ভাঙড় কাণ্ডে কোমরের হাড়ে চিড় ধরেছে রেজ্জাক মোল্লার। তাঁর শিরদাঁড়ার চোটই আপাতত ব্যাকফুটে থাকা সিপিএমের মেরুদণ্ডে বাড়তি জোর জোগাচ্ছে।
এক দিকে তৃণমূলের ‘তাজা নেতা’ আরাবুল ইসলাম গ্রেফতার হওয়ায় তৃণমূল সরকার ব্যাকফুটে। অন্য দিকে ‘চাষির ব্যাটা’ রেজ্জাক সৌজন্যের ফাঁসে অনেকটাই বাঁধা পড়ে গিয়েছেন দলের কাছে। সি পি এম-এর শীর্ষ নেতারা পালা করে প্রতিদিন তাঁকে দেখতে যাচ্ছেন হাসপাতালে। ফলে তাঁদের বিরুদ্ধে কটু মন্তব্য করা থেকে আপাতত সংযত থাকতে হচ্ছে রেজ্জাককে। দুইয়ে মিলিয়ে, পঞ্চায়েত ভোটের আগে এখন ‘অ্যাডভান্টেজ আলিমুদ্দিন’।
ভাঙড়ের ঘটনার পর প্রচারের আলোর অনেকটা তাঁর উপর এলেও, রেজ্জাক কিছুটা প্যাঁচে পড়ে গিয়েছেন সন্দেহ নেই। বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই তিনি সরাসরি রাজ্য নেতাদের এড়িয়ে চলছিলেন। রাজ্য কমিটির বৈঠকে যাওয়াও প্রায় ছেড়ে দেন। নাম না-করে বুদ্ধ-নিরুপমদের প্রতি কটাক্ষ তো ছিলই। মাস তিন আগে বারুইপুরে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সদর অফিসে বুদ্ধবাবুর কর্মিসভাতেও যাননি রেজ্জাক। একের পর এক এই ধরনের ‘বিদ্রোহ’ প্রকাশ্যে এসে যাওয়ায় আলিমুদ্দিনের নেতারা অস্বস্তিতে পড়ছিলেন। বুদ্ধবাবুর বৈঠকে গরহাজির হওয়ায় রেজ্জাকের বিরুদ্ধে কোনও কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে, এমন কথাও হাওয়ায় ভাসতে শুরু করেছিল।
কিন্তু নির্বাচনে দলের ভরাডুবির পরে তৃণমূল স্তরের অন্যতম সাংগঠনিক নেতাকে ছোঁয়ার সাহস আলিমুদ্দিনের সম্ভবত হয়নি। এখনও তিনি যে ভাবে নিচুতলার কর্মীদের নিয়ে ‘পাল্টা লড়াই’ দিচ্ছেন, খুব কম নেতাই ততটা সাহস বা ক্ষমতা দেখিয়েছেন। টিভির কল্যাণে নিজের এলাকার বাইরেও যে তাঁর এক ধরনের ‘টিআরপি’ তৈরি হয়েছে, তা বুঝতেও নেতাদের ভুল হয়নি।
এই অবস্থায় রেজ্জাকের হাসপাতালে ‘বন্দি’ হওয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে ভুল হয়নি আলিমুদ্দিনের নেতৃত্বের। বুদ্ধবাবু হামলার পরে দিন দুয়েক কোনও মন্তব্য করেননি, কিন্তু তিনিও পরে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ সরিয়ে রেখে মিছিলে হেঁটেছেন। করেছেন সভা। তিনি কেন হাসপাতালে গেলেন না, তা নিয়ে যখন কথা উঠতে শুরু করেছে, তখন রেজ্জাকের বিছানার ধারে গিয়ে হাজিরও হয়েছেন।
সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের আশা, এর পরে রেজ্জাক আর আগের মতো চাঁছাছোলা ভাষায় তাঁদের নিশানা করতে পারবেন না। সৌজন্যের সেই সীমা পার করলে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠবে। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের মতে, “বড় নেতারা সবাই হাসপাতালে ছুটে এসেছেন। বাজার কাঁপিয়ে সভা করেছেন। এর পরে যদি রেজ্জাক তাঁদের কটাক্ষ করেন, সাধারণ মানুষ ও দলীয় কর্মীদের তাঁর প্রতিই বিরূপ ধারণা হবে।” ফলে ভাঙড় কাণ্ডে এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন আলিমুদ্দিনের ম্যানেজারা। কারণ আরাবুল-কাণ্ডে তৃণমূল যে রীতিমতো বিপাকে পড়েছে, তা পরিষ্কার। প্রথমে দল আরাবুলের পাশে থাকলেও, পরে ‘রাজধর্ম’ দেখিয়ে সরে আসতে বাধ্য হয়েছে। আরাবুল স্বয়ং দলকে দায়ী করেছেন তার পাশ থেকে সরে যাওয়ার জন্য। আরাবুলের গ্রেফতারের পর এলাকায় খুব বড় কোনও প্রতিবাদও দেখা যায়নি। ‘তাজা নেতা’ অনেকটাই ম্রিয়মান, পঞ্চায়েত ভোটের আগে তা স্পষ্ট। এখন বিচারাধীন আরাবুল আগে মুক্তি পান, না কি আগে দলের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন রেজ্জাক, সেটাই দেখার। |