সিপিএম যতই পাল্টা মারের রাস্তায় যাচ্ছে, পঞ্চায়েত ভোটের মুখে বর্ধমান ততই তেতে উঠছে।
সশস্ত্র জমায়েত করে বড়শূলে বর্ধমান-২ ব্লক অফিসে মনোনেয়ন জমা দিতে যাওয়া সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ১৫ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। সোমবারের বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। বাস ও মিনি ট্রাকে করে আসা ওই কর্মী-সমর্থকদের কাছে আগ্নেয়োস্ত্র, টাঙ্গি, লাঠি ছিল বলে পুলিশের দাবি। ধৃতদের মধ্যে স্থানীয় সিপিএম নেতা আবেদ আলি মল্লিক, চঞ্চল প্রধানও ছিলেন। ওই ঘটনার পরে শক্তিগড়ে সিপিএমের পার্টি অফিসের কাছে মেলে তাজা বোমা। একই সঙ্গে সিপিএমের বিরুদ্ধে তাদের কর্মীদের উপরে হামলার অভিযোগও করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। |
স্থানীয় তৃণমূল নেতা গোলাম জার্জিসের অভিযোগ, “বড়শূলের জমায়েত থেকে সিপিএমের লোকজন ফেরার পথে শক্তিগড়ের কাছে কালীতলায় আমাদের দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালায়। তখন আমাদের কিছু কর্মী সেখানে ছিলেন। অফিসে ঢুকে সিপিএমের লোকেরা তাণ্ডব চালায়। আমাদের কর্মীদের মারধর করে। অফিসের সামনে রাখা ১০-১৫টি মোটরবাইকও ভাঙচুর করে।” তৃণমূলের অভিযোহকে সমর্থন করেছে পুলিশও। বর্ধমান থানার আইসি দিলীপকুমার গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “ওই ঘটনার খবর পেয়ে শক্তিগড় ফাঁড়ি থেকে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে যায়। দেখা যায়, তৃণমূলের লোকেদের রাস্তায় ফেলে পেটানো হচ্ছে। বাধা দিতে গিয়ে ফাঁড়ির এক এএসআই প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায় সিপিএমের লোকেদের হাতে আক্রন্ত হন। আহত অবস্থায় তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।” |
সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরাও সিপিএমের আক্রমণের মুখে পড়েন বলে অভিযোগ। কার্যত বড়শূল মোড়ে পুরনো জিটিরোডের পাশে অবরুদ্ধ হয়ে থাকেন পুলিশকর্মী, সংবাদমাধ্যমের লোকজন এবং তৃণমূলের কর্মী সমর্থকেরা। পরে বর্ধমানের আইসি বিশাল পুলিশবাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। খবর পেয়ে চলে আসেন বর্ধমান- ২ ব্লকের পর্যবেক্ষকর এন এস ত্রিবেদী ও প্রশাসনিক ম্যাজিস্ট্রেট শান্তনু পাল। তাঁদের উপস্থিতিতে সিপিএমের শক্তিগড়ের দলীয় কার্যালয় তল্লাশি চালানো হয়। নর্দমার কাছ থেকে একটি প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে জড়ানো ১২টি তাজা বোমা উদ্ধার হয়। ঘটনাস্থলেও বোমা ছোড়া হয়েছিল বলে পুলিশের দাবি।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদার অবশ্য বলেন, “এ দিনের ঘটনার জন্য সম্পূর্ণভাবে পুলিশই দায়ী। চক্রান্ত করে আমাদের লোকেদের আজ মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া হয়নি।” তাঁর দাবি, প্রথমে পুলিশ জানিয়েছিল, বড়শূলে মনোনয়ন দিতে যাওয়ার সময় মিছিল করার দরকার নেই। সিপিএমের প্রার্থীদের নিরাপত্তা দিয়ে পুলিশই ব্লক অফিসে ঢুকিয়ে দেবে। কিন্তু হঠাৎ পুলিশ এ দিন সকালে জানায়, কেবলমাত্র ব্লক অফিসের ২০০ গজের ভিতরেই প্রার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়া হবে। রাস্তায় সেই নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়। অমলবাবুর বক্তব্য, “তাই আমাদের লোকেরা মিছিল করে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। মিছিলে বেশ কিছু আদিবাসী পরিবারের মহিলা ছিলেন। তাঁদের নিরাপত্তা দিতেই এলাকার লোকেরা তির-ধনুক নিয়ে মিছিলের সঙ্গে আসে। কিন্তু, পুলিশ মিছিলটিকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। আবেদ আলি লোকজনকে শান্তিরক্ষার জন্য সরিয়ে দিচ্ছিলেন। তাঁকে আচমকাই গ্রেফতার করে পুলিশ মারধর করে। তার পরে গ্রাম ঢুকে যথেচ্ছ ধরপাকড় চালায়।”
পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেছেন, “এ দিন আউশগ্রাম ও বড়শূলে গোলমালের আশঙ্কায় আমরা রাস্তার উপরে পুলিশভ্যান ও কর্মীদের মোতায়েন করেছিলাম। দু’জায়গাতেই বাইরের গাড়ি তল্লাশি করে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র মিলেছে। বড়শূলে আগ্নেয়াস্ত্র, তির-ধনুক, বল্লম, টাঙ্গি ইত্যাদি মিলেছে। শুধু তৃণমূলের নয়, কংগ্রেসের পার্টি অফিসও ভাঙচুর করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ১৫ জনকে ধরা হয়েছে। আরও কয়েক জনের খোঁজ চলছে।” |