বোমায় নিহত স্বামী, তার পরেও ভোট দিলেন মানোয়ারা
'দু’জনের মধ্যে মিল অনেক।
দু’জনেই তিন ভাইয়ের মধ্যে মেজো। দু’জনেরই দুই ছেলে। কাজকর্ম করে দু’জনের সংসারও চলছিল দিব্যি।
দু’জনের মধ্যে অমিলও ছিল এক জায়গায়। এক জন যেখানে সিপিএম সমর্থক, অন্য জন ছিলেন তৃণমূলে। আর সেই রাজনীতিই কেড়ে নিল দু’জনের প্রাণ।
সোমবার সকালে বুথের পথে বোমায় খুন হন সিপিএম প্রার্থী মানোয়ারা বিবির স্বামী শেখ হাসমত সাগা। তার চল্লিশ মিনিট পরে পিটিয়ে-কুপিয়ে খুন করা হয় তৃণমূল কর্মী রাজকুমার কোড়াকে। স্বামীর মৃত্যুতে ভেঙে পড়লেও মানোয়ারা বিবি পরে গিয়ে ভোট দিলেন। রাজকুমারের স্ত্রী গীতাদেবী দুঃসংবাদ পাওয়ার পর থেকে বাক্যহারা।
ইটের গাঁথনি দেওয়া মাটির বাড়িতে স্ত্রী-ছেলেদের নিয়ে সংসার হাসমতের। কাজ করতেন বেসরকারি কয়লা সংস্থায়। দাদা শেখ জব্বর ও ভাই শেখ কালাম দিনমজুরের কাজ করেন। হাসমতের বৌদি ধনার বিবি অভিযোগ করেন, এ দিন সকালে বাড়ির ও পড়শি মহিলাদের সঙ্গে নিয়ে ভোট দিতে যাচ্ছিলেন হাসমত। বুথ থেকে প্রায় দু’শো মিটার দূরে এক দল তৃণমূল কর্মী রাস্তা আটকে বাড়ি ফিরে যেতে বলে। ধনার বিবির অভিযোগ, “বচসা শুরু হলে তৃণমূলের লোকেরা প্রথমে একটি বোমা ফাটায়। পরে হাসমতকে লক্ষ করে একটি বোমা ছোড়ে। চারদিক ধোঁয়া হয়ে যায়। দেখি, দেওর রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে। তার মধ্যেই তৃণমূলের লোকেরা পালায়।”
শেখ হাসমতের মা ও ছেলে।— নিজস্ব চিত্র।
এর মিনিট চল্লিশেক পরে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় দেড়শো মিটার দূরে খুন হন রাজকুমার। তাঁর বাড়ি জামুড়িয়া পুরসভার বোরিংডাঙা লাগোয়া এপিসি গ্রাউন্ড এলাকায় বাড়ি তাঁর। গাড়ি কেনাবেচার ব্যবসায়ী করতেন তিনি। বাড়িতে রয়েছে স্ত্রী এবং তিন ও পাঁচ বছরের দুই ছেলে। প্রতিবেশীদের দাবি, রাজকুমার যে সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত, তা তাঁদের জানা ছিল না।
ঘটনার পরে হাসমতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর মা অরিজান বিবি পুত্রবধূ ও দুই নাতিকে নিয়ে বসে রয়েছেন। ঘরে ভিড় পড়শিদের। অরিজান বিবি বলেন, “ভোট নিয়ে গোলমাল অশান্তি হচ্ছে শুনছিলাম। কিন্তু এমন ঘটে যাবে দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি। এর পরে সংসার কী ভাবে চলবে জানি না।”
জোড়া খুনের ঘণ্টাখানেক পরে ওই বুথে গিয়ে দেখা যায়, ভোটকর্মীরা ছাড়া সেখানে রয়েছেন শুধু সিপিএম প্রার্থীর এজেন্ট শেখ আমিরুদ্দিন। তিনি বলেন, “দ্বিতীয় খুনের ঘটনার পরেই তৃণমূল প্রার্থীর এজেন্ট বুথ থেকে চলে গিয়েছেন।” ওই বুথে অবশ্য পরে গ্রামবাসীরা গিয়ে ভোট দিয়েছেন। মানোয়ারা বিবিও প্রতিবেশীদের সঙ্গে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “ভোট দিতে যাওয়ার জন্য স্বামীর প্রাণ গিয়েছে। তার পরে আমি ভোট দিতে না গেলে স্বামীর কাছে হেরে যেতাম। মানুষ আমার পাশে দাঁড়ানোয় কৃতজ্ঞ।” স্থানীয় সিপিএম কর্মী শেখ আকবর আলি বলেন, “হাসমত কোনও গোলমালে থাকত। তবু তাকে এ ভাবে খুন করা হল!”
রাজকুমারের বাবা গান্ধী কোড়া ডিসেরগড় পাওয়ার সাপ্লাই কর্পোরেশনের কর্মী। এক সময়ে তাঁদের পরিবার সিপিএমের সমর্থক ছিলেন। পরে রাজকুমার তৃণমূলে যোগ দেন। গান্ধীবাবু বলেন, “কিছুই মাথায় ঢুকছে না। কেন ও ঝামেলার মধ্যে গেল, জানি না। ওই গ্রামে আমাদের অনেক আত্মীয়-স্বজন রয়েছেন। তাঁদের বাড়িতে থেকে গোলমালের মধ্যে না ঢুকলে এই সর্বনাশ হত না।” সোমবার রাতেই জামুড়িয়ার ইকড়া গ্রামে রাজকুমারের শ্যালকের বিয়ে ছিল। নিস্তব্ধেই কোনও মতে সারা হয় সেই অনুষ্ঠান।
আসানসোলের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটকের অভিযোগ, “বুথ দখলের জন্য ওই সিপিএম প্রার্থীর স্বামী দলবল নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। গ্রামবাসী প্রতিরোধ করলে বোমা ছুড়তে গিয়ে তা ফেটে মারা যান তিনি। আমাদের দোষী প্রতিপন্ন করতে এক জনকে পিটিয়ে মারল সিপিএম।” আসানসোলের সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরীর অবশ্য বক্তব্য, “সন্ত্রাস সৃষ্টির জন্য বহিরাগতদের নিয়ে আসছে তৃণমূল, এই অভিযোগ আমরা ভোটের আগে থেকেই করেছিলাম। সেটা আটকাতে পারলে এ ভাবে দু’জনের প্রাণ যেত না। রাজকুমারের মৃত্যুও সমান ভাবে বেদনাদায়ক। দু’টি প্রাণ গেল স্রেফ প্রশাসনের ব্যর্থতায়।”
হাসমতের পরিবারের তরফে ১০ জন তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পক্ষান্তরে, রাজকুমার খুনের ঘটনায় স্থানীয় তৃণমূল নেতা অলোক দাস সিপিএমের ১২ জনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করেন। পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ বলেন, “প্রথম খুনের ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.