মনোনয়ন জমা শেষ, শক্তিগড়ে মিলল সিপিএমের অস্ত্র
সব আসনে প্রার্থী নেই বামফ্রন্টের
বিক্ষিপ্ত অশান্তির মধ্যেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর্ব শেষ হল বুধবার। কিন্তু একদা ‘লালদুর্গ’ বর্ধমানে সব আসনে প্রার্থী দিতে পারল না বামফ্রন্ট।
শেষ দিনেও অস্ত্র উদ্ধার হল শক্তিগড়ে। গ্রেফতার হলেন এক সিটু কর্মী। বারাবনিতে দুই কংগ্রেস প্রার্থী এবং গুসকরায় এক সিপিএম নেতাকে মারধরের অভিযোগও উঠেছে। যদিও গুসকরার ঘটনায় রাত পর্যন্ত পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়নি।
গত ২৯ মে মনোনয়নপত্র তোলা ও জমা শুরু হওয়া ইস্তক অশান্ত হয়ে উঠেছিল বর্ধমান। গ্রামীণ থেকে শিল্পাঞ্চল, কোনও এলাকাই বাদ যায়নি। বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের প্রার্থীদের বাধা দেওয়া ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে। বড়শূলে জমায়েত করে মনোনয়ন জমা করতে গিয়ে অস্ত্র-সহ গ্রেফতার হয়েছেন সিপিএম কর্মীরা। এই নির্বাচনের প্রথম বলিও রানিগঞ্জের তৃণমূল কর্মী মাধাই বাউরি, মঙ্গলবার রানিগঞ্জের খনিতে যাঁর দেহ মেলে। অর্থাৎ, সলতে পাকানোর পর্ব থেকেই তেতে উঠেছে জেলার বিভিন্ন এলাকা। আগামী সোমবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের আগে যার আরও নজির মেলার সম্ভাবনা।
মিলেছে বোমাও। ধৃত সিটু কর্মী জহুর আলম।
ভোট ঘোষণার অনেক আগে থেকেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে লাগাতার সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে আসছিল সিপিএম এবং কংগ্রেস। যদিও সিপিএমের বিরুদ্ধেও হামলার বেশ কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে ১১৮৭১, পঞ্চায়েত সমিতিতে ২৩৬০ এবং জেলা পরিষদের জন্য মোট ৪৭৪টি মনোনয়ন জমা পড়েছে। সন্ত্রাসের কারণেই হোক বা যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ার কারণে, গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৪৮টি আসনে এবং পঞ্চায়েত সমিতির ২৫টি আসনে কেবল মাত্র তৃণমূলই প্রার্থী দিয়েছে। ওই ২৪৮টি আসনের মধ্যে শুধু কেতুগ্রামে-১ ব্লকেই ৫৬টি এবং রায়না-২ ব্লকের ৮৪টি আসন রয়েছে। তবে সব আসনের বিশদ তথ্য রাত পর্যন্ত মেলেনি। কাল, শুক্রবার স্ক্রটিনিতে মনোনয়ন বাতিল না হলে ওই সব আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই জিতবে শাসকদল।
শেষ দিনেও মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার পথে দুই কংগ্রেস প্রার্থীকে মারধর করে মনোনয়নপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বর্ধমান জেলা কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক চণ্ডী চট্টোপাধ্যায় মহকুমাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, জেলা পরিষদের মনোনয়ন জমা দিতে দুপুর দেড়টা নাগাদ বারাবনি থেকে আসানসোলে মহকুমাশাসকের দফতরে যাচ্ছিলেন তাঁদের প্রার্থী মুরলীধর মণ্ডল। আসানসোলের সেন র্যালে রোডে কয়েক জন তাঁর মোটরবাইক আটকায়। তাঁকে মারধর করে মনোনয়নপত্র ছিনিয়ে ছিঁড়ে ফেলা হয়। মোবাইল ফোনও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ভেঙে দেওয়া হয়েছে মোটরবাইক। আসানসোলে গেলে তাঁকে প্রাণে মারার হুমকিও দেওয়া হয়। এই ঘটনার পর থেকে তাঁর আর খোঁজ মিলছে না। তৃণমূলের বারাবনি ব্লকের নেতা পাপ্পু উপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেন, এই ঘটনায় তাঁদের কেউ জড়িত নয়। বরং এটা কংগ্রেসেরই অন্তর্দ্বন্দ্বের ফল।
