উন্নয়ন ফি নিয়ে বিতর্ক স্কুলে-স্কুলে
ক্লাসঘর তৈরির টাকা আছে। বেঞ্চ-টেবিলের টাকা নেই। শৌচাগার আছে। কিন্তু তা সাফসুতরো করার জন্য জমাদারের অর্থের সংস্থান নেই। স্কুলের প্রয়োজন নিরাপত্তা। যদিও, দরোয়ান নিয়োগ করতে দশ বার ভাবতে হয়।
হুগলির বিভিন্ন স্কুলের হাল এমনটাই। তাই পড়ুয়াদের থেকে উন্নয়ন ফি বাবদ সরকারের নির্ধারিত যে টাকা, তার চাইতে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করতেন প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারা। গত বছর থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া যাবে না বলে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। কিন্তু প্রধান শিক্ষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ওই নির্দেশ মানলে সুষ্ঠু ভাবে স্কুল চালানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট অসুবিধায় পড়বেন তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, বছরে এক বার স্কুলের উন্নয়নে যে টাকা তাঁরা চাইছেন, তার থেকে অনেক বেশ টাকা প্রতি মাসে গৃহশিক্ষকের কাছে গুণে দেন অভিভাবকরা। আর ঐচ্ছিক ভিত্তিতেই চাওয়া হচ্ছে টাকা, সবার উপর চাপও দেওয়া হচ্ছে না। তা হলে আপত্তি কোথায়?
দিন কয়েক আগে উত্তরপাড়ার কয়েকটি সরকারি-সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং পরিচালন সমিতির সম্পাদক এ নিয়ে রীতিমতো বৈঠক করেন। তাঁরা জানান, গত বছর মধ্যশিক্ষা পর্ষদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, এক জন পড়ুয়ার থেকে উন্নয়ন ফি বাবদ ২৪০ টাকার বেশি নেওয়া যাবে না। বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, এই টাকায় সব দিক সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। ভদ্রকালী শ্রী সারদামণি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শুভ্রা সেনগুপ্তের কথায়, স্কুলে নানা অনুষ্ঠান হয়, সেই বাবদ কোনও টাকা আসে না। আর উপর দু’বছর ধরে শিক্ষক বা শিক্ষাকর্মী নিয়োগ হয়নি বলে আংশিক সময়ের শিক্ষকদের দিয়ে কাজ চলছে বহু স্কুলে। শুভ্রাদেবীর স্কুলেই নয়জন শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে। পার্শ্বশিক্ষকদের সাম্মানিক জোগাতেও হিমসিম খেতে হচ্ছে।
স্কুলের শ্রেণিকক্ষ, শৌচাগার বা খেলার মাঠের
রক্ষণাবেক্ষণের জন্য থাকে না বাড়তি বরাদ্দ। ছবি: অনির্বাণ সেন।
বিদ্যালয় শিক্ষা দফতরের ডিরেক্টর রাজেশ সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারব না। সচিবকে জিজ্ঞাসা করুন।” সচিব অর্ণব রায়ের বক্তব্য, “এ নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।” হরিপাল ব্লকের একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অভিজ্ঞতা, “নিজের মেয়েকে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়েছিলাম সিঙ্গুরের একটি স্কুলে। কিন্তু সেখানে শৌচাগারের দশা দেখে মেয়ে আর ওই স্কুলে পড়তে চায়নি। ওকে অন্য স্কুলে ভর্তি করাই।” হরিপালের জামাইবাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সন্দীপ সিংহ বলেন, “সর্বশিক্ষা মিশন শ্রেণিকক্ষ তৈরির টাকা দেয়। কিন্তু বেঞ্চ তৈরির টাকা দেয় না। এই খরচ স্কুল কোথা থেকে যোগাড় করবে!” এই স্কুলে শিক্ষকরা একটি তহবিল করেছেন। সেই টাকা শিক্ষকদের শৌচাগার পরিস্কার করতে বা ছোটখাট অনুষ্ঠানে ব্যয় করা হয়।
অতিরিক্ত ফি নেওয়ার ব্যাপারে হুগলি জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবশ্য বক্তব্য, “দেশের শিক্ষার অধিকার আইনে নির্দেশিত পরিমাণ টাকাই সব স্কুলকে নিতে হবে। বেশি নেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে স্কুলগুলি আয়-ব্যয়ের হিসেব দেখিয়ে কেন্দ্র বা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী অথবা কমিশনারের কাছে আবেদন করতে পারে।”
কিছু দিন আগে ‘উন্নয়ন ফি’ বাবদ বরাদ্দের চাইতে বেশি টাকা নেওয়াকে কেন্দ্র করে গোলমাল হয় উত্তরপাড়া অমরেন্দ্র বিদ্যাপীঠে (বালিকা)। অভিভাবকদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা থামাতে পুলিশকে আসতে হয়। গোলমালে প্রধান শিক্ষিকা সরযূ কোনার অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্বপনবাবুর জানান, তদন্তে গিয়ে দেখা গিয়েছে ওই স্কুল বেশি টাকা নিচ্ছিল। বাড়তি টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে। সরযূদেবী বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের ভালর জন্যই তো ওই টাকা ব্যয় করা হত। অনেক অভিভাবকই তা দিয়েছিলেনও। কিন্তু যা করা হচ্ছে, তাতে সব দিক সামলানো মুশকিল।”
প্রধান শিক্ষকদের দাবি, সুষ্ঠু ভাবে স্কুল পরিচালনার জন্য উন্নয়ন ফি বাবদ নির্দিষ্ট টাকার কিছু বেশি টাকা নেওয়া দীর্ঘ দিনের রীতি। তবে, এ নিয়ে সাধারণত অভিভাবকরা কোনও অভিযোগ করেন না। বরং ছেলেমেয়েদের আরও একটু উন্নত পরিষেবার কথা ভেবে তাঁরা সেই টাকা দিয়ে দেন। উত্তরপাড়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা বিনতা কুণ্ডু, অমরেন্দ্র বিদ্যাপীঠ (বালক)-এর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অভিজিত্‌ পাল, কোতরং ভুপেন্দ্র স্মৃতি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ সেনদের মতো অনেকেরই বক্তব্য, পর্ষদের বেধে দেওয়া টাকার থেকে বেশি না নিলে সুষ্ঠু ও স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে স্কুল চালানো সম্ভব নয়।
আরামবাগ উচ্চ বিদ্যালয়ের (বালক) প্রধান শিক্ষক অশোক বৈরাগী-র মতো কেউ কেউ অবশ্য বর্তমান ফি-কেই যথেষ্ট মনে করেন। “উন্নয়ন ফি অনেকটাই বেড়েছে। নির্দেশিকা মেনে ওই টাকাই নিচ্ছি। প্রয়োজন অনুসারে খরচ কমানোর দিকে নজর দিচ্ছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.