আগের মতো বেঁকে নয়, উড়ালপুল যাবে সোজাপথে। সে ক্ষেত্রে আগের মতোই কোনও পিলার থাকবে না। দীর্ঘ আলোচনা, মতান্তরের শেষে এই পরিকল্পনাতেই উল্টোডাঙা উড়ালপুলের ভাঙা অংশ জোড়া দিতে একমত হল সকলে। নকশাও তৈরি। এর জেরেই বাজেট বাড়ল দ্বিগুণ, আর কাজ শুরু করতে লেগে গেল সাত মাস। যদিও পিলার ছাড়া ঝুলন্ত অংশটি কতটা মজবুত হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
গত ৩ মার্চ কেষ্টপুর খালের উপরে ওই উড়ালপুলের বাইপাসমুখী লেনের একটি অংশ ভেঙে পড়ে। ঘটনায় এক গাড়িচালক ও খালাসি আহত হয়েছিলেন। এর পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞের দলকে দিয়ে তদন্ত করিয়েছিল রাজ্য সরকার। ভাঙা অংশ কী ভাবে জোড়া দেওয়া হবে, সে পরামর্শও ওই বিশেষজ্ঞরা দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী নকশা এবং টেন্ডার ডাকার কাজ শুরু হয়। |
১.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ উল্টোডাঙা উড়ালপুলের ৪০ মিটারের একটি ডেক ভেঙে পড়ে। কেষ্টপুর খালের দু’পাশে দু’টি পিলারের উপরে ওই ডেকটি ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। ভিআইপি থেকে উঠে অনেকটা বেঁকে উড়ালপুলটি বাইপাসে মিশেছে। ডেকটি এই বাঁকের মধ্যেই ছিল। তৈরির সময়েই বাঁকের অংশে সেতুটিকে মজবুত করতে খালের উপরে একটি পিলারের প্রস্তাব উঠেছিল। সূত্রের খবর, সেচ দফতর আপত্তি করায় তা কার্যকরী হয়নি।
সূত্রের খবর, ভাঙা অংশ জোড়া দেওয়ার পরিকল্পনা করার সময়ে বাঁকের অংশটি মজুবত করতে আবারও একটি পিলার তৈরির কথা ওঠে। কিন্তু এ বারও সেচ দফতর আপত্তি করে। এর পরে ফের আলোচনায় বসেন ইঞ্জিনিয়ার এবং বিশেষজ্ঞেরা। ঠিক হয়, আগের মতো বাঁক নয়, যে অংশটি জোড়া হবে তা হবে, সোজা। কিন্তু পিলার নয়, আগের মতোই কেষ্টপুর খালের উপরে অংশটি ঝুলন্ত অবস্থায়ই থাকবে। এই কারিগরি বিষয়টি মেটাতেই দীর্ঘ সময় লেগে যায়।
অন্য দিকে, প্রাথমিক ভাবে রাজ্য সরকার ওই ভাঙা অংশ জোড়া দিতে প্রায় ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল। কিন্তু দু’বার টেন্ডার ডাকা হলেও কোনও সংস্থা আগ্রহ দেখায়নি। ফের বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা চলে। অবশেষে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বরাদ্দ নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়। বরাদ্দ হয়েছে ১৪ কোটি টাকার কিছু বেশি। যেখানে উল্টোডাঙা উড়ালপুলটি তৈরি করতে খরচ হয়েছিল প্রায় ৭০ কোটি টাকা। বরাদ্দ ঠিক করতেও সময় লেগে যায়। এমনই দাবি পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের।
পুরমন্ত্রী বলেন, “ভাঙা অংশ জুড়তে অতিরিক্ত পিলার বসাতে সমস্যা রয়েছে। তবে ঠিক হয়েছে আগের মতো বিপজ্জনক বাঁক নয়, সোজাসুজি ভাবে ভাঙা অংশ জোড়া দেওয়া হবে। দু’বার টেন্ডার ডাকা হয়েছিল। কেউ রাজি হয়নি। তৃতীয় বার বরাদ্দ বাড়িয়ে টেন্ডার ডাকা হয়েছে। একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পুজোর আগে কথা থাকলেও কাজ শুরু করা যায়নি। পুজো মিটতেই কাজ শুরু হয়েছে।”
পুরমন্ত্রী আরও জানান, ছ’মাসের মধ্যে ওই ভাঙা অংশ জোড়া দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। কেষ্টপুর খালের কাছে ক্যাম্প করে কাজ শুরু করেছেন ভারপ্রাপ্ত সংস্থার কর্মীরা। প্রশ্ন উঠেছে, আগের মতোই ঝুলন্ত অবস্থায় থাকলে সুরক্ষা কতটা থাকবে? পুরমন্ত্রী জানান, বিশেষজ্ঞের দল ও ইঞ্জিনিয়াররা উড়ালপুলের দু’টি লেনই পরীক্ষা করে রিপোর্ট দিয়েছেন। তার পরেই একটি লেন চালু করা হয়েছিল। এ ক্ষেত্রেও সব দিক খতিয়ে দেখেই নকশা তৈরি হয়েছে। আগামী মার্চ-এপ্রিল মাসেই উড়ালপুল চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। |