রাজ্য সরকারের একার পক্ষে দার্জিলিংকে ‘সুইজারল্যান্ড’ করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন দেশের পর্যটন বিষয়ক সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান সীতারাম ইয়েচুরি। সোমবার দার্জিলিঙে প্রশাসন, পার্বত্য পরিষদের আধিকারিক, বিধায়ক, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংসদীয় কমিটির প্রতিনিধিরা বৈঠক করেন। কমিটির কাছে পর্যটন, পরিবহণের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সংগঠন কমিটির প্রতিনিধিদের কাছে দাবি-দাওয়া পেশ করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম দার্জিলিংকে ঘিরে রাস্তা, পানীয় জল, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ব্যবস্থার মত পরিকাঠামোগত উন্নয়ন অন্যতম। বৈঠকের পর কমিটির চেয়ারম্যান তথা সিপিএমের রাজ্যসভার ওই সাংসদ বলেন, “আমি কোনও রাজনীতির কথা বলব না। শুধু বলছি কারও একার পক্ষে দার্জিলিংকে সুইজারল্যান্ড করা সম্ভব নয়। সে জন্য কেন্দ্র, রাজ্য মিলিত উদ্যোগের প্রয়োজন। সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। তাহলেই দার্জিলিঙের উন্নয়ন হবে। আমরা বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনছি। সবই কমিটির রিপোর্টে রাখা হবে।” উল্লেখ্য, বিধানসভা ভোটের আগেই থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দার্জিলিং পাহাড়কে সুইজারল্যান্ড এবং কলকাতাকে লন্ডন-এর মত করার প্রতিশ্রুতি দেন। সেই মোতাবেক রাজ্য সরকার কাজ করে চলছে বলেও সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ সফরে এসেও তিনি জানান। সেখানে কেন্দ্রীয় সরকার তো বটেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল-সহ বিভিন্ন পক্ষের সহযোগিতা ছাড়া তা যে সম্ভব নয় সীতারাম ইয়েচুরির এই মন্তব্য যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ বলে পর্যটন ব্যবসায়ীরা অনেকেই মনে করছেন। আজ, মঙ্গলবার কমিটির নয় সদস্যের প্রতিনিধি দল সিকিম যাবে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, এদিনের বৈঠকে মূলত পাহাড়ের রাস্তাঘাটের দুরবস্থার অবস্থা প্রতিনিধিদের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। পরিবহণ, পর্যটনের জড়িত সংস্থার প্রতিনিধিরা সেখানে জানান, এক বছর ধরে ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়ক বন্ধ, মেরামতের জন্য রোহিণী রোড বন্ধ রয়েছে। মিরিক হয়ে ঘুরপথে ছাড়া পাঙ্খাবাড়ি রোডই এক দার্জিলিং যাতায়াতের ভরসা। এর জেরে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ টয়ট্রেনে যাতায়াতও অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া দার্জিলিং, কোচবিহার এবং দার্জিলিং জেলার ক্ষেত্রে ‘অল বেঙ্গল’ পারমিট কার্যকরী না হওয়ার বিষয়টিও কমিটির সদস্যদের জানানো হয়েছে। এসবের জেরে পর্যটন দিনের পর দিন মার খাচ্ছে বলে কমিটির কাছে সংগঠনের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। এদিন ইস্টার্ণ হিমালয়ান ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনে তরফে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল পর্যটন, পরিবহণ বিষয়ক নানা সমস্যার কথা কমিটির সদস্যের সামনে তুলে ধরেন। সংগঠনের সভাপতি সম্রাট সান্যাল, সাধন রায় জানান, রাস্তার দ্রুত সংস্কার, বাগডোগরা বিমানবন্দরে দেশের অন্যপ্রান্তের সঙ্গে আরও যোগাযোগ বাড়ানো, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চালু করা ছাড়াও নাইট ল্যান্ডিং-এর ব্যবস্থা এবং সিকিমে এ রাজ্যের গাড়ি অবাধে চলাচল বিষয়গুলি জানানো হয়েছে। সম্রাটবাবু বলেন, “গত কয়েক বছর ধরে পাহাড়ের আন্দোলন, ভূমিকম্পের জেরে পর্যটন ব্যবসা মার খাচ্ছে। সেই সঙ্গে রয়েছে পরিকাঠামোগত সমস্যা। আমাদের প্রতিনিধিরা কমিটির কাছে আগামী ৫ বছর এই এলাকায় কর ছাড়ের দাবি তুলেছেন।” দার্জিলিঙের বিধায়ক ত্রিলোক দেওয়াল, সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কৃষ্ণ বাহাদুর ছেত্রীর সঙ্গেও সীতারাম ইয়েচুরি কথা বলেন। তাঁর কথায়, “সবাই নানা সমস্যা, সম্ভাবনার কথা বলেছে। এর অধিকাংশই আমার ব্যক্তিগতভাবে জানা রয়েছে। তাও সবই লিখে নিয়েছে। সংসদী কমিটি অবশ্য সমস্ত বিষয় রিপোর্টে উল্লেখ করবে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দিষ্ট দফতরগুলির সঙ্গেও কথা বলব।” দার্জিলিঙের ম্যালের একটি রিসর্টে এদিন বৈঠক হয়েছে। |