গণ্ডগোলের সূত্রপাত হাওড়া সদর লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের দিন থেকেই। সে-দিন দফায় দফায় সংঘর্ষের পরে দু’দিন আপাত-শান্তি বজায় ছিল এলাকায়। কিন্তু বুধবার নির্বাচনের ফল বেরোতেই ফের শুরু হয়ে গেল গোলমাল। দু’দলের সংঘর্ষে চলল ব্যাপক বোমাবাজি, ভাঙচুর, লুঠপাট। আক্রান্ত হল পুলিশও। দুপুরে প্রায় এক ঘণ্টা সংঘর্ষ চলে ওই লোকসভা কেন্দ্রের অধীন সাঁকরাইল বিধানসভা ক্ষেত্রের ধুলাগড় মোল্লাপাড়ায়। বিশাল পুলিশবাহিনী ও কমব্যাট ফোর্স পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
২ জুন, উপনির্বাচনের দিন ওই এলাকায় ছাপ্পা ভোটকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের সঙ্গে সিপিএমের সংঘর্ষ বাধে। এক তৃণমূলকর্মীর মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে সিপিএম-কর্মীদের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় আরও চার জন তৃণমূলকর্মী আহত হন।
পুলিশ জানায়, এ দিন ভোটের ফল প্রকাশের পরে, বেলা ২টো নাগাদ ফের শুরু হয় হাঙ্গামা। ওই বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের থেকে ৬,৬০২ ভোট বেশি পেয়েছে সিপিএম। সেই ফলাফলকে কেন্দ্র করেই তৃণমূল-সিপিএম সংঘর্ষ বাধে। বাসিন্দারা জানান, দুপুরে মোল্লাপাড়ার জলার ধারে দু’দলেরই কিছু লোক ভোটের ফল নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিলেন। আচকাই দু’পক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ শুরু হয়। মুহূর্তে দু’দলেরই শতাধিক লোক জড়ো হয়ে যান। বচসা থেকে মারামারি। তার পরেই বোমাবাজি। ভাঙচুর হয় ১০-১২টি বাড়ি। চলে লুঠপাটও। ভয়ে ঘরে ঢুকে দরজা-জানলা বন্ধ করে দেন বাসিন্দারা। শেখ জরিরা বিবি নামে এক মহিলা বলেন, “বাচ্চা কোলে করে পাড়ার মোড়ে জল আনতে গিয়েছিলাম। হঠাৎ দেখলাম, বোম পড়ছে। ভয়ে বাড়ি পালিয়ে এসে দরজায় খিল দিই।”
পুলিশবাহিনী পৌঁছতেই তাদেরও তাক করে ছোড়া হয় বোমা। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে লাঠি চালায় পুলিশ। প্রায় এক ঘণ্টা সংঘর্ষ চলে। কমব্যাট ফোর্স নামানো হয়। গ্রেফতার হয় পাঁচ জন। বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় পুলিশের পিকেট বসানো হয়েছে। থমথমে পরিবেশ। ভয়ে কেউ বিশেষ মুখ খুলতে চাইছেন না। পুরুষেরা বাড়িতে নেই বললেই চলে।
স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক শীতল সর্দার বলেন, “এই বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ের খবর পেয়েই সিপিএম হামলা শুরু করে। বোমা ছোড়ে। মারধর করে। আমাদের ১০ কর্মীর বাড়িও ভাঙচুর করে।” একই সুরে রাজ্যের সেচমন্ত্রী তথা হাওড়ায় নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “গণ্ডগোলের খবর পেয়েই শীতলবাবুকে সাঁকরাইলে যেতে বলি। ওই কেন্দ্রে জিতেছে বলে সিপিএম পায়ে পা দিয়ে ঝামেলা করছে। অন্য জায়গায় অপপ্রচার শুরু করেছে আমাদের বিরুদ্ধে।” পাল্টা অভিযোগ সিপিএমের। তাদের জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার বলেন, “গণনার প্রথম থেকেই ওই কেন্দ্রের ফল আমাদের পক্ষে যাচ্ছিল। পরে আমরা ওখানে জিতে যাই। তা দেখেই তৃণমূল পরিকল্পিত ভাবে সংঘর্ষ বাধায়।” তাঁর অভিযোগ, তৃণমূল নেতৃত্ব পুলিশকে চাপ দিয়ে সিপিএমের কর্মীদের গ্রেফতার করিয়েছেন। কেন পুলিশ তা করল, তাঁরা জানতে চাইবেন বলে জানান বিপ্লববাবু। সিপিএমের নেতৃত্বের অভিযোগ, শুধু সাঁকরাইল নয়। ফল বেরোনোর পরে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা উত্তর হাওড়া, আমতা, বেলুড়-সহ বিভিন্ন জায়গায় সিপিএমের পার্টি অফিস ভাঙচুর এবং নেতা-কর্মীদের মারধর শুরু করেছে। |