পাশাপাশি দু’টি বিধানসভা কেন্দ্র। পাঁচলা এবং সাঁকরাইল। দু’টি কেন্দ্রই হাওড়া গ্রামীণ এলাকায়। মানুষের পেশাগত মিলও আছে। দু’টি কেন্দ্রেরই অর্থনীতির মূলকেন্দ্রে রয়েছে জরি শিল্প। দু’টি কেন্দ্রেই সংখ্যালঘু ভোটারের সংখ্যা অনেক বেশি। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাম প্রার্থীদের হারিয়ে দু’জায়গাতেই তৃণমূল জয়ী হয়েছিল বিপুল ভোটে। কিন্তু হাওড়া লোকসভা নির্বাচনের ফলে দু’টি বিধানসভা কেন্দ্রে দেখা গেল পৃথক ছবি। পাঁচলায় তৃণমূল প্রায় ১০ হাজার ভোটে সিপিএমের থেকে এগিয়ে গেলেও সাঁকরাইলে তারা পিছিয়ে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার ভোটে।
একই যাত্রায় পৃথক ফল হল কেন?
বিষয়টি ধোঁয়াশায় ফেলেছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বকে। একই সঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা। জেলার রাজনৈতিক মহলের অনুমান, হাওড়া জেলায় যে সব বিধানসভা কেন্দ্রে ২০১১ সালের নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থীরা কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে জিতেছিলেন, তার মধ্যে সাঁকরাইলেই কংগ্রেসের ক্ষমতা অনেক বেশি ছিল। হাওড়া জেলা কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, দলের অন্তত ৩২ হাজার ভোট রয়েছে এই কেন্দ্রে। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী জিতেছিলেন। তাতে কংগ্রেসের অবদান অনেকটা ছিল। জেলা কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, এ বার লোকসভা ভোটে জোট না হওয়ায় তার প্রতিফলন হয়েছে ফলাফলে। বিধানসভা ভিত্তিক নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গিয়েছে, এখানে তৃণমূল ভোট পেয়েছে ৬১ হাজার ৭৩২টি। সিপিএম ভোট পেয়েছে ৬৮ হাজার ৩৩৯টি। কংগ্রেস ভোট পেয়েছে ২০ হাজার ৬০৮টি। এই ফলে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, একা লড়াই করতে গিয়ে তৃণমূল সিপিএমের থেকে পিছিয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের ভোট যদি তারা পেত, তা হলে সিপিএম প্রায় ১২ হাজার ভোটে পিছিয়ে পড়ত। সাঁকরাইলের বিধায়ক শীতল সর্দারও বলেন, “এখানে বেশ কিছু এলাকায় কংগ্রেসের দাপট আছে। সে কারণে আমাদের কিছুটা অসুবিধা হয়েছে এটা ঠিক।” |
অন্য দিকে, পাঁচলায় তৃণমূল একক শক্তিতেই সিপিএমের থেকে এগিয়ে গিয়েছে। এখানে কংগ্রেস ভোটের ফলাফল নিয়ন্ত্রণ করার মতো অবস্থায় যে নেই, তা সাফ বোঝা যাচ্ছে। একক ভাবেই তৃণমূল পেয়েছে ৬৯ হাজার ৬১২টি ভোট। সিপিএম পেয়েছে ৫৯ হাজার ৬৫২টি ভোট। অন্য দিকে, কংগ্রেস পেয়েছে ১৭ হাজার ৬৫৭টি ভোট। এখানে জেতার জন্য তৃণমূলকে কংগ্রেসের উপরে নির্ভর করতে হয়নি।
এ বিষয়ে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব পাশাপাশি এই দু’টি কেন্দ্রকে আগামী দিনের জন্য মডেল হিসাবে ধরছেন। তাঁদের বক্তব্য, সংগঠন শক্তিশালী না করলে অন্য কেন্দ্রগুলিতেও দলের পরিণতি হবে সাঁকরাইলের মতো। মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নমূলক কাজকর্মগুলিকে অবলম্বন করেই যে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে সে কথাও জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।
জেলা তৃণমূলের এক নেতা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী পাঁচলা জুড়ে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। সেগুলি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে সফল হয়েছেন পাঁচলার তৃণমূল নেতারা। এর মাধ্যমে মানুষের কাছে দলের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে বিধানসভা নির্বাচনে জিতলেও পরবর্তী কালে দলকে নিজের পায়ে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। অন্য দিকে, সাঁকরাইলে তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা সেই কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নমূলক কাজের খতিয়ান সাধারণ মানুষের মধ্যে তুলে ধরতে তাঁরা পারেননি। বিধানসভা নির্বাচনে দলের যে অবস্থা ছিল গত দু’বছরে সেখান থেকে যে কোনও উত্তরণ ঘটেনি এটা তারই প্রধান কারণ। যদিও সাঁকরাইলের স্থানীয় তৃণমূল নেতারা দাবি করেছেন, সিপিএমের সন্ত্রাসই দলের খারাপ ফলের জন্য দায়ী। জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “সাঁকরাইলের এই ফল আমাদের দলের পক্ষ থেকে প্রত্যাশিত ছিল না। অবশ্যই কারণ খতিয়ে দেখব।”
সাঁকরাইলের এই ফলে উজ্জীবিত সিপিএম। জেলা সিপিএমের এক নেতা বলেন, “মানুষ যে তৃণমূলকে প্রত্যাখান করেছেন তা সাঁকরাইলের ফলেই প্রমাণ। এর সঙ্গে এখানে আমাদের দলের সংগঠনও মজবুত ছিল। পাঁচলায় তৃণমূল যা সন্ত্রাস করেছে, তাতে আমাদের বহু লোক ভোট দিতে পারেননি। না হলে ফল হত সাঁকরাইলের মতোই।” |