তিন দিনের দার্জিলিং সফরে কাল, বুধবার আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, সে কথা ‘মাথায় রেখে’ উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক দুর্নীতি মামলায় তাড়াতাড়ি চার্জশিট দিতে চাইছে দার্জিলিং জেলা পুলিশ। কারণ, গত ফেব্রুয়ারিতে শিলিগুড়ি সফরের সময়ে বিষয়টি জেনে উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই মতো মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ের উদ্যোগে আইনমন্ত্রীর দফতর থেকে সবুজ সঙ্কেতও দেওয়া হয়। ঘটনা হল, তার পরেও পুলিশ সেই মামলার এখনও চার্জশিট আদালতে দাখিল করতে পারেনি। মুখ্যমন্ত্রীর সফরের সঙ্গে ওই ‘তৎপরতা’র কি কোনও যোগ আছে? দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার আনন্দ কুমারের জবাব, “চার্জশিট পেশের আইনি দিক খতিয়ে দেখার প্রক্রিয়া প্রায় সম্পূর্ণ। আশা করছি, মার্চের গোড়াতেই আদালতে চার্জশিট পেশ করা যাবে।” তবে প্রশাসন সূত্রের খবর, আসন্ন সফরে মুখ্যমন্ত্রী ওই বিষয়ে ফের খোঁজ করতে পারেন ভেবেই পুলিশ ‘তৎপর’ হয়েছে। রাজ্য পুলিশের সদর দফতর থেকেও চার্জশিট পেশের প্রক্রিয়ার অগ্রগতি নিয়ে খোঁজখবর করা হচ্ছে।
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, সব ঠিক থাকলে, মুখ্যমন্ত্রী বুধবার দুপুরে বাগডোগরায় নেমে সন্ধ্যায় দার্জিলিঙে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। ওই অনুষ্ঠানেই ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ) গঠনের বিষয়ে নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে তাঁর কী আলোচনা হয়েছে, তা-ও জানাতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। পরদিন তাঁর সান্দাকফু যাওয়ার কথা ছিল। তবে প্রতিকূল আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে তা আপাতত স্থগিত হয়েছে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার কালিম্পঙে থাকার কথা তাঁর। শনিবার মুখ্যমন্ত্রী শিলিগুড়ির বাগডোগরা হয়ে ফিরে যাবেন বলে আপাতত ঠিক রয়েছে।
আসন্ন সফরে আগাগোড়া পাহাড়ে থাকার কথা থাকলেও ওই সময়ে মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মামলার অগ্রগতি নিয়ে খোঁজ নিতে পারেন বলে পুলিশের একটি মহল মনে করছে। সে জন্য গত এক সপ্তাহ ধরে মামলার খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখেন জেলার পুলিশ-কর্তারা। পুলিশ সূত্রের খবর, ২০১০ সালের মার্চ মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অরুণাভ বসু মজুমদার ওই মামলা করেন। ২০১১-এ জুনে ওই মামলার তদন্তকারী অফিসার ডিএসপি সীতারাম সিংহ প্রাক্তন উপাচার্য পীযূষকান্তি সাহা, রেজিস্ট্রার দিলীপ সরকার-সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করার প্রক্রিয়া শুরু করেন। বিধি অনুযায়ী, প্রাক্তন উপাচার্য এবং রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশের জন্য নিয়োগকর্তার অনুমোদন দরকার। ওই অনুমোদন দেওয়া নিয়ে জটিলতা দেখা দেওয়ায় উপাচার্য দ্বারস্থ হন শিক্ষা দফতরের। ঘটনা জেনে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সচিবালয়কে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। তার পরেই আইন দফতর থেকে শিক্ষা দফতরকে লিখিত জানিয়ে দেওয়া হয়, অন্তত দু’টি ধারায় চার্জশিট দেওয়া যেতে পারে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। তার পরেও পুলিশ চার্জশিট দিয়ে উঠতে পারেনি। জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, এই ‘পরিস্থিতি’তে যাতে নতুন সমস্যা না হয়, তাই দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার নিজেই মামলার অগ্রগতির ব্যাপারে উদ্যোগী হন। |