরও একটি সংস্থাকে কয়লার ব্লক পাইয়ে দিতে সাহায্য করেছিলেন পারেখ। চাকরি থেকে অবসরের পর পারেখ ‘নবভারত পাওয়ার’ নামে একটি সংস্থার অধিকর্তা হয়েছিলেন। তার পর ওই সংস্থা ওড়িশায় একটি খনির লাইসেন্স পেয়ে যায়। যদিও বিজেপি ও প্রাক্তন আমলাদের একাংশের অভিযোগ, সত্‌ অফিসার পারেখকে ফাঁসানো হচ্ছে। আশঙ্কা ছিল, তিনি মুখ খুললে সরকার বিপাকে পড়ে যাবে। তাই তাঁকেই এখন আসামি বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেস মুখপাত্র রেণুকা চৌধুরী অবশ্য বলেন, এ সব ভিত্তিহীন অভিযোগ। আদালতের নির্দেশে তদন্ত করছে সিবিআই। সরকারই যদি সিবিআই-কে নিয়ন্ত্রণ করত, তা হলে তাদের তদন্তে সরকারকে এত অস্বস্তিতে পড়তে হত না।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.