|
|
|
|
ভিন্নমত বেসরকারি সংস্থা |
ক্ষতিপূরণ নিয়ে বাস-মালিকদের যুক্তি নস্যাৎ মদনের |
অশোক সেনগুপ্ত • কলকাতা |
রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী এক সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থায় কাজ করতেন। আজ, মঙ্গলবারের ধর্মঘটকে বানচাল করতে সেই অভিজ্ঞতাকেই কাজে লাগাচ্ছেন তিনি। তাঁর যুদ্ধ মূলত বেসরকারি বাস, মিনিবাস, ট্যাক্সির বিরুদ্ধে। এই যুদ্ধে মন্ত্রী মদন মিত্র সঙ্গে পেয়ে গিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থার কর্তাদেরও। বেসরকারি বিমা সংস্থাগুলি অবশ্য কিছুটা ভিন্ন সুরেই কথা বলছে।
যে দলই ধর্মঘট ডাকুক না কেন, বেসরকারি বাস-মিনিবাস মালিকেরা সাধারণত রাস্তায় বাস নামান না। বাসমালিকরা সাধারণত যুক্তি দেন, বন্ধের দিন বাস ভাঙচুর হলে বিমা সংস্থা ক্ষতিপূরণের টাকা দেবে না। এ বারও তাঁরা সেই যুক্তিই দিচ্ছেন। কিন্তু নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে মদনবাবু বাস, মিনিবাস, ট্যাক্সি মালিকদের একাংশের যুক্তিকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন।
মদনবাবুর কথায়, “আমি নিজে এই সংস্থার ডিজিএম ছিলাম। আইনটা কারও চেয়ে কম বুঝি না। আর আমি না জেনে কিছু বলিনি। মন্তব্য করার আগে কথা বলে নিয়েছি ন্যাশনাল ইনসিওরেন্সের চেয়ারম্যানের সঙ্গে।” মন্ত্রীর ব্যাখ্যা মেনে ওরিয়েন্টাল ইনসিওরেন্সের আঞ্চলিক ম্যানেজার চাঁদু বসুমাতারি বলেন, “মালিক যদি কম্প্রিহেনসিভ বিমা করান, তবে ধর্মঘটে গাড়ি ভাঙচুর হলে টাকা পাবেন।” ন্যাশনাল ইনসিওরেন্সের ম্যানেজার আলোকবিজয় দত্তও বলেন, “কম্প্রিহেন্সিভ বিমা করানো থাকলে মোটর ভেহিক্যালস আইন অনুযায়ী আমরা ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য।” একই মন্তব্য নিউ ইন্ডিয়া অ্যাসুওরেন্সের ম্যানেজার সোমেন কুমার সাহা-রও। ধর্মঘটের দিন রাস্তায় হামলায় গাড়ির চালক বা আরোহী আহত হলে তাঁরাও বিমার টাকা পাবেন বলে সোমেনবাবু জানান। বিমার শর্তের উপর টাকার পরিমাণ নির্ভর করবে বলে জানিয়েছেন বিমা সংস্থার কর্তারা। অর্থাৎ রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থার কাছে যাদের কম্প্রিহেন্সিভ বিমা করানো রয়েছে, সেই সব বাস, মিনিবাস মালিকদের ক্ষতিপূরণ পেতে সমস্যা হবে না। কিন্তু থার্ড পার্টি বিমা হলে টাকা মিলবে না।
কিন্তু এই কম্প্রিহেন্সিভ বিমার বিষয়টা কী? বিমা কর্তাদের বক্তব্য, কম্প্রিহেন্সিভ বিমার আওতায় গাড়ি চুরি, অগ্নিকাণ্ড, বন্যা, দাঙ্গার মতো ঘটনায় ক্ষতির বিমা করানো হয়। থার্ড পার্টি বিমার তুলনায় এই ক্ষেত্রে প্রিমিয়ামের পরিমাণ অনেকটাই বেশি হয়। |
|
বেসরকারি বিমা সংস্থাগুলি অবশ্য ক্ষতিপূরণের প্রশ্নে ভিন্নমত। এক সংস্থার পদস্থ কর্তা অতীন রায় বলেন, “প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দাঙ্গা, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে কোনও সামরিক কাজ এ সব ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের টাকা মিলবে না, তা বিমাপত্রেই লেখা থাকে। ধর্মঘটে রাস্তায় গাড়ির ক্ষতি হলে তাই ক্ষতিপূরণ মঞ্জুর হয় না।”
বাস মালিকদের বেশির ভাগেরই বিমা রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায়। কিন্তু তাঁরা ক্ষতিপূরণের বিষয়টি জানেন না? জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের যুগ্ম-সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অতীতে বাস-মালিকরা এমন ক্ষেত্রে কখনও বিমা সংস্থার থেকে টাকা পেয়েছেন বলে জানা নেই।” মিনিবাস মালিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অবশেষ দাঁ-র অভিজ্ঞতা, “কয়েক বছর আগে মেটিয়াবুরুজে ধর্মঘটের দিন কয়েকটি মিনিবাস ভাঙচুর হয়। বিমা সংস্থায় আবেদন করলে বলা হয়, দাঙ্গায় গাড়ি রাস্তায় ভাঙচুর হলে টাকা দেওয়া হয় না। সেটাই সত্যি বলে জেনে এসেছি।”
নিয়ম থাকা সত্ত্বেও কেন এত দিন বাস মালিকদের বিমার টাকা দেয়নি রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থাগুলি? ন্যাশনাল ইনসিওরেন্সের পক্ষে তারক চক্রবর্তী বলেন, “বাস-মালিকরা কম্প্রিহেন্সিভ প্যাকেজ না করে কেবল থার্ড পার্টি বিমা করান। কম্প্রিহেন্সিভ প্যাকেজ থাকলে এ রকম ক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই ক্ষতিপূরণের টাকা দিই। সে ক্ষেত্রে, গাড়ি ভাঙচুরের পর থানায় জেনারেল ডায়েরি করতে হবে।”
কেন কম্প্রিহেনসিভ বিমা করান না বাস মালিকেরা? তপনবাবু বলেন, “আমরা কম টাকার প্যাকেজ নিই, এমন ধারণা অমূলক। বাসপিছু বিমার জন্য বছরে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা বরাদ্দ করতে হয়। এজেন্টরা কখনও বিষয়টা স্পষ্ট করে বলেনি।” বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিমল গুহ বলেন, “আগে মালিকরা সাধারণত ট্যাক্সির জন্য থার্ড পার্টি বিমা করাতেন। নতুন ট্যাক্সিগুলির কম্প্রিহেন্সিভ বিমা করানো হচ্ছে।”
এই যুক্তি-তর্কের ফাঁক গলে একটি সত্য সামনে এসেছে। তা হল, যথাযথ বিমা করানো থাকলে বন্ধে ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ মিলবে ঠিকই, কিন্তু বেশির ভাগ বেসরকারি যাত্রিবাহী গাড়িরই বর্তমানে থার্ড পার্টি বিমা করানো রয়েছে। তাই এ বারের বন্ধে কী হবে, তা নিয়ে সংশয়ে তাঁরা। ক্ষতিপূরণ মিলবে বলে মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসেও সংশয় কাটছে না বাস-মিনিবাস-ট্যাক্সি মালিকদের। |
|
|
|
|
|