মদ্যপানের আসরে সঙ্গীকে খুন করে মৃতদেহ গায়েব করার পরেও স্বাভাবিক ভাবেই এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল অভিযুক্ত অর্জুন সিংহ। পুলিশি জেরার মুখেও অবিচল ছিল সে। কিন্তু লাগাতার জেরার পরে বৃহস্পতিবার রাতে অবশেষে অর্জুন স্বীকার করল, সে-ই খুন করেছে জিতু হেলাকে। তাঁকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, অর্জুনকে জেরা করার পরেই বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ ধাপা এলাকার একটি খাল থেকে উদ্ধার হয় বেলেঘাটার নিখোঁজ বাসিন্দা জিতু হেলার বস্তাবন্দি দেহ। মৃতের পরিজনেরা কিছু চিহ্ন দেখে দেহ শনাক্ত করেন। ময়না-তদন্তে পুলিশ জেনেছে, মাথায় আঘাতের ফলেই জিতুর মৃত্যু হয়।
পুলিশ জানায়, নবমীর দিন জিতু হেলার বাবা এন্টালি থানায় অভিযোগ করেন, তাঁর ছেলেকে সপ্তমীর রাতে অপহরণ করা হয়েছে। জিতুর সঙ্গী অর্জুন-সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
কিন্তু কেন খুন হতে হল জিতুকে? |
পুলিশের অনুমান, নির্মীয়মাণ ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো রেলে মাল সরবরাহের ব্যবসা সংক্রান্ত গণ্ডগোল থেকেই ওই রাতে বচসা বাধে দু’জনের। যার জেরেই ওই খুন। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার দিন অর্জুনের সঙ্গে দীপক বাল্মীকি নামে অন্য এক যুবক ছিল। খুনের পরে দেহটি গায়েব করতে অর্জুনকে সাহায্য করে দীপক। তাকেও খুঁজছে পুলিশ।
অর্জুনকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, সপ্তমীর রাতে অর্জুন ও দীপক শিয়ালদহ গুড়িয়া পাড়া রোডে রেল আবাসনের একটি পরিত্যক্ত ঘরে বসে মদ্যপান করছিল। সেখানে আসে জিতু। পুলিশের দাবি, অর্জুন জানিয়েছে, দু’জনের মধ্যে ঝামেলা চলছিল। ওই রাতে বচসা শুরু হলে আচমকাই জিতু আঘাত করে দীপককে। তখন অর্জুন বোতল দিয়ে জিতুর মাথায় মারে। ঘটনাস্থলেই জিতুর মৃত্যু হয়। অর্জুন ও দীপক একটি ট্যাক্সিতে বস্তাবন্দি দেহটি তুলে চলে যায় ধাপার কাছে দুর্গাপুরে। একটি কচুরিপানা ঢাকা খালে বস্তা ফেলে দিয়ে সেই ট্যাক্সি করেই ফিরে আসে।
পুলিশ জানায়, দুই এলাকাবাসী সপ্তমীর রাতে দীপক ও অর্জুনের সঙ্গে জিতুকে শেষ বার দেখেন। পরে গভীর রাতে দীপক ও অর্জুনকে পরিত্যক্ত ওই ঘর থেকে বেরোতে দেখলেও তাঁরা জিতুকে দেখেননি। তাঁরা দীপকের পোশাকে রক্তের দাগও দেখেন। কিন্তু ওই দুই স্থানীয় বাসিন্দা পুলিশকে জানান, তাঁদের মুখ খুলতে বারণ করেছিল অর্জুন ও দীপক। কিন্তু পরের দিন জিতুর পরিবার পুলিশে অভিযোগ করলে ওই দুই স্থানীয় পুরো বিষয়টি তাঁদের জানান। এ নিয়ে অর্জুনকে প্রশ্ন করা হলে সে কিছু জানে না বলে জানিয়ে দেয়। জিতুর বাবা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলেও সে এলাকা ছেড়ে যায়নি।
গোয়েন্দাদের দাবি, অর্জুন প্রথম থেকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। বৃহস্পতিবার সে ঘটনার দায় স্বীকার করলেও দেহ কোথায় ফেলেছে তা বলতে চায়নি। পরে নিজেই ধাপার একটি খালের কাছে নিয়ে যায় গোয়েন্দাদের। ওই দিন যে ট্যাক্সিতে জিতুর দেহ নিয়ে যায় তারা, সেই ট্যাক্সিচালকের খোঁজ করছে পুলিশ। শুক্রবার পুলিশের এক কর্তা জানান, বাকিদের খোঁজ পেলে অর্জুনের কথা সত্যি কি না জানা যাবে।
লালবাজার সূত্রে খবর, জিতু ও অর্জুনের বিরুদ্ধে একাধিক অপরাধের মামলা রয়েছে। জিতু আগে গ্রেফতারও হয়। এ দিকে, শুক্রবার শিয়ালদহ আদালত অর্জুনকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজত দিয়েছে। |