অতিবৃষ্টির জেরে টান পদ্মের জোগানে
ক-একটি পদ্মের দাম ১৪ থেকে ১৫ টাকা। তা-ও ওই ‘মহার্ঘ’ পদ্ম আকারে বেশ ছোট। এমনকী, ভাল মানের পদ্মের সেই গোলাপি রংটাও নেই। লক্ষ্মীপুজোর সকালে মল্লিকঘাট ফুলবাজারে পদ্ম কিনতে গিয়ে তাই মন ভরেনি ক্রেতাদের।
শুধু মল্লিকঘাটই নয়, ফুল বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, কলকাতার অন্যান্য ফুলবাজার, যেমন হগ মার্কেট বা মানিকতলা বাজারেও পদ্মের জোগান অন্যান্য বারের তুলনায় অনেকটাই কম। রাজ্যের উদ্যান পালন বিভাগের ডিরেক্টর পীযূষকান্তি প্রামাণিক বলেন, “পদ্মের উৎপাদনের ক্ষেত্রে এ বার পরিবেশ ছিল বেশ প্রতিকূল। বর্ষার মরসুমে প্রথম দিকে কম বৃষ্টি ও পরে অতিবৃষ্টি পদ্ম উৎপাদনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে বর্ধমান, বীরভূম, হুগলি-সহ বেশ কিছু জেলায় নতুন হিমঘর তৈরি হয়েছে। প্রতিকূল পরিস্থিতি হলে হিমঘরগুলির মাধ্যমে শুধু পদ্মই নয়, সব ফুলেরই চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
লক্ষ্মীপুজোয় সব সময়েই পদ্মের দাম থাকে বেশি। মল্লিকঘাট ফুলবাজারেই এক-একটি পদ্ম বিক্রি হয় আট থেকে ১০ টাকায়। কিন্তু এ বার আরও বাড়ল কেন? পীযূষবাবুর মতে, “এক বার কোনও জলাশয়ে পদ্ম চাষ শুরু হলে পরের কয়েক বছর তাতে খুব সহজেই পদ্ম ফোটে। জুন জুলাই মাসে ভাল বৃষ্টি হলে ওই সব জলাশয়ে পদ্মের ফলন ভাল হয়। খুব দ্রুত ফলন বাড়ে। কিন্তু ভাল পদ্ম উৎপাদনের জন্য যখন বৃষ্টির দরকার, অর্থাৎ জুন মাসে এ বছর ভাল বৃষ্টি হয়নি। অথচ অগস্টে অতিবৃষ্টিতে জলাশয় উপচে পড়ায় পদ্ম নষ্ট হয়েছে। মূলত বর্ষার খামখেয়ালিপনাতেই এ বার পদ্মের জোগান কমেছে।”

পদ্মের পসরা। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
পীযুষবাবুর সঙ্গে একমত ফুলচাষিরাও। সারা বাংলা ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ নায়েক বলেন, “এ রাজ্যে সব চেয়ে বেশি পদ্মের চাষ হয় বর্ধমান, বীরভূম, পূর্ব মেদিনীপুর, ও হাওড়ায়। প্রতি জেলাতেই এ বার অতিবৃষ্টি হয়েছে। ন্যাশনাল হাইওয়ের ধারে নয়ানজুলিতে ভাল পদ্মের চাষ হয়। অতিবৃষ্টিতে নয়ানজুলিতেও ভাল উৎপাদন হয়নি।” মল্লিকঘাটের পাশাপাশি পদ্ম ব্যবসায়ী প্রিয়ব্রত শাসমলের কাছ থেকে পদ্ম যায় রাজ্যের বাইরেও। তিনি বলেন, “এ বার উৎপাদন এতই কম যে ভিন্ রাজ্যে পদ্মের চাহিদা অনুযায়ী খুব কম জোগান দিতে পেরেছি। স্থানীয় বাজারে পদ্মের জোগান দিতে গিয়েও হিমশিম অবস্থা।” চাহিদার তুলনায় জোগান কম হওয়ায় ওড়িশার ছোট পদ্মও মল্লিকঘাটে বিকোচ্ছে বলে জানালেন ওই বাজারের চাষিরা। তাঁরা জানান, এ বার লক্ষ্মীপুজো অন্য বারের তুলনায় কিছুটা দেরিতে, কার্তিক মাসে। ইতিমধ্যে ভোরে শিশির পড়তে শুরু করেছে। শিশিরের প্রভাবেও পদ্ম ফুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি চাষিদের।
এ দিকে, রাজ্যের উদ্যান পালন বিভাগের কর্তারা জানিয়েছেন, জেলার স্থানীয় বাজারে প্রতি বছর পুজোয় পদ্মের চাহিদা বাড়ছে। তাঁদের মতে, জেলায় প্রতি বছরই দুর্গাপুজোর সংখ্যা বাড়ছে। কলকাতার মল্লিকঘাট ফুলবাজারে পদ্ম আসার আগেই জেলায় পুজোর সংগঠকেরা স্থানীয় বাজার থেকে পদ্ম কিনে ফেলছেন। ফলে কলকাতার বাজারে জোগান অনেকটা কমে যাচ্ছে। তাঁদের মতে, এমনিতেই এ বার উৎপাদন কম, তার মধ্যে অধিকাংশই দুর্গাপুজোয় লেগে গিয়েছে। ফলে লক্ষ্মীপুজোর বাজারে যা পদ্ম পড়ে রয়েছে, তার মান তেমন ভাল নয় এবং জোগানও চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট কমে গিয়েছে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.