বৃষ্টিতেই আগুন ধরেছে, ফুলের বাজার লক্ষ্মীছাড়া
ক্ষ্মীর কৃপায় কোথায় টাকা ঝনঝন করবে তা নয়, কোজাগরী পুজোর ফুল কিনতে গিয়েই এ বার পকেট খালি হচ্ছে বাঙালির।
আজ, শুক্রবার লক্ষ্মীপুজো। বুধ-বৃহস্পতিবার থেকেই ফুলে হাত ছোঁয়ানো দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি পুজোর আগেই ফুলের বাজার চড়ে। এ বার তার সঙ্গে যোগ হয়েছে ঘূর্ণিঝড় পিলিনের ধাক্কা। মল্লিকঘাট, শিয়ালদহ থেকে কোলাঘাট ফুল বাজার সর্বত্রই একই চিত্র। গত বারের চেয়ে দ্বিগুণ-তিন গুণ বেশি দামে বিকোচ্ছে ফুল।
মল্লিকঘাট ফুলের বাজারে গত বছর রজনীগন্ধা বিক্রি হয়েছিল ৭০-৮০ টাকা কেজিতে। বৃহস্পতিবার তা-ই ওঠে ২৫০ টাকায়। গত মরসুমে যে ঝুরো গাঁদাফুল প্রতি কিলো ১৫-২০ টাকায় মিলেছে, তার দাম চড়েছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। কোলাঘাট বাজারেও তিন ফুট দৈর্ঘ্যের লাল গাঁদাফুলের ২০টি মালার দাম ৩০০ টাকা। গত বারে তা ছিল ২০০ টাকা। একই মাপের হলুদ গাঁদাফুল ২০টা বিকিয়েছে ৪০০ টাকায়, গত বারে যার দাম ছিল ২৫০ টাকা।
উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ মহকুমায় ঠাকুরনগর ফুলের বাজার রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফুলবাজার। নদিয়ার বিভিন্ন চাষিরাও ফুল এনে এখানে বিক্রি করেন। এই বাজারেও এক-একটি পদ্মফুলের দাম ১৫ থেকে ১৬ টাকা। গাঁদাফুল বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা কেজিতে। বহু জায়গায় হিমঘরের পদ্ম বিক্রি হয়েছে এক-একটি ৭-৮ টাকায়। গত বছর দাম ছিল অনেকটাই কম। শিয়ালদহ ফুলের বাজারে দোপাটি ফুল ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।
ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।
বনগাঁর ঠাকুরনগর ফুলের বাজারে দোপাটির কেজি ছিল ১২৫-১৫০ টাকার মধ্যে। যেখানে গত মরসুমে দর ছিল ২০ থেকে ৩০ টাকা। অপরাজিতা বিকিয়েছে ১২০-১৫০ টাকা কেজি দরে। গত বার ছিল ৬০-৭০ টাকা।
এই পরিস্থিতির জন্য ফুলচাষিরা টানা নিম্নচাপকেই দায়ী করছেন। রাজ্যে ফুলচাষ হয় নদিয়া, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায়। সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে ফুলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তার উপরে অষ্টমীর রাতে ঘূর্ণিঝড়ের চাপে ব্যারাজ থেকে নদীতে হু-হু করে জল ছাড়া হয়েছে। তাতে কোথাও ফুলের খেত ডুবে গিয়েছে, কোথাও জল জমে ফুলগাছের গোড়া নষ্ট হয়ে গিয়েছে। অল্প কিছু উঁচু জমিতে যতটুকু চাষ বেঁচেছে, তার জোগান চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে না। কোলাঘাটের সুজয় ঘাঁটা, পাশকুঁড়ার গণেশ মাইতিরা বলেন, “যতটুকু জমিতে চাষ করেছিলাম, লক্ষ্মীছাড়া বৃষ্টিতে সবই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। অল্প কিছু চাষ হলেও তার চাহিদা অনেক বেশি।”
কিন্তু বাংলার বর্ষা তো প্রতি বারই সেপ্টেম্বরের শেষ-অক্টোবরের গোড়া অবধি গড়ায়? সারা বাংলা ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ নায়েকের ব্যাখ্যা, “গাঁদা, দোপাটি, অপরাজিতার মতো ফুল বছরের যে কোনও সময়েই দেড় মাসে চাষ করা যায়। কিন্তু এ বার এমন ভাবে বারবার নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে যে গাছের গোড়ায় বৃষ্টি জল জমে পচে গিয়েছে। ছোট চাষিরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাঁদের পক্ষে তো বারবার চাষ করা সম্ভব নয়। এক মাত্র বড় চাষিরাই ফের নতুন করে চাষ করেছেন। কিন্তু সে আর কতটুকু? তাই দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়নি।” ছোট চাষিরা সরকারি সাহায্য পাননি? নারায়ণবাবুর আক্ষেপ, “ক্ষতিপূরণ চেয়ে আমরা মুখ্যমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী ও আমাদের উদ্যানপালন দফতরের মন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোলাঘাটে এসে ১০ জনকে সার ইত্যাদি সাহায্য দিয়েছিলেন। আর কিছু পায়নি। কিছু এলাকার চাষি ফুলের বেশি দাম পেলেও বেশিরভাগই ক্ষতিগ্রস্ত।” রাজ্যের উদ্যানপালন দফতরের মন্ত্রী সুব্রত সাহা বলেন, “ফুল ও পান চাষে ৪-৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে রিপোর্ট পেয়েছি। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা হচ্ছে।” সে তো পরের কথা। আপাতত ছোট চাষির ঘরে লক্ষ্মী নেই। আর যৎসামান্য ফুলে নমো-নমো করে পুজো সারতে হচ্ছে মধ্যবিত্ত বাঙালিকে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.