ভোটের দিনে ভুরিভোজ!
দ্বিতীয় দফার ভোটে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের খুন, জখম, সন্ত্রাসও এই ভুরিভোজের পরম্পরা থেকে টলাতে পারেনি সালানপুরের বনবিড্ডি গ্রামের বাসিন্দাদের। প্রতি বছরের মতো এ বারও বুথ ফেরত ভোটারদের জন্য কোথাও লুচি, আলুরদম, লেডিকেনি, আবার কোথাও মুড়ি, ঘুঘুনি, মিহিদানার বন্দোবস্তো ছিল।
|
দুই রাজনৈতিক দলের উদ্যোগে চলছে খাওয়া দাওয়া। |
গ্রামবাসীরা জানালেন, এই রীতি বহুবছরের। যে কোনও সাধারণ নির্বাচনেই রাজনৈতিক দলগুলি আর সব খরচের সঙ্গে এই জলখাবারের খরচটিও ধরে রাখে। এমনকী রাজনৈতিক নেতা কর্মীরা এই খরচে কোনও কার্পণ্যও করেন না। গ্রামের এক প্রবীণ বাসিন্দা ত্রিলকীনাথ নন্দী জানালেন, জলখাবার দেওয়ার এই রেওয়াজে কংগ্রেস বা সিপিএম বলে আলাদা কিছু নেই। সব দলই নিজেদের সাধ্যমতো ব্যবস্থা করে। গ্রামেরই একটি নির্দিষ্ট জায়গায় খাবার সাজিয়ে রাখা হয়। ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ইচ্ছুক প্রত্যেককেই হাতে হাতে এই খাবারের প্যাকেট তুলে দেওয়া হয়। আর কেউ যদি পাত পেড়ে খেতে চান, সে ব্যবস্থাও থাকে। কিন্তু ভোটের দলাদলি, লড়াইয়ের মধ্যে এমন অন্যরকম ব্যবস্থা কেন? গ্রামের আরেক বাসিন্দা ষষ্ঠীপদ স্বর্ণকার বলেন, “ভোট আসলে আমাদের কাছে একটা উৎসব। আর উৎসব মানেই খাওয়াদাওয়া। সকাল থেকে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিই। ঘরে তো রান্নাবান্নার ঠিক থাকে না। তাই এই ব্যবস্থা। একটা দিন রাজনীতি ভুলে ভুরিভোজে মেতে উঠি সবাই।” সোমবার ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, একটি নির্দিষ্ট জায়গায় সিপিএমের তরফে ঘুঘনি, মুড়ি ও মিহিদানা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। তার একটু দূরেই লুচি, আলুরদম ও লেডিকেনি সাজিয়ে রেখেছে কংগ্রেস। আর ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে মহা আনন্দে দুই শিবির থেকেই এই খাবারের প্যাকেট বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন বাসিন্দারা। এমনই একজন মুক্তারাম নন্দী বলেন, “এ আমাদের অনেক দিনের রীতি।” আরেক জন বাসিন্দা বুলু পাল বলেন, “সকালে ভোট দিতে এসেছি। রান্না করব কখন। এই খাবারই খাব আজ।”
খাবার খেয়ে যেমন বাসিন্দারা খুশি, তেমনি বানিয়েও খুশি গ্রামের বুধন কর্মকার বা শ্রীদাম মণ্ডলেরা। আটা মাখা, লুচি বেলা থেকে লুচি ভাজা সবটাই করছেন তাঁরা। তাঁরাই জানান, পঞ্চাশ বছরের এই পরম্পরা ধরে রাখাটাই আসল। এর জন্য কার ট্যাঁকের জোর কত বেশি, তা গুরুত্ব পায় না। গ্রামের সিপিএম প্রার্থী কল্পনা স্বর্ণকার বলেন, “দেখুন তো সবাই কেমন একসঙ্গে মজা করে খাচ্ছেন। এই মিলমিশ আর কোথাও পেয়েছেন?” কংগ্রেস প্রার্থী বিউটি দত্তও বলেন, “ভোটের দিন এসে বুঝবেন না যে লড়াইতে মানুষকে মরতেও হয়।”
|