বেআইনি ‘শব্দবাজি’ তৈরির সময়ে বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে এক ব্যক্তির। মৃতের নাম রামকৃষ্ণ হালদার (৩৭)। সোমবার সকালে বহরমপুর পুর-এলাকার কুঞ্জঘাটা কংসবণিকপাড়ায় ওই ঘটনাটি ঘটে।
ঘটনার পরেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে নিয়ে গিয়ে বহরমপুর নিউ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় গুরুতর জখম হন বেলা কংসবণিক নামে প্রতিবেশী এক মহিলা। তিনি বহরমপুর নিউ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। বিস্ফোরণের অভিঘাতে চিলেকোঠার গ্রিলের জানালা ভেঙে নিচে পড়লে ওই মহিলা জখম হন। সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ ফের ওই বাড়ির চিলেকোঠায় আগুন লেগে যায়। দমকল আগুন আয়ত্তে আনে।
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “ওই ব্যক্তি দীর্ঘ দিন ধরেই গোপনে শব্দবাজি তৈরি করত বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে পোড়া ডায়েরি, বেশ কিছু চকোলেট বোমা, বাজি তৈরির মশলা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।” |
এদিন সকাল ১১টা নাগাদ বিস্ফোরণের বিকট আওয়াজে চমকে ওঠেন পুরসভার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কুঞ্জঘাটা কংসবণিকপাড়ার বাসিন্দারা। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যেচিলেকোঠার ছাদের কংক্রিটের ঢালাই ভেঙে পড়ে। গ্রিল এবং কাঠের জানালা ভেঙে পড়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলর কংগ্রেসের হিরু হালদার বলেন, “শব্দ শোনার পরে এলাকার কয়েক জন যুবককে সঙ্গে নিয়ে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখিচিলেকোঠার সিঁড়িতে রামকৃষ্ণ হালদার রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে। তাঁর সারা শরীর বিস্ফোরণে ঝলসে গিয়েছে। তিন তলার ছাদে পড়ে রয়েছে তাঁর কাটা আঙুল। এর পরে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁকে বহরমপুর নিউ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।”
হাসপাতালে ভর্তির ৪৫ মিনিটের মধ্যেই মারা যান ওই ব্যক্তি। জনবহুল এলাকায় ওই বিস্ফোরণের ঘটনা জানাজানি হতেই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়ায়। খবর চাউর হতেই গোটা এলাকা কংসবণিকপাড়ায় ভিড় করে। রামকৃষ্ণর বাবা করুণাময় হালদার কাদাইয়ের কল্পনা মোড়ের বাজারে মাছ বিক্রি করেন। তাঁর তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে বড় রামকৃষ্ণ। ছোট ছেলে দিল্লিতে শাড়িতে নকশার কাজ করে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
মা শোভা হালদার বলেন, “বছর খানেক আগে চাউমিনের মেশিনে রামকৃষ্ণের কয়েকটা আঙুল কাটা পড়ে। এর পর থেকে এলাকায় কেব্ল লাইনে কাজ করত। কয়েক দিন আগে দেওরের মেয়ের বিয়ে ছিল। ওই বিয়ে উপলক্ষে বাজি-পটকা নিয়ে এসে ওই ঘরে রেখেছিল। ছেলে কোনও দিন বাজির ব্যবসা করেনি।” বহরমপুর থানার আইসি মেহায়মেনুল হক বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরেই ওই ব্যক্তি বাড়িতে গোপনে বাজি তৈরি করছিলেন। তার প্রমাণ ঘটনাস্থল থেকে যে পোড়া ডায়েরি উদ্ধার হয়েছে, তাতে জেলা ও জেলার বাইরে বিভিন্ন জায়গায় বাজি সরবরাহের কথা লেখা রয়েছে। বেশ কিছু বাজি ব্যবসায়ীর নাম ও ফোন নম্বরও ওই ডায়েরি থেকে পাওয়া গিয়েছে। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” |