জলে গেল কয়েক কোটি
সেতু-নকশা বদলে দিয়েও পড়ে নষ্ট খাল পাড়ির লঞ্চ
কোটি কোটি খরচ হল বটে, লঞ্চ কিন্তু চলল না!
কেষ্টপুরের খালে লঞ্চ চালানোর স্বার্থে উল্টোডাঙা উড়ালপুলের নকশা পাল্টানো হয়েছিল। কেনা হয়েছিল দু’কোটি টাকার জলযান। আরও কোটি দশেক টাকা খরচ করে সাফ হয়েছে খালের পলি, তৈরি হয়েছে ফুটওভার ব্রিজ, জেটি। যার জন্য এত আয়োজন, সেই লঞ্চগুলো স্রেফ পড়ে পচল। জলে গেল সরকারের বিপুল টাকা।
ভিআইপি রোড-ইএম বাইপাস সংযোগকারী উড়ালপুলটির একটা পিলার কেষ্টপুর খালের মধ্যে দাঁড় করাতে চেয়েছিল নির্মাতারা। সেচ দফতর তাতে আপত্তি তোলে। তাদের যুক্তি ছিল, স্তম্ভ বসলে খালে জলপ্রবাহ ব্যাহত হবে, পাশাপাশি সেখানে জলযানও চালানো সম্ভব হবে না। বস্তুত হিডকো-র দেওয়া দু’কোটি টাকায় ভূতল পরিবহণ নিগম তড়িঘড়ি ছ’-ছ’টা লঞ্চ তৈরিও করে ফেলে কেষ্টপুর খালে নামানোর জন্য। চারটে কাঠের, দু’টো স্টিলের।
লঞ্চের খাল-পাড়ির পরিকল্পনাটি ২০০৭ সালের। কেষ্টপুর খাল সংস্কার করে তাতে গঙ্গার জল ঢুকিয়ে নাব্যতাবৃদ্ধির কথা ভাবা হয়েছিল। তার জল শোধন করে নিউটাউনে সরবরাহের লক্ষ্যে যাত্রাগাছিতে জল শোধনাগার তৈরিরও সিদ্ধান্ত নেয় হিডকো। আর এই সূত্রেই স্থির হয়, খালের স্থির জলে তরঙ্গ সৃষ্টি করতে লঞ্চ চালানো হবে বাগবাজার ঘাট থেকে সল্টলেকের বৈশাখী পর্যন্ত। এতে খালের জল যেমন ঠিকঠাক থাকবে, তেমন আমজনতার যাতায়াতেরও বিস্তর সুবিধা হবে বলে দাবি করেছিলেন কর্তারা।
হাওড়া লঞ্চ ঘাটে পড়ে রয়েছে ভাঙাচোরা লঞ্চ। —নিজস্ব চিত্র
অগত্যা খালে পিলার না-বসিয়ে উড়ালপুলের নতুন নক্শা বানানো হয়। ইঞ্জিনিয়ারেরা অবশ্য জানাচ্ছেন, সেতুর অংশ খসে পড়ার সঙ্গে এর কোনও প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই। কিন্তু নকশা পরিবর্তনের পিছনে অন্যতম উদ্দেশ্যটিও পূরণ হয়নি। খাল দিয়ে লঞ্চ চলেছে হাতে গোনা কয়েকটা দিন। তার পরে বন্ধ হয়ে গেল কেন?
ভূতল পরিবহণ-সূত্রের খবর: উদ্যোগের গোড়াতেই ঘটে বিপত্তি। পরিষেবা উদ্বোধনের দিনে মন্ত্রী-আমলাদের লঞ্চটি উল্টোডাঙায় আটকে যায়। অতি কষ্টে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। পরে লঞ্চ চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয় হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতিকে। ক’দিন বাদে দেখা যায়, বাগবাজার লকগেট ঠিক মতো কাজ করেছে না। ফলে লঞ্চ চলার জন্য যত জল থাকা দরকার, তত জল খালে ঢুকছে না। নাব্যতাজনিত সমস্যার মুখে শেষমেশ বাগবাজার-বৈশাখী লঞ্চ সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায়। ঠিক হয়, বাগবাজার লকগেটের সমস্যা মিটিয়ে এবং বাগজোলা খাল থেকে আরও পলি তুলে ফের লঞ্চ চালানো হবে। কিন্তু গত ছ’বছরে সেই কাজ করে ওঠা যায়নি!
তাই লঞ্চগুলোও আর কেষ্টপুর খালে ভাসেনি। আপাতত তাদের ঠাঁই গঙ্গাতীরে, হাওড়ার দিকে তিন নম্বর জেটির পাশে। বছরের পর বছর ধরে ঝড়-বৃষ্টি-জোয়ারের ধাক্কায় প্রতিটা কঙ্কালসার। এমনকী, সারিয়ে-সুরিয়ে আবার চালানোর মতো অবস্থাতেও নেই। হুগলি নদী জলপথ পরিবহণের সংস্থার চেয়ারম্যান প্রণব ঘোষের আক্ষেপ, “লঞ্চগুলো বহু দিন ধরে পড়ে রয়েছে। এখন সব ক’টাই বাতিলের পর্যায়ে। আমরা চালাতে চেয়েছিলাম। সরকার তখন অনুমতি দেয়নি। দিলে রক্ষণাবেক্ষণ করা যেত।”
সরকারি টাকায় কেনা প্রায় নতুন ছ’-ছ’টা লঞ্চ এ ভাবে ফেলে রেখে নষ্ট করা হল কেন? খালে না-হোক, নদীতে তো ফেরির কাজে লাগানো যেতে পারত?
ভূতল পরিবহণ নিগম-কর্তৃপক্ষের দাবি: লঞ্চগুলো নদীতে চলার উপযুক্ত করে বানানো হয়নি। “ওগুলো তৈরি হয়েছিল কেষ্টপুর খালের মত স্রোতহীন জলে চলার জন্য। আমরা গঙ্গায় চালানোর চেষ্টা করেছিলাম। পারিনি।” বলেন নিগমের এক কর্তা। তা হলে অন্য খালে যাত্রী বহনের জন্য পাঠানো হল না কেন?
এর কোনও জবাব দিতে পারেননি ওই আধিকারিক। রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “ব্যাপারটা বাম আমলের। লঞ্চগুলো কেন কাজে না-লাগিয়ে নষ্ট করা হল, তা খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.