একই রাতে পর পর দু’টি তৃণমূলের দলীয় দফতর অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে মঙ্গলকোটের আবহাওয়া আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠল। রবিবার গভীর রাতে নতুনহাট-গুসকরা রাস্তায় মঙ্গলকোটের কাশেমনগর ও সারঙ্গপুরে তৃণমূলের দলীয় দফতর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কাটোয়া থেকে দমকলের একটি ইঞ্জিন গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এর মধ্যেই সোমবার সিপিএম ও কংগ্রেস কাটোয়া মহকুমাশাসক দফতরে গিয়ে মঙ্গলকোটের বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল করে।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, গুসকরা শহর লাগোয়া সারঙ্গপুর দলীয় দফতরে প্রথম আগুন লাগে। রাস্তার ধারে দরমা ও খড়ের চাল দেওয়া তৃণমূলের দফতর ছিল। দলীয় কর্মীরা আসার আগেই তা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কাশেমনগর বাসস্টপের আগে রাস্তার ধারে খড়ের চাল ও মাটির ঘরে তৃণমূলের দলীয় দফতর ছিল। মঙ্গলকোট ব্লকের তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ চক্রবর্তী বলেন, “ওই দফতরে টিভি-সহ নির্বাচন সংক্রান্ত নথি পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। কর্মীরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় এবং চেষ্টা করেও দলীয় দফতরকে রক্ষা করতে পারেননি।” কাটোয়া থেকে দমকলের একটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু ততক্ষণে সব পুড়ে গিয়েছে। সোমবার বিকেলে তৃণমূলের স্থানীয় জয়ন্ত রায় মঙ্গলকোট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
কাশেমনগর ও সারঙ্গপুর দু’টি গ্রামই পশ্চিম মঙ্গলকোট এলাকায়। এখানকার স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের একাংশ মনে করছেন, সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তৃণমূলের নামধারী কিছু লোক রাতের অন্ধকারে দলীয় দফতর পুড়িয়ে দিয়েছে। দলের এক কর্মী সাইফুল শেখ অভিযোগ করেন, “সিপিএম পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী পাচ্ছে না। গ্রাম থেকে সিপিএম কর্মীরা বের হচ্ছেন না। এ অবস্থায় তৃণমূলের নাম করে থাকা কিছু ব্যক্তি সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমাদের দফতর পুড়িয়েছে।” সাইফুল শেখদের মূলত অভিযোগের আঙুল মূলত পশ্চিম মঙ্গলকোটের লাখুরিয়া অঞ্চলের প্রাক্তন সভাপতি কচন শেখদের দিকে। সোমবার বিকেলে কচন শেখ ওই অভিযোগের কথা শুনে বলেন, “কী রকম অন্যায় কথা! এ রকম মিথ্যা অভিযোগ শুনলে শিশুরাও হাসবে। আমরা সিপিএমের বিরুদ্ধে কত লড়াই করে দলকে প্রতিষ্ঠা করেছি।”
তবে তৃণমূলের মঙ্গলকোট ব্লক সভাপতি অপূর্ব চৌধুরী এ ঘটনার জন্য সিপিএমকেই অভিযুক্ত করেছেন। তাঁর অভিযোগ, “এলাকার মানুষ চাইছে না সিপিএম পঞ্চায়েত নির্বাচনে দাঁড়াক। সিপিএম সে কারণে প্রার্থী পাচ্ছে না। মানুষের নজর ঘোরানের জন্য আমাদের দলীয় দফতর পুড়িয়ে রাতের অন্ধকারে গায়ের জোরে কয়েক জনকে প্রার্থী করার জন্য কাটোয়া নিয়ে গিয়েছে সিপিএম। আর এই ঘটনার মধ্যে গিয়ে বোঝা গেল, সংবাদপত্রে মিথ্যা কথা বলে সিপিএমই সন্ত্রাস করছে।” সিপিএমের ভাগীরথী অজয় জোনাল কমিটির সদস্য সৈয়দ বদরুদ্দোজা অবশ্য বলেন, “আমরা তৃণমূলের ভয়ে নির্বাচনে দাঁড়াতে পারছিনা। সেখানে তৃণমূলের দফতরে আগুন। আমাদের এ রকম মানসিকতা কোনও দিনই ছিল না। আজকেও নেই।” সোমবার কাটোয়া মহকুমাশাসক দফতরে মঙ্গলকোট থেকে দু’শোর উপরে মনোনয়ন জমা পড়েছে। সিপিএম ছাড়াও কংগ্রেস এবং বিজেপি মনোনয়ন জমা দিয়েছে। সিপিএমের হয়ে পশ্চিম মঙ্গলকোট থেকে বেশ কয়েক জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েক জন সিপিএমের প্রার্থী বলেন, “পশ্চিম মঙ্গলকোট জুড়ে সকাল থেকে পুলিশের টহল রয়েছে। আমরা আলাদা ভাবে বাসে চেপে সোজা কাটোয়া চলে এসেছি।” মঙ্গলকোটের ওসি দীপঙ্কর সরকার বলেন, “নিরাপত্তার খাতিরে আমরা সব রকম ব্যবস্থা নিয়েছি।” |