ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রীকে জেলা পরিষদে প্রার্থী করল তৃণমূল। মঙ্গলবার জেলা পরিষদের ৫১ নম্বর আসনে মনোনয়ন দাখিল করলেন মঙ্গলকোটের ইট্যা গ্রামের পিঙ্কি সাহা। সদ্য একুশে পা রাখা পিঙ্কি বলছেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শকে সামনে রেখে প্রার্থী হয়েছি। মানুষের পাশে থাকতে চাই।”
পিঙ্কির বাবা রবীন্দ্রনাথ সাহা তৃণমূলের কর্মী। তিনি ইট্যা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির সম্পাদক। পিঙ্কি তাই রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্যেই বড় হয়েছেন। ২০১০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরে বর্ধমানের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ইলেকট্রনিক্স নিয়ে পড়াশোনা করছেন তিনি। তিন বোনের মধ্যে তিনিই বড়। বাকি দু’জনের এক জন কলেজ ও অন্য জন স্কুল পড়ুয়া।
ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পড়ুয়াদের রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার প্রবণতা বিশেষ দেখা যায় না। ‘কেরিয়ার’-ই যেখানে এই পড়ুয়াদের কাছে শেষ কথা, সেই পরিস্থিতিতে তিনি ভোটে দাঁড়াতে এলেন কেন? সদ্য মনোনয়ন জমা দিয়ে আসা পিঙ্কির উত্তর, “সমাজের প্রতিটি স্তরে ঘুণ ধরে গিয়েছে। রাজনীতিতে না এসে এই ব্যবস্থার পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। তাই আমি এগিয়ে এসেছি। আশা করি, আমাকে দেখে অনেক ভাল পড়ুয়াও রাজনীতিতে আসবে।” |
জেলা পরিষদের ৫১ নম্বর আসনটি তফসিলি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। পূর্ব মঙ্গলকোটের নিগন, ক্ষীরগ্রাম, কৈচর, শিমুলিয়া পঞ্চায়েত এলাকা নিয়ে গঠিত এই আসন। সেখানে সিপিএমের ‘অস্তিত্ব’ বেশ জোরালো। এমন একটি আসনে প্রার্থী হওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেল কি না, সে প্রশ্নে পিঙ্কি বলেন, “সব ক্ষেত্রে জয়-পরাজয়টা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু লড়াইটা করতে হবে।” রাজনীতির পাশাপাশি পড়াশোনাও সমানতালে চালিয়ে যেতে চান তিনি। তাঁর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য চালিয়েও ছবি আঁকা, লেখালেখির কাজ করতে পারছেন। আর আমি পড়াশোনা করতে পারব না, তা হয় না কি!”
পিঙ্কিকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত হল কী ভাবে, সে প্রসঙ্গে স্থানীয় তৃণমূল নেতা দিনু গুপ্ত বলেন, “দলের ব্লক সভাপতি শিক্ষিত মহিলাকে প্রার্থী করার ইচ্ছা প্রকাশ করছিলেন। শুনেছিলাম, পিঙ্কি রাজনীতি ভালবাসে। তাই তার বাবা রবীন্দ্রনাথবাবুকে প্রস্তাব দিয়েছিলাম।” রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব প্রস্তাব দিলে আমি পিঙ্কিকে তা জানাই। সে রাজি হয়েছে। আশা করি, ভেবেচিন্তেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিঙ্কি।” তৃণমূলের মঙ্গলকোট ব্লক সভাপতি অপূর্ব চৌধুরী বলেন, “ছাত্রছাত্রীরা রাজনীতি বিমুখ হয়ে পড়ছে। নানা ক্ষেত্রে রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হচ্ছে। তাই জেলা পরিষদে শিক্ষিত মহিলার খোঁজ করেছিলাম। পিঙ্কি রাজি হওয়ায় কাজটা সহজ হয়ে গেল। এখন আমাদের কাজ পিঙ্কিকে জেতানো।” সিপিএম অবশ্য তৃণমূলের এই ‘চমক’কে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ। দলের মঙ্গলকোট দক্ষিণ-পশ্চিম লোকাল কমিটির সম্পাদক তথা বিধায়ক শাহজাহান চৌধুরীর বক্তব্য, “কে প্রার্থী হল, তা নিয়ে আমরা ভাবছি না। লড়াইটা দলগত।” |