এক জন লকআপে স্বামীর মৃত্যুর বিচার চেয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। অন্য জনের স্বামী ভোটের দিন বুথের কাছেই লুটিয়ে পড়েছেন বোমায়।
দু’জনেই জনতার কাছে বিচার চেয়েছিলেন। হুগলির ধনেখালিতে ফলের অপেক্ষায় ছিলেন মানুজা বিবি, বর্ধমানের জামুড়িয়ায় মনোয়ারা বিবি। জনতা সাড়া দিয়েছে।
এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রথম প্রাণ গিয়েছিল বর্ধমানের জামুড়িয়ায়। গত ১৫ এপ্রিল সাতসকালেই পাড়ার মহিলাদের বুথে নিয়ে যেতে গিয়ে বোমায় খুন হন সেখানকার মদনতোড় পঞ্চায়েতের মধুডাঙা গ্রামের সিপিএম প্রার্থী মনোয়ারা বিবির স্বামী শেখ হাসমত। পাল্টা হামলায় খুন হন এক তৃণমূল কর্মীও। |
এর পরেও মনোয়ারা বিবি ভোট দিতে গিয়েছিলেন। অশান্তি উপেক্ষা করে ভোট দেন গ্রামের মানুষজনও। সোমবার ব্যালট খুলে দেখা গেল, পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে গেলেও প্রায় তিনশো ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল প্রার্থীকে হারিয়ে দিয়েছেন মনোয়ারা। তাঁর কথায়, “আমার স্বামীকে নৃশংস ভাবে খুন করার পরেও মানুষ যে ভয় না পেয়ে বুথে গিয়েছেন, তাতে আমি কৃতজ্ঞ। ওঁর মৃত্যু মর্যাদা পেয়েছে।”
ধনেখালির সোমসপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতে ১২টি আসনের মধ্যে ৯টিই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল তৃণমূল। যে তিনটিতে ভোট হয়, তার একটিতে কংগ্রেসের হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন মানুজা বিবি। সেই মানুজা, যাঁর স্বামী কাজি নাসিরুদ্দিন তৃণমূলের স্থানীয় নেতা ছিলেন এবং গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে গত ১৮ জানুয়ারি দলেরই বিধায়ক অসীমা পাত্রের নির্দেশে লকআপে পুলিশ যাঁকে পিটিয়ে মারে বলে অভিযোগ। বিধায়কের দলকে ৬১ ভোটে হারিয়ে দিয়েছেন মানুজা।
মনোয়ারার তুলনায় মানুজার লড়াইটা আসলে অনেক আগে থেকে শুরু হয়েছে। প্রথম থেকেই কংগ্রেস তাঁর হয়ে গলা ফাটিয়েছিল। দলের সাংসদ অধীর চৌধুরী, প্রদেশ সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যেরা এসে সভাও করে যান। হাইকোর্টের নির্দেশে সিআইডি-র হাত থেকে তদন্তভার সরিয়ে নিয়ে সিবিআই-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আবদুল মান্নান এ দিন বলেন, “সে দিনই আমাদের নৈতিক জয় হয়েছিল। এ বার আমরা জনতার আদালতেও জিতলাম।” বিধায়কের কটাক্ষ, “জিতেছে বটে, কিন্তু ভোটের ব্যবধান তো বেশি নয়।” |
মানুজা অবশ্য এখন এই সব কটাক্ষ গায়েই মাখছেন না। গণনাকেন্দ্র থেকে বেরোনোর মুখে নির্বিকার মুখে তিনি বলে যান, “স্বামীর মৃত্যুর বিচার চাই। লড়াই এখনও বাকি।” যা প্রায় হুবহু মিলে যায় দশ বছরের ছেলে, বছর পাঁচেকের মেয়ে নিয়ে সংসারে একা পড়ে যাওয়া মনোয়ারা বিবির কথাতেও। যিনি বলেন, “শান্তি সে দিনই পাব, যে দিন আমার স্বামীর খুনিরা শাস্তি পাবে।”
মানুজা আর মনোয়ারার এলাকা আলাদা, অতীত আলাদা, দলও। কিন্তু তাঁরা হয়তো আসলে একই দলের ঘর হারিয়ে হিংসার রাজনীতির বিরুদ্ধে যাঁরা বিচার চাইছেন।
|