উল্টোডাঙা উড়ালপুল
কত দিনে, কী ভাবে সারাই, ভিন্নমত বিশেষজ্ঞরা
যেন ‘কিং কং’ বা ‘গডজিলা’ ছবির দৃশ্য। অতিকায় কোনও দানব যেন খালের জলে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে উড়ালপুলের একটি অংশ।
বিমানবন্দর থেকে মহানগরে ঢোকার পথে লোকে এখন আতঙ্কে চোখ বড় করে দেখছে উল্টোডাঙার উড়ালপুলের খসে পড়া গার্ডারটি। সবারই প্রশ্ন, কী করে তোলা হবে খসে পড়া অংশটি? কবেই বা ফের চালু হবে উড়ালপুল?
নগরোন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর, রেল-সহ নানা সংস্থার বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে এ ব্যাপারে পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। কেউ বলেছেন, উড়ালপুল চালু করতে সময় লাগবে তিন-চার মাস। কেউ আবার বলছেন, বছর দুয়েক। কী ভাবে নির্মাণ কাজ করা হবে, তা নিয়েও মতপার্থক্য রয়েছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। রেলের প্রযুক্তিবিদ দুলাল মিত্র যেমন বলছেন, উড়ালপুলের ওই অংশ ভাল ভাবে মেরামত করতে গেলে বছর দু’য়েক সময় লাগবে। কারণ, ভেঙে পড়া অংশটি আর ব্যবহার করা যাবে না। তাঁর কথায়, “ইস্পাতে এক বার আঘাত লাগলে তা ভিতর থেকে ভঙ্গুর হয়ে পড়ে।” দুলালবাবু আরও বলছেন, এখন বাঁকের দু’মুখে যে থাম দু’টি রয়েছে, তা সেতুর ওই অংশকে ঠিক মতো ধরে রাখতে পারবে না। তাই নতুন করে আরও দু’টি থাম তৈরি করতে হবে। চওড়া করে বানাতে হবে কাস্তের মতো বাঁকা অংশটিও। অনেকটা একই সুর কেআইটি-র প্রাক্তন চিফ ইঞ্জিনিয়ার প্রবীরকুমার দে-র গলাতেও। তিনি বলেন, “উড়ালপুলের খসে পড়া অংশটির নকশায় বদল আনা জরুরি।”
তবে ইন্ডিয়ান রোড কংগ্রেসের বেয়ারিং কমিটি ও স্টিল ব্রিজ কমিটির সদস্য অচ্যুত ঘোষ মনে করেন, ভেঙে যাওয়া অংশটি সারাতে চার-পাঁচ মাস সময় লাগবে। এই প্রবীণ ইঞ্জিনিয়ারের দুশ্চিন্তা উড়ালপুলের থামের উপরে কংক্রিটের ভেঙে যাওয়া অংশ নিয়ে। তিনি বলেন, “ওই অংশটি সারানো কঠিন। সেই কঠিন কাজটিই করতে হবে।” তবে উড়ালপুলের খুলে-পড়া বাঁকা গার্ডারটি ফের ব্যবহার করা যেতে পারে বলেই অচ্যুতবাবুর মত। তিনি বলেন, “প্রাথমিক ভাবে দেখে মনে হয়েছে, অংশটি ভালই রয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নন ডেসট্রাক্টিভ টেস্ট করে নেওয়া জরুরি। সেই সঙ্গে এ বার বেয়ারিং যেন উল্টোপাল্টা বসানো না হয়, সে দিকেও কড়া নজর দিতে হবে।”
বিভিন্ন নির্মাণের নকশা তৈরির কাজে অভিজ্ঞ একটি সংস্থার কর্তা অমিতাভ ঘোষালের মতও খুব একটা আলাদা নয়। তিনিও মনে করেন, তিন-চার মাসে উড়ালপুলটিকে আগের চেহারায় ফেরানো সম্ভব। নকশায় বড়-সড় পরিবর্তনেরও পক্ষপাতী নন তিনি। তবে বেয়ারিংয়ের ভুলটাকে শুধরোতে হবে। অমিতাভবাবু বলছেন, “উড়ালপুলের কাস্তের মতো বাঁক নিয়ে অযথা উদ্বেগের মানে হয় না। দুনিয়ার সর্বত্র এমন ধারালো মোচড় দেওয়া সেতুরই রমরমা। নির্মাণের সময়ের ত্রুটির জেরে সেতুর বাঁকটাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোও বিচক্ষণতা নয়।” তাঁর যুক্তি, দিল্লি বা কলকাতার মেট্রোতেও বাঁক আছে। তবু এক বার ভেঙে-পড়ায় উড়ালপুলের ওই অংশটি নিয়ে উৎকণ্ঠা কাজ করলে বড়জোর বেয়ারিংয়ের উপরে এক ধরনের কেব্ল বসানো যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
দুলালবাবুও বলছেন, শহরের মধ্যে উড়ালপুল তৈরি করতে গেলে বাঁক অবশ্যম্ভাবী। তবে তাঁর বক্তব্য, উল্টোডাঙা উড়ালপুলের ওই তীক্ষ্ন বাঁকের ক্ষেত্রে নকশা তৈরি ও বেয়ারিং বসানোর ক্ষেত্রে অনেক বেশি সচেতন হওয়া উচিত। নইলে বিপদ হতে পারে। তিনি বলছেন, “উড়ালপুলের তীক্ষ্ন বাঁকে গাড়ি যাতে নিয়ন্ত্রণ না-হারায়, তার জন্য রাস্তা চওড়া করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে রাস্তাটি এক দিকে ঢালু রাখতে হবে। নির্মাণ প্রযুক্তিতে এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। কাস্তের মতো বাঁকের দু’ধারে অতিরিক্ত বেয়ারিং-ও বসাতে হবে।”
উল্টোডাঙা উড়ালপুল তৈরির সময় কেএমডিএ-র ডিজি ছিলেন দেবদাস ভট্টাচার্য। তাঁর অনুমান, সেতুটি সারাই করতে মাস ছয়েক সময় লাগতে পারে। সেই সময় কেএমডিএ-র চিফ ইঞ্জিনিয়ার পদে থাকা আনন্দ গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, “কারা, কী ভাবে, কবে থেকে করবেন, এটা ঠিক করতেই সময় লাগবে।”
বিশেষজ্ঞরা যেমন ব্যস্ত উড়ালপুল পুনরুদ্ধার নিয়ে, তেমনই দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রাকটি নিয়ে ব্যস্ত তার মালিক। এ দিনই তিনি শহরে এসে পৌঁছেছেন। কী করে ট্রাকটি তুলবেন তা নিয়েই দুশ্চিন্তা তাঁর। উড়ালপুলের খসে পড়া গার্ডারটি না সরিয়েও ট্রাকটি বের করা যাবে বলে প্রাথমিক ভাবে ইঞ্জিনিয়ারদের ধারণা।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.