কেউ হতে চায় ডাক্তার, কারও ইচ্ছে গবেষণা করার। আর এই ইচ্ছেগুলোয় ডানা জুড়েছে উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্ট।
এ বারের উচ্চ মাধ্যমিকে বর্ধমান শহরের চার ছেলেমেয়ে জায়গা করে নিয়েছে মেধা তালিকায়। বর্ধমান পুরবালিকা বিদ্যালয় থেকে চতুর্থ হয়েছে দিশা মুখোপাধ্যায় আর সপ্তম হয়েছে সায়ন্তনী ঘোষ। মেমারির ভিএম ইনস্টিটিউশন থেকে অষ্টম হয়েছে সৌরভ বৈরাগ্য আর বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুল থেকে দশম হয়েছে শৌর্য মিত্র।বর্ধমান শহরের বাসিন্দা দিশা সকাল থেকে মাঝেমাঝেই চেখ রাখছিল টিভির পর্দায়। সেখান থেকেই নিজের রেজাল্টের খবরটাও পায় সে। দিশা বলে, “প্রথমে তো বিশ্বাসই করতে পারিনি। রেজাল্ট ভাল হবে ভেবেছিলাম, কিন্তু এতটা ভাল হবে স্বপ্নেও ভাবিনি।” তার বাবা দীপঙ্করবাবু একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের কর্মী। আর মা, শর্মিষ্ঠাদেবীর সময় কাটে পরিবারের সকলের সঙ্গে মেয়ের দেখভালে। তাঁরা জানান, দিশার দাদুর প্রভাবেই ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ছেড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে বর্ধমান পুরবালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় দিশা। দিশা জানায়, দাদুর সিদ্ধান্ত কতটা ঠিক ছিল এখন বুঝতে পারছি। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা স্বপ্না সিংহও জানান, ছোটবেলা থেকে দিশাকে দেখেই তাঁরা বুঝেছিলেন বড় হয়ে সে নিশ্চয় ভাল ফল করবে। এখন ৪৭০ পেয়ে স্কুলের সকলের গর্ব সে। তবে সারাদিন মোটেই বইয়ে মুখ গুঁজে কাটায় না দিশা। থ্রিলার সিনেমা, গোয়েন্দা গল্প আর কম্পিউটার ঘেঁটেই চলে যায় দিনের অনেকটা। সাফ বলে, “বেশি পড়তে মোটেও ভাল লাগে না।” তবে বড় হয়ে ডাক্তার হতে চায় সে। তাই উচ্চ মাধ্যমিকের থেকে জয়েন্ট্র প্রস্তুতিতে অনেকটা বেশি সময় দিয়েছে। |
ওই স্কুলেরই আরেক ছাত্রী সায়ন্তনী ঘোষ ৪৬৬ পেয়ে সপ্তম হয়েছে। তার বাবা বৈদ্যনাথ ঘোষ খাজা আনোয়ার শহীদ বের হাইস্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক। মা মায়া ঘোষ গৃহবধু। ভাল রেজাল্ট করার জন্য দিন রাত এক করে খেটেছিল এই মেয়ে। সারা দিনে ১০-১২ ঘণ্টা লেখাপড়া করা তার রুটিন হয়ে গিয়েছিল। সাহায্য করার জন্য ছিলেন ৯’জন গৃহশিক্ষকও। সায়ন্তনী বলে, “ডাক্তার ইঞ্জিনিয়র হওয়ার ইঁদুর দৌড়ে সামিল হতে চাই না। বরং রসায়ন নিয়ে পড়ে গবেষণা করতে চাই আমি।” পড়াশোনার পাশাপাশি গান, নাচ, আবৃত্তিতেও প্রথম সায়ন্তনী। প্রধান শিক্ষিকা স্বপ্নাদেবী বলেন, “ওকে আপনারা অলরাউন্ডার বলতে পারেন। যেমন, লেখাপড়া, তেমনি গানের গলা ওর। আঁকাতেও অবশ্য কম যায় না।” স্কুলের দুই ছাত্রীর ফলে খুশি ওই দিদিমনি এ দিন যাঁকে পেয়েছেন তাঁকেই মিষ্টিমুখ করিয়েছেন। এসবের পাশাপাশি আরেকটা জিনিসও সায়ন্তনীর খুব প্রিয়। টিভিতে ফুটচবল ম্যাচ চললে আর তাকে পায় কে। আর একটা সময়েও টিভি ছাড়তে পারেনা সে, যখন তার প্রিয় নায়ক আমির খানকে দেখা যায় পর্দায়। |
সাফল্যের আলোয় রয়েছে মেমারির ভিএম ইন্সটিটিউশনের ইউনিট ১ এর ছাত্র সৌরভ বৈরাগ্যও। ৪৬৫ পেয়ে অষ্টম হওয়ার পর থেকেই তাকে নিয়ে টানাপোড়েন চলছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের। ২০১১ সালে মাধ্যমিকেও তৃতীয় হয়েছিল সে। স্কুলেও কোনওদিন দ্বিতীয় হয়নি সে। ফলে সবারই ভরসা ছিল সে। তাই ফল বেরোনোর পর থেকেই দেবীপুরে তার বাড়িতে লোকের আনাগোনা চলছেই। সৌরভের বাবা তরুণবাবু গৃহনির্মাণ সামগ্রী সরবরাহের ব্যবসা করেন। পড়ার পাশাপাশি সময় পেলেই রবীন্দ্রনাথ আর বিভূতিভূষণকে সঙ্গী করা সে। খেলতে ভালবাসে ফুটবল, ক্রিকেটও। ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে নিয়ে মেডিক্যালের সর্বভারতীয় জয়েন্টেও বসেছে সৌরভ।
বর্ধমানের রাজবাটির বাসিন্দা আরেক ছাত্র শৌর্যের বাড়িতেও খুশির আবহাওয়া। তার বাবা উদয়শঙ্কর মিত্র বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার। উদয়কাননের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারেই থাকেন তাঁরা। তবে উচ্চ মাধ্যমিকে টেস্টের থেকে নম্বর বাড়লেও রেজাল্টে খুব একটা খুশি নয় সে নিজে। শৌর্য বলে, “আরও একটু নম্বর বাড়া উচিত ছিল।” এ বছর জয়েন্টও দিয়েছে সে। তবে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়র নয়, তার ইচ্ছে গণিত নিয়ে গবেষণা করে শিক্ষকতা করার। পড়ার ফাঁকে সময় পেলেই টিভিতে ক্রিকেট দেখতে বসে যায় সে। প্রিয় ক্রিকেটার এমএস ধোনি। এছাড়া ফেলুদা, শার্লক হোমসও তার সমান প্রিয়। আর ভালবাসে অনুপম রায়ের গান শুনতে।
বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল স্কুল থেকে আরও দুই ছাত্রও উচ্চমাধ্যমিকে ভাল ফল করেছে। ৪৬১ পেয়ে দ্বাদশ স্থানে রয়েছে আকাশ সাহা ও ৪৬০ পেয়ে ত্রয়োদশ স্থানে রয়েছে অনুপম রায়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক শম্ভুনাথ চক্রবর্তী বলেন, “এ বার বাংলার নম্বর আমাদের হতাশ করেছে। কেউই প্রায় ৭০-র চেয়ে বেশি পায়নি। পেলে আমাদের ছাত্রদের মেধা তালিকার উপরের দিকে জায়গা হতো।” |