হুগলির বেশ কয়েকটি ব্লকের বহু আসনে প্রার্থী দাঁড় করাতে পারল না সিপিএম।
আরামবাগ মহকুমার খানাকুলের ২টি ব্লকে পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের একটি আসনেও মনোনয়ন দাখিল করতে পারেনি তারা। ফলে লোকসভা, বিধানসভার পরে পঞ্চায়েত নির্বাচনেও উলটপুরান ঘটতে চলেছে এই জেলায়। একদা বামদুর্গ হুগলিতে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও অধিকাংশ জায়গায় সিংহভাগ আসন সিপিএমের পকেটে ছিল। বাম-বিরোধীরা বরাবর এখানে নির্বাচনে সিপিএমের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ করে এসেছে। এ বার একই অভিযোগ সিপিএম নেতাদের মুখে।
সিপিএমের অভিযোগ, মারধর করে, ভয় দেখিয়ে প্রার্থীদের বিডিও বা এসডিও অফিসে পৌঁছতে দেয়নি তৃণমূলের লোকজন। তৃণমূলের পাল্টা বক্তব্য, সিপিএমের দীর্ঘ অত্যাচারে তিতিবিরক্ত গ্রামবাসী তাদের হয়ে দাঁড়াতেই চায়নি। গোটা বিষয়টি নিয়ে জেলার রাজনৈতিক মহল সরগরম। তবে সিঙ্গুরের সব ক’টি আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছে সিপিএম। হরিপালে দু’দলের গোলমাল হলেও মহকুমাশাসকের (চন্দননগর) দফতরে সিপিএম প্রার্থীরা মনোনয়ন দেন।
কারণ যাই হোক, হিসেব বলছে খানাকুলের ২টি ব্লক মিলিয়ে ৩৩৭টি পঞ্চায়েত আসন, ৭০টি পঞ্চায়েত সমিতি আসন এবং ৬টি জেলা পরিষদ আসন রয়েছে। এর একটিতেও সিপিএম মনোনয়ন দাখিল করতে পারেনি। আরামবাগে ২২১টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের মধ্যে সিপিএম মনোনয়ন জমা দিয়েছে মাত্র ১৪টিতে। পঞ্চায়েত সমিতির ৪৫টি আসনের মধ্যে তারা মাত্র ২টি আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছে। পুড়শুড়ায় ১৩৮টি পঞ্চায়েত আসনের মধ্যে সিপিএম সাকুল্যে ১৩টিতে মনোনয়ন দিয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষেত্রে ২৮টি আসনের মধ্যে সিপিএমের জমা দেওয়া মনোনয়নের সংখ্যা ৬। আরামবাগ এবং পুড়শুড়া দু’জায়গাতেই অবশ্য জেলা পরিষদের তিনটি করে আসনে প্রার্থী দিয়েছে সিপিএম।
অনেকটা একই অবস্থা সদর ব্লকের ধনেখালিতেও। এখানে এক চতুর্থাংশ আসনে মনোনয়ন দিতে পেরেছে সিপিএম। তবে এই মহকুমার অন্যান্য ব্লকে সিপিএম মোটামুটি ভাবে সব আসনেই প্রার্থী দিয়েছে। শ্রীরামপুর মহকুমার জাঙ্গিপাড়া ব্লকে অবশ্য সিপিএমের করুণ অবস্থা। এখানে ১৭৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে সিপিএম প্রার্থী দিতে পেরেছে ৩৩টিতে। পঞ্চায়েত সমিতির ৩০টি আসনের মধ্যে ৩টিতে মনোনয়ন জমা করেছে তারা। তারকেশ্বরেও দুই তৃতীয়াংশ আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি সিপিএম। সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, মঙ্গলবার রাতে আরামবাগে দলের জোনাল অফিসে তৃণমূল বোমাবাজি করে। ৭ জন আহত হন। গত কয়েক দিন ধরে তারকেশ্বরে দলীয় প্রার্থী এবং কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তৃণমূলের লোকজন হুমকি দেয়।
গোটা পরিস্থিতির জন্য শাসক দলের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলছেন জেলা সিপিএম নেতৃত্ব। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরী বলেন, “আমাদের দলের প্রার্থীরা চেষ্টা করেছিলেন। বিডিও অফিস ওরা ঘিরে রেখেছিল। আরামবাগে এসডিও অফিসে আসার রাস্তাতেও ওরা জমায়েত রেখেছিল। আমাদের প্রার্থীরা আতঙ্কে সেখানে পৌঁছতেই পারেনি।”
যদিও পুরো বিষয়টিকেই সিপিএমের কৌশল হিসেবে দেখছেন খানাকুলের বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা শৈলেন সিংহ। তিনি বলেন, “শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই ওরা ছলনার আশ্রয় নিচ্ছে। গোঘাট থেকে বহু সিপিএম প্রার্থী আরামবাগে এসডিও অফিসে এসে মনোনয়ন জমা দিল, আর এখান থেকে পারল না? এখানে সন্ত্রাস কে করেছে? পুলিশের কাছে ক’টা অভিযোগ ওরা জমা করেছে।” তৃণমূল নেতা সমীর ভান্ডারি নিজে গোঘাট থেকে জেলা পরিষদের প্রার্থী। তিনি বলেন, “আরামবাগকে সন্ত্রাসের কেন্দ্র করে তুলেছিল সিপিএম। এ বার সেখানে শান্তিতে গোটা প্রক্রিয়া চলছে।” অতীতের প্রসঙ্গ টেনে এনে শৈলেনবাবু বলেন, “গত নির্বাচনেও আমি প্রার্থী হয়েছিলাম। একটার পর একটা ভোটে শূন্য ভোট পেয়েছিলাম। এটা কি সম্ভব? আসলে সিপিএমের দীর্ঘ সন্ত্রাস খানাকুল ভোলেনি। তাই ওরা প্রার্থী খুঁজে পায়নি।” আরামবাগের এক পুলিশকর্তা বলেন, “খানাকুলের সর্বত্র পর্যাপ্ত পুলিশি ব্যবস্থা ছিল। সড়কপথে কোনও রাজনৈতিক দলের জমায়েত ছিল না। আমাদের কাছে না হোক, নির্বাচন কমিশনের কাছেও তো কেউ অভিযোগ করেনি।”
আরামবাগে অতীতেও পঞ্চায়েত ভোটে দেখা গিয়েছে, তত্ঞকালীন বিরোধী তৃণমূল বা কংগ্রেস প্রায় ৯৫ শতাংশ আসনে মনোনয়ন দিতে পারেনি। হাতে গোনা যে ক’টি ক্ষেত্রে তা দেওয়া হয়েছিল, সেখানেও প্রার্থিপদ তুলতে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ। ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই মহকুমাতেই সিপিএমের অনিল বসু রেকর্ড (প্রায় ৬ লক্ষ) ভোটে জয়ী হন। |