শক্তিগড়ে উদ্ধার হওয়া তির-ধনুক।
পরিত্যক্ত চালকলে অস্ত্রের খোঁজে পুলিশের তল্লাশি।
দুপুর আড়াইটে নাগাদ আসানসোল মহকুমাশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকেও এক কংগ্রেস প্রার্থীর মনোনয়নপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পশুপতি মণ্ডল নামে ওই প্রার্থী পানুড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের জন্য মনোনয়ন জমা দিতে এসেছিলেন বলে। আসানসোল মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমার কার্যালয়ে কিছু ঘটলে সিসিটিভি ক্যামেরায় ছবি উঠবে। সেই ছবি দেখেই ব্যবস্থা নেব।”
শক্তিগড় ও লাগোয়া বড়শূলে বেশ কয়েক দিন ধরেই জমায়েত করছিল সিপিএম। গত সোমবার শক্তিগড়ে সিপিএমের সশস্ত্র মিছিল আটকে দেওয়ায় পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। আহত হন এক এএসআই। পুলিশের দাবি, গত আট বছর ধরে পরিত্যক্ত একটি চালকলে সে দিন সিপিএমের প্রায় চার হাজার কর্মী জমায়েত হয়েছিলেন। সেখানেই রান্নাবন্না করে খাওয়া-দাওয়ার পরে অস্ত্র-ভর্তি দু’টি বাস ও একটি ম্যাটাডোরে তাঁরা মনোনয়ন জমা দিতে যান। এ দিন সকালেই শেখ লালন নামে এক সিটু কর্মী তথা চালকলের প্রাক্তন কেয়ারটেকারকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁকে জেরা করেই পুলিশ সব জানতে পারে। দুপুরে ওই চালকলে হানা দিয়ে একটি নাইন এমএম পিস্তল, একটি পাইপগান, পাঁচটি রড, ২৯টি তাজা বোমা, ১৮টি তির ও একটি ধনুক উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ভোজালি, টাঙ্গি, লাঠি ইত্যাদিও ছিল।
মনোনয়ন জমার শেষ দিনে ভিড় বর্ধমান মহকুমাশাসকের অফিসে।
বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা জানান, বর্ধমান-২ ব্লকের নির্বাচন পর্যবেক্ষক নিত্যসুন্দর সঞ্জয় পালের উপস্থিতিতেই পুলিশ ওই চালকলে অভিযান চালিয়েছে। পরিত্যক্ত চালকলের শৌচাগারে অস্ত্র পাওয়া যায়। গোটা অভিযানটি ভিডিওগ্রাফি করে রাখা হয়েছে। বর্ধমান থানার আইসি দিলীপকুমার গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “অস্ত্র রয়েছে এমন সন্দেহ আমাদের ছিলই। শেখ লালন ধরা পড়ার পরেই জেরায় জানান, তিনি অস্ত্র উদ্ধার করে দিতে পারবেন। আমরা আর সময় নষ্ট করতে চাইনি।”
সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদার অবশ্য দাবি করেন, “সে দিন ওই চালকলে আমাদের লোকেরা জমায়েত করেছিলেন ঠিকই। পুলিশের তাড়া খেয়ে কিছু তির-ধনুক, লাঠি ফেলে পালিয়েও থাকতে পারেন। তবে যে সব আগ্নেয়াস্ত্র মিলেছে, তা পুলিশের নিয়ে যাওয়া। আমাদের লোকেদের মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করতে যে ধারাবাহিক ষড়যন্ত্র চলছে, এটা তারই একটা ফলশ্রুতি।” তাঁর দাবি, গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে প্রায় ৮৭ শতাংশ এবং পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে প্রায় ৯২ শতাংশ আসনে তাঁরা প্রার্থী দিয়েছেন। জেলা পরিষদের ৭৫টি আসনের সব ক’টিতেই বামফ্রন্ট প্রার্থী দিয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

ছবি: উদিত সিংহ ও নিজস্ব চিত্র।

এই সংক্রান্ত আরও খবর




পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.