সাফল্যেও শাসকের কাঁটা বিক্ষুব্ধ নির্দল
পোশাকি পরিচয় নির্দল। বস্তুত গোঁজ কিংবা বিক্ষুব্ধ। পঞ্চায়েত ভোটে, বিশেষ করে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে বরাবরই থাকেন এঁরা। এ বারেও ব্যতিক্রম হল না। বেশ কিছু জায়গায় তাঁরা শুধু জিতলেনই না, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ছিনিয়ে নিলেন বেশ কিছু গ্রাম পঞ্চায়েত।
এ বার পঞ্চায়েত ভোটে নির্দল প্রার্থীরা যে অনেক ক্ষেত্রেই শাসক দলকে বেগ দেবে, তা বোঝা গিয়েছিল বোলপুরের কসবায় তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের হুঙ্কার থেকেই। রাজনীতির কারবারিদের ব্যাখ্যা ছিল, নির্দল প্রার্থীরা অনেক জায়গায় জয়ের পথে কাঁটা হবেন বুঝেই ওই হুমকি দিয়েছিলেন অনুব্রত (তাঁকে ফলপ্রকাশের পরে ডেকে পাঠানো হবে বলে এ দিনই জানিয়েছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়)। শুধু বীরভূম নয়, পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা, হুগলির আরামবাগ, বাঁকুড়া, মুর্শিদাবাদেও এই কাঁটা বিঁধেছে শাসক দলকে।
তৃণমূল নেতৃত্ব প্রকাশ্যে বিক্ষুব্ধদের অস্তিত্ব স্বীকার না করলেও ঘনিষ্ঠ মহলে একান্ত আলাপচারিতায় তা মেনে নিচ্ছেন। তবে তৃণমূলের যে বিক্ষুব্ধরা নির্দল হিসেবে জিতলেন, বোর্ড গঠনে তাঁদের তৃণমূলকে সমর্থন করার সম্ভাবনাই প্রবল।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, কিছু জায়গায় নির্দল প্রার্থীরা দাঁড়ালেও তাতে কোনও সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, “ওটা দেখে (বিপুল পরিমাণে বিক্ষুব্ধদের জয়) সামগ্রিক ভাবে চিন্তার কোনও কারণ নেই।” নির্দলদের জন্য যে দরজা বন্ধ হয়নি, তার ইঙ্গিত দিয়ে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “যারা জেতার, তারাই জিতেছে! সকলকে নিয়েই বাংলা গড়তে হবে।”
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বিরোধীহীন বহু পঞ্চায়েতে এ বার তৃণমূলের লড়াইও ছিল মূলত দলের বিক্ষুব্ধ নির্দল প্রার্থীদের সঙ্গে। পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে তৃণমূলের এক দোর্দণ্ডপ্রতাপ সাংসদের ঘনিষ্ঠ প্রার্থীদের সঙ্গে লড়াই হয়েছে দলেরই সর্বভারতীয় এক নেতার অনুগামীদের। আবার হুগলির আরামবাগ-গোঘাটে তৃণমূলের সর্বভারতীয় ওই নেতার প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন দলের রাজ্য স্তরের এক ওজনদার নেতার পছন্দের প্রার্থীরা।
পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের দু’টি পঞ্চায়েতে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জিতেছেন নির্দল প্রার্থীরা। যাঁরা অধিকাংশই বিক্ষুব্ধ তৃণমূল বলে পরিচিত। নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের সামসাবাদেও সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জিতেছেন নির্দল প্রার্থীরা। তমলুকেও একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েতে বিক্ষুব্ধরা নির্দল হিসেবে লড়ে যথেষ্ট বেগ দিয়েছে শাসক দলকে। তমলুকেরই পিপুলবেড়িয়া ২ পঞ্চায়েতে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল ও বামফ্রন্ট জোট বেধে বোর্ড গড়তে চলেছে।
শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকে ঢলহরা পঞ্চায়েত ছিল তৃণমূলের দখলে। এ বার ২১টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ৯ ও সিপিএম ৮টি আসনে জিতেছে। বাকি ৪টি আসনে জিতেছেন নির্দল প্রার্থী, যার মধ্যে তিন জনই বিক্ষুব্ধ তৃণমূল। বোর্ড গড়তে হলে এঁদের পাশে পেতেই হবে। তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, “নির্দলরা ফের আমাদের দলে ফিরে আসবেন। ওই সব পঞ্চায়েতে আমরাই বোর্ড গড়ব।”
তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রভাব ফেলেছে উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা ব্লকের কয়েকটি পঞ্চায়েতের ফলে। স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ মন্ত্রী উপেন বিশ্বাসের অনুগামীদের সঙ্গে বাগদা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও তরুণ ঘোষের শিবিরের দ্বন্দ্বের জেরে হেলেঞ্চা পঞ্চায়েতে তৃণমূল পেয়েছে ৫টি আসন, নির্দল তথা বিক্ষুব্ধরা পেয়েছেন ৪টি এবং ৮টি আসন দখল করে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে সিপিএম। হুগলির আরামবাগ ব্লকের মলয়পুর-২ পঞ্চায়েতে ১২টি-র মধ্যে ৭টি আসন পেয়েছেন নির্দলরাই। তৃণমূল পেয়েছে মোটে ৫টি।
বাঁকুড়ার পাত্রসায়র ব্লকের বীরসিংহ গ্রাম পঞ্চায়েত গত বার সিপিএমের দখলে ছিল। সিপিএম এ বার সেখানে প্রার্থী দিতে পারেনি। ওই পঞ্চায়েতের ৯টি আসনের মধ্যে ৬টিতে জিতেছেন বিক্ষুব্ধ নির্দলরা। একটি করে আসন পেয়েছে তৃণমূল ও বিজেপি। বিষ্ণুপুরের দ্বারিকা-গোঁসাইপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে ১২টি আসনের মধ্যে ৭টিতেই জিতে বোর্ড গঠন করতে চলেছেন নির্দলরা।
মুর্শিদাবাদের সুতি-২ ব্লকের অরঙ্গাবাদ-২ পঞ্চায়েতে ১৫টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ নির্দল প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন ৫টি আসনে। কংগ্রেস ৬টি এবং সিপিএম ৪টি আসন পেয়েছে। অরঙ্গাবাদ-১ পঞ্চায়েতে ১০টি আসনের মধ্যে নির্দল পেয়েছে ২টি। ২টি কংগ্রেস এবং ৬টি সিপিএম পেয়েছে। বাজিতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৮টি আসনের মধ্যে নির্দল পেয়েছে ২টি, কংগ্রেস ৯টি, সিপিএম ৪টি। ওই পঞ্চায়েতে তৃণমূল পেয়েছে ৩টি আসন। মহেশইল-১ পঞ্চায়েতে ১৭টি আসনের মধ্যে ১টি পেয়েছে তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ নির্দল। কংগ্রেস ৭টি, সিপিএম ৬টি ও তৃণমূল ৩টি আসনে জিতেছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.