গ্রামে স্বস্তি, তৃণমূলকে চিন্তায় রাখল শহর
গ্রামে স্বস্তি, শহরে অস্বস্তি!
হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন এমনই বৈপরীত্যের মুখে দাঁড় করিয়ে দিল তৃণমূলকে।
সামনে যে হেতু পঞ্চায়েত ভোট, তাই সারদা-কাণ্ডের ঝাপটা সামলে হাওড়ার গ্রামীণ এলাকায় দলের সাফল্য আশ্বস্ত করেছে তৃণমূল নেতৃত্বকে। আবার সেই একই হাওড়ার শিল্প ও শহরাঞ্চল বুঝিয়ে দিচ্ছে, প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার হাওয়া বইতে শুরু করেছে। চলতি বছরের নভেম্বরেই হাওড়া পুরসভার ভোট আসছে। তার আগে এই উপনির্বাচনে হাওড়া শহরের ৫০টির মধ্যে ২৬টি ওয়ার্ডে বামেদের তুলনায় পিছিয়ে থাকার তথ্য স্বস্তিতে রাখছে না শাসক দলকে। হাওড়া লোকসভার অধীনে ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে দক্ষিণ হাওড়া থেকে শেষ পর্যন্ত ‘লিড’ পেয়েছেন সিপিএম প্রার্থী শ্রীদীপ ভট্টাচার্যই। রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ রায়ের কেন্দ্র মধ্য হাওড়ায় গত বিধানসভার তুলনায় ‘লিড’ নেমে এসেছে বহু গুণ। বালিতে শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের বিস্তর অভিযোগের পরেও ‘লিড’ দু’হাজারের সামান্য বেশি। উত্তর হাওড়া এবং শিবপুরেও আহামরি কিছু নয়। শহুরে এলাকায় এই বিড়ম্বনার ছবির পাশাপাশি গ্রাম-অধ্যুষিত পাঁচলায় তৃণমূল জিতেছে তুলনায় সহজে। বালির গ্রামাঞ্চলেও ছবি স্বস্তিদায়ক। আবার গ্রামীণ এলাকার মধ্যেও তৃণমূলকে ভাবনায় ফেলেছে সাঁকরাইল। পাঁচলার লাগোয়া এই কেন্দ্রের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং সংখ্যালঘু ভোট ধরে পরিস্থিতি একেবারে একই রকম। অথচ পাঁচলায় জিতেছে তৃণমূল, সাঁকরাইলে সিপিএম!
শাসক দলের নেতা তথা রাজ্যের এক মন্ত্রীর কথায়, “পঞ্চায়েত ভোটের হিসেবে ভাবলে, এই ফল আমাদের জন্য ভাল। কিন্তু শহরের ভোটে আমাদের জন্য অন্য বার্তাও আছে।” হাওড়া জেলারই এক বিধায়কের মতে, “সরকার যে ভাবে চলছে, শহরের মানুষ ভাল ভাবে নিচ্ছেন না। এই ভোট থেকে সেটা উঠে আসছে। তবে গ্রামে এখনও আমাদের বিশেষ চিন্তার কিছু নেই।” ঠিক একই ভাবে এক সময় শহরে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সমর্থন না পেয়েও গ্রামের জোরে রাজ্য চালাত বামফ্রন্ট। হাওড়ার এ বারের ফলের প্রেক্ষিতে কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা মানস ভুঁইয়ারও বিশ্লেষণ, “তৃণমূল নানা অন্যায়-অপকর্ম করছে। মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে এখনও জনমনে একটা নরম মনোভাব আছে। বিশেষত, গ্রামের মানুষের।”
গ্রাম-শহর ভাগাভাগি না-করেও বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বুধবারের ফলের পরে বলেছেন, “তৃণমূলের সরকারের প্রতি মানুষের মোহভঙ্গ ঘটছে। তার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে এই উপনির্বাচনে।” উত্তর হাওড়া ও বালিতে শাসক দল ‘সন্ত্রাস’ না-করলে জিততে পারত না বলেও দাবি করেছেন বিমানবাবু। একই সুরে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, “সন্ত্রাস ও আক্রমণের মুখোমুখি দাঁড়িয়েও মানুষ প্রতিবাদ ব্যক্ত করতে চেয়েছেন। উপনির্বাচনের দিন ৮৩টি বুথে সুষ্ঠু ভোট হতে দিলে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগঠিত ভাবে বাধা না দিলে মানুষ তৃণমূলকে লাল কার্ড দেখাত!”
পঞ্চায়েত ভোটের আগে হাওড়ার ফল দেখে তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য যথেষ্টই সন্তুষ্ট। ব্যতিক্রম সাঁকরাইল। সেখানে গত লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল-কংগ্রেস জোট বামেদের থেকে যথাক্রমে প্রায় ২০ ও ১৮ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল। অথচ এই উপনির্বাচনে শ্রীদীপবাবুর কাছে তৃণমূলের প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় পিছিয়ে গিয়েছেন ৬,৬০২ ভোটে! তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য সাঁকরাইলে সিপিএমের এগিয়ে থাকাকে গুরুত্বই দিতে নারাজ। তাঁর মন্তব্য, “এটা হতেই পারে। একটা সাঁকরাইল নিয়ে সিপিএমের নাচার কিছু নেই! ওখানে কংগ্রেসের নিত্যানন্দবাবুদের (দে) নিজস্ব পকেট রয়েছে।”
পাঁচলা বা বালির গ্রামীণ এলাকায় তৃণমূল শেষ পর্যন্ত এগিয়ে থাকলেও গত লোকসভা বা বিধানসভার তুলনায় ব্যবধান কিছুটা হলেও কমেছে। যদিও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বা দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, উপনির্বাচন বলেই এ বার ভোটের হার গত দু’টি নির্বাচনের চেয়ে কম ছিল। সেখানে ব্যবধান নিয়ে আলাদা করে চিন্তার কিছু নেই।
মমতা-সহ শীর্ষ নেতৃত্ব প্রকাশ্যে সন্তুষ্ট হলেও দলের নেতাদের একাংশ গ্রামীণ এলাকায় কংগ্রেসের ঝুলিতে ভোট পড়ার বহরে প্রমাদ গুণছেন! তৃণমূলের সঙ্গে জোট ভাঙার পরে এ বার উপনির্বাচনে কংগ্রেস সাঁকরাইলে পেয়েছে ২০ হাজারের বেশি ভোট। পাঁচলাতেও প্রায় ১৭ হাজার। কংগ্রেসকে উপেক্ষা করলে পরবর্তী লোকসভা ভোটে কী হবে, তা নিয়ে ভাবনায় আছে তৃণমূলের একাংশ। তৃণমূলের এক সূত্রের ইঙ্গিত, হাওড়ায় শাসক দলের নেতৃত্বেও কিছু রদবদলের কথা ভাবা হচ্ছে। সংগঠন মজবুত করতে উলুবেড়িয়া-দক্ষিণের বিধায়ক পুলক রায়, ডোমজুড়ের বিধায়ক তথা রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়তি দায়িত্ব পেতে পারেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.