‘নকল’ জোগানে বাগড়া, পুলিশকে মারধর |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
সংঘর্ষ ঠেকাতে নয়। পুলিশ গিয়েছিল মাধ্যমিক পরীক্ষায় টোকাটুকির মোকাবিলায়। উত্তর লেখা চিরকুট জোগানে বাধা দিতে গিয়ে পুলিশের কপালে জুটল মারধর। সোমবার, মাধ্যমিকের ইংরেজি পরীক্ষার দিন এই ঘটনা ঘটেছে উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর এলাকার রামগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে থেকে এই ধরনের ৩৪ জন ‘ছাত্রবন্ধু’কে গ্রেফতার করা হয়েছে। বীরভূমের নলহাটিতে একই কারণে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর আটক করা হয়েছে ২৬ জনকে।
উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর এলাকার রামগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে এ দিন পরীক্ষা শুরু হতেই পাঁচিলে উঠে ‘বন্ধু’কে সাহায্য করতে নেমে পড়েছিল এক দঙ্গল ছেলেমেয়ে। টুকরো কাগজে উত্তর লিখে পরীক্ষা হলের জানলা টপকে তা চালান করা হচ্ছিল। বার কয়েক বারণ করার পরে কর্তব্যরত পুলিশকর্মী এক কিশোরীকে ধরতে যান। পাঁচিল থেকে লাফ দিয়ে পালাতে গিয়ে পড়ে গিয়ে আহত হয় মেয়েটি। ছুটে আসে তার সঙ্গীরা। ওই পুলিশকর্মীকে ঘিরে ধরে শুরু হয় মারধর। সোমবার দুপুরে তা নিয়েই নিমেষে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে রামগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় চত্বর। |
|
মরিয়া চেষ্টা। মাধ্যমিক চলাকালীন নলহাটির একটি স্কুলে সোমবার সব্যসাচী ইসলামের তোলা ছবি। |
ইসলামপুর থানার আইসি সমীর পাল বলেন, “ওই পুলিশকর্মীকে উদ্ধার করে ইসলামপুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে দু’জনকে।” উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক পাসাং নরবু ভুটিয়া ঘটনাটিকে লঘু ভাবে নিচ্ছেন না। তিনি জানান, মহকুমাশাসককে তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছে।
অন্যান্য জেলাতেও বেশ কিছু জায়গায় পরীক্ষা কেন্দ্রে ‘নকল’ পাঠানোর চেনা ছবিতে ছেদ পড়েনি। কোথাও স্কুলবাড়ির পাঁচিল কিংবা কার্নিসে উঠে, কোথাও বা পরীক্ষা কেন্দ্রের লাগোয়া উঁচু গাছে চড়ে কিশোর থেকে মাঝবয়সি মহিলা, মাধ্যমিকের দ্বিতীয় দিন ‘নকল’ পৌঁছে দেওয়ার মরিয়া চেষ্টা করে গিয়েছে। পুলিশের তাড়া খেয়ে তারা কখনও দৌড়ে পালিয়েছে ঠিকই, কিন্তু কিছু ক্ষণের মধ্যেই ফিরে এসেছে। মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামের একটি স্কুলে রেন-পাইপ বেয়ে তেতলায় উঠেও ‘নকল’ সরবরাহ করতে দেখা গিয়েছে এক দল কিশোরকে। বীরভূমের নলহাটিতে দেখা গিয়েছে, বাঁশগাছে চড়ে দোতলার জানলা দিয়ে এক পরীক্ষার্থীকে কাগজের টুকরো দিচ্ছে মাঝবয়সি এক মহিলা। |
|
সামনে পুলিশ। তার মাঝেই চলছে টুকলি সরবরাহ। নলহাটির একটি স্কুলে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম। |
মুর্শিদাবাদে খড়গ্রাম, বড়ঞা, সুতি-সহ বেশ কিছু এলাকা থেকে এ ভাবেই পরীক্ষার্থীদের ‘সাহায্য’ করার অভিযোগে ৩৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওই জেলার পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “ইংরেজি পরীক্ষা চলাকালীন নকল জোগাতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছে ৩৪ জন। সেই সঙ্গে খড়গ্রামের নগর এলাকা থেকে এক দোকান-মালিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর ফোটোকপির মেশিন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।”
বীরভূমের নলহাটি থেকে
একই অভিযোগে আটক করা হয়েছে ২৬ জনকে। উত্তর দিনাজপুরেও দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি চৈতালি দত্ত বলেন, “টোকাটুকি ঠেকানোর চেষ্টা হয়েছে বলেই তো মারামারি হয়েছে।” |
|