থানায় আটক এক তৃণমূল কর্মীকে পিটিয়ে মারার অভিযোগকে ঘিরে শনিবার দিনভর উত্তাল হল ধনেখালি।
ক্ষিপ্ত জনতা থানার একাংশ এবং পুলিশের বেশ কিছু গাড়ি ও মোটরবাইকে ভাঙচুর চালায়। ইট ছোড়ে। বোমা পড়ে। অবরোধ করা হয় রাস্তা। জনা বারো পুলিশকর্মী জখম হন। শেষমেশ লাঠি চালিয়ে, কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ। সন্ধ্যায়
রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে ফের একপ্রস্ত বিক্ষোভ হয়।
মৃত ওই তৃণমূল কর্মীর নাম কাজি নাসিরুদ্দিন ওরফে নাসু (৩৬)। বাড়ি জয়রামবাটি গ্রামে। শনিবার ধনেখালি থানা সূত্রের দাবি, আগের রাতে ওই যুবকই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় পুলিশকর্মীদের মারধর করেন বলে তাঁকে আটক করা হয়। থানায় অসুস্থ বোধ করায় ধনেখালি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী অবশ্য জানিয়েছেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর)-কে ওই যুবকের মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত করতে বলা হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী মৃতের পরিবারের লোকজনের উপস্থিতিতে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে এ দিন দেহের ময়না-তদন্ত করা হয়েছে। পুরো ময়না-তদন্তের ভিডিওগ্রাফিও হয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, মৃতের বুকে এবং মুখে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে প্রাথমিক রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন ম্যাজিস্ট্রেট সুপর্ণা সিংহ। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী ‘হার্টফেল’ করে মারা গিয়েছেন যুবক। |
শুক্রবার রাত ৯টা নাগাদ স্থানীয় মদনমোহনতলায় নিজের সদ্য কেনা ছোট ট্রাকের কাজ করাতে গিয়েছিলেন নাসিরুদ্দিন। সেখানে রাস্তার ধারে গাড়ি রাখা নিয়ে তাঁর সঙ্গে পুলিশকর্মীদের বচসার জেরে তাঁকে আটক করা হয়। শনিবার ভোরে নাসিরুদ্দিনের মৃত্যুর খবর ছড়াতেই কয়েকশো গ্রামবাসী ধনেখালি থানা ঘেরাও করেন।
দুপুরে মৃতের স্ত্রী মানুজা বিবি ধনেখালি থানায় ‘পুলিশের মারে স্বামীর মৃত্যু হয়েছে’, এই মর্মে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। নিজেকে শুক্রবারের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বলে দাবি করে সব্জি ব্যবসায়ী সরস্বতী যাদব বলেন, “পুলিশ নাসিরুদ্দিনকে মদনমোহনতলা থেকে মারতে মারতে থানায় নিয়ে যায়।” মৃতের দাদা মহম্মদ হারুনউদ্দিনের ক্ষোভ, “হাসপাতালে গিয়ে দেখি ভাইয়ের অর্ধনগ্ন দেহ পড়ে আছে। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ আমাদেরই মারে।”
নাসিরুদ্দিনের মৃত্যু ঘিরে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের প্রতিবাদের চেয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই সামনে চলে এসেছে। রাত পর্যন্ত জেলা তৃণমূলের কোনও নেতানেত্রীকেই নাসিরুদ্দিনের বাড়িতে দেখা যায়নি। জেলা তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, নাসিরুদ্দিন সপ্তগ্রামের বিধায়ক তথা দলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্তের ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
দলীয় রাজনীতির সমীকরণে ধনেখালির বিধায়ক অসীমা পাত্র তপনবাবুর ‘বিরোধী গোষ্ঠী’র লোক হিসেবেই পরিচিত। সেই হিসেবে নাসিরুদ্দিনও অসীমার ‘বিরোধী শিবির’-এর লোক ছিলেন। নাসিরুদ্দিনের স্ত্রী বলেন, “দলে রেষারেষিতেই পুলিশ স্বামীকে তুলে এনে বেধড়ক মেরেছে।” একই অভিমত গ্রামবাসীদের একাংশেরও। সন্ধ্যায় ফোনে যোগাযোগ করা হলে অসীমাদেবী বলেন, “যে কোনও মৃত্যুই দুঃখের। আমি বাইরে আছি। পরে ওখানে যাব।” তপনবাবু বলেন, “নাসিরুদ্দিন দলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট না দেখে মন্তব্য করব না। আইন আইনের পথেই চলবে।” |