বারাসতের এক স্কুলছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়াল সোমবার। তানিশা আলি (১৭) নামে একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগ, এ দিন দুপুরে স্কুলের তরফে জানানো হয় তানিশা হস্টেলের সিঁড়ি থেকে পড়ে মারাত্মক জখম হয়েছে। কিন্তু কী ভাবে সে পড়ে গেল, তানিশার মৃত্যুর পর সে ব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনও সদুত্তর দিচ্ছেন না। বরং অসহযোগিতা করা হচ্ছে। স্কুলের তরফে জানানো হয়েছে, এ বিষয়ে কিছু বলার থাকলে তা পুলিশকেই জানানো হবে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ছাত্রীর মুখের বাঁ দিকটি গুরুতর জখম হয়েছিল। রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছিল চোখের তলায়, ঘাড়েও আঘাতের চিহ্ন ছিল। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু হয়েছে। তানিশার দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
বারাসত থানা এলাকার লাঙলপোতার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ত বহরমপুরের বাসিন্দা তানিশা। গত বছরই সে মাধ্যমিক পাশ করে ওই স্কুলে কলা বিভাগে ভর্তি হয়। স্কুলের হস্টেলেই থাকত তানিশা। পুলিশ জানায়, স্কুল কর্তৃপক্ষ সোমবার তানিশার বাবা ওয়াসেফ আলিকে বহরমপুরে ফোন করে জানান, তাঁর মেয়ে সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়েছে এবং তাকে জখম অবস্থায় বাগুইআটির এক নাসিংহোমে ভর্তি করা হয়েছে। ওষুধ ব্যবসায়ী ওয়াসেফ সঙ্গে সঙ্গে খবর দেন তাঁর ভাগ্নি রুমানা হাসানকে। রুমানা কলকাতার বাসিন্দা। নার্সিংহোমে গেলে চিকিৎসকেরা রুমানাকে জানান, তাঁর বোনের মৃত্যু হয়েছে। খবর যায় তানিশার বাড়িতে। রাতেই কলকাতা পৌঁছন আত্মীয়রা।
রুমানা পরে বলেন, “সকালে মামার কাছে স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে যে ফোনটি যায় তাতে শুধু বলা হয় যে তানিশা সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে জখম হয়েছে। বাগুইআটির নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়েছে। তাড়াতাড়ি চলে আসুন। এর পরেই ফোনটা কেটে যায়। নার্সিংহোমে এসে শুনি, বোন মারা গিয়েছে।” স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনও সহযোগিতাই করছে না বলে মৃতার পরিবারের অভিযোগ। তানিশার এক আত্মীয়ের কথায়, “ওরা বলছে তানিশা সিঁড়ি থেকে পড়ে মারা গিয়েছে। কিন্তু এত বড় মেয়ে কী ভাবে হস্টেলের সিঁড়ি থেকে পড়ে গেল, সে ব্যাপারে আমরা অন্ধকারে। বাগুইআটির নার্সিংহোমে স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে শুধু এক জনই এসেছিলেন। তিনিও জানান, সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়েছিল তানিশা।” মৃতার এক আত্মীয় স্কুলে গেলে তাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি, এমনকী স্কুলের অধ্যক্ষও সহযোগিতা করছেন না, এমনই দাবি তানিশার পরিবারের। এ দিন স্কুলের তরফে কয়েক জন শিক্ষিকা বাগুইআটির ওই নার্সিংহোমে এসেছিলেন। যদিও শিক্ষিকারা জানান, ছাত্রীর মৃত্যুর ব্যাপারে বিশেষ কিছু জানেন না। এ ব্যাপারে যা বলার স্কুল কর্তৃপক্ষই বলবে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ জানান, যা বলার পুলিশকে বলবেন। সন্ধ্যায় তানিশার দেহ আনা হয় বাগুইআটি থানায়। সেখানেই ভিড় করেন আত্মীয়রা। উত্তর চব্বিশ পরগনার এসপি চম্পক ভট্টাচার্য বলেন, “খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। কী ভাবে ওই স্কুল ছাত্রীর মৃত্যু হল, তদন্ত চলছে।” |