|
|
|
|
অপহরণ-কাণ্ডে এখনও ধোঁয়াশা |
কিংশুক গুপ্ত • ঝাড়গ্রাম |
ঝাড়গ্রামের পূর্ণাপানির জঙ্গলরাস্তায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে বাস থামিয়ে যাত্রী ‘অপহরণের’ ঘটনা ঘিরে এখনও ধোঁয়াশায় পুলিশ। ‘অপহৃত’ যাত্রীর পরিচয় এখনও জানা যায়নি। পুলিশের ধারণা, ওই যাত্রী স্থানীয় নন। কারণ, ফাঁসিতলা ও আশেপাশের এলাকায় তদন্ত-তল্লাশি চালিয়েও এমন কোনও ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া যায়নি, যিনি নিখোঁজ হয়েছেন। এ ছাড়া বাসটি যে-যে এলাকা হয়ে এসেছিল সেই নয়াগ্রাম ও গোপীবল্লভপুর থানাতেও এখনও পর্যন্ত কেউ নিখোঁজ হয়েছেন বলে ডায়েরি হয়নি। তবে, এক সময়ে মাওবাদী-প্রভাবিত এলাকায় এ ধরনের ঘটনার পিছনে কোনও ব্যক্তিগত বা গুপ্ত-শত্রুতা কাজ করছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা বলেন, “অপহৃতের পরিচয় জানা যায়নি। কারও নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগও দায়ের হয়নি। তদন্ত চলছে।” পুলিশ সূত্রের খবর, বাসের চালক, কনডাক্টর ও খালাসিদের বয়ান অনুযায়ী ‘অপহৃত’ যাত্রী ও ‘অপহরণকারী’ যুবকদের ছবি আঁকানো হবে। এমনিতেই সন্ধের পর ঝাড়গ্রামের একাধিক জঙ্গলরাস্তায় সড়ক-ছিনতাইবাজদের উপদ্রব শুরু হয়। এ বার দিনদুপুরে পূর্ণাপানির ঘটনায় পুলিশের অস্বস্তি বেড়েছে। কারণ পূর্ণাপানি থেকে নয় কিমি দূরে লোধাশুলিতে যৌথ বাহিনীর ক্যাম্প রয়েছে। আবার উল্টোদিকে ফাঁসিতলা ছাড়িয়ে ৮ কিমি দূরের চন্দ্রিতেও রয়েছে যৌথ বাহিনীর ক্যাম্প। এই পরিস্থিতিতে সোমবার ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার ৮টি থানার আইসি এবং ওসিদের নিয়ে ঝাড়গ্রামে ‘ক্রাইম কনফারেন্স’ করেন পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা। যদিও পুলিশের দাবি, এটি ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার প্রথম রুটিন ‘ক্রাইম কনফারেন্স’। বৈঠকে ঝাড়গ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে অফিসারদের নির্দেশ দিয়েছেন এসপি। এসপি-র নির্দেশ, রাস্তাঘাটে নিয়মিত সন্দেহভাজন মোটরবাইক থামিয়ে খানা-তল্লাশ করতে হবে। উপযুক্ত কাগজপত্র সঙ্গে না থাকলে মোটরবাইক বাজেয়াপ্ত করে আরোহীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জঙ্গল রাস্তায় নির্দিষ্ট সময় অন্তর পুলিশ-গাড়ির টহলের ব্যাপারেও বৈঠকে জোর দিয়েছেন পুলিশ সুপার। পূর্ণাপানির ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রতিটি থানাকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন এসপি।
রবিবার পূর্ণাপানির জঙ্গলে বাস থামিয়ে দুষ্কৃতীরা যাঁকে অপহরণ করেছে বলে বাসের চালক ও কর্মীরা দাবি করেছেন, ওই যাত্রীটি ফাঁসিতলা থেকে কেন বাসে উঠেছিলেন? সেই প্রশ্নেরও সদুত্তর পাননি তদন্তকারী পুলিশ অফিসারেরা। পুলিশের অনুমান, ফাঁসিতলা থেকেই ওই যাত্রীর সঙ্গে দুষ্কৃতীদের এক বা একাধিক সদস্য বাসে উঠেছিলেন। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, পিছনের সিটে বসে থাকা মধ্যবয়সী ওই ব্যক্তির (অপহৃত) মাথায় টুপি ছিল। হাতে ছিল কালো রঙের একটি ব্যাগ। দুষ্কৃতীরা বাস থামাতেই ওই যাত্রী তড়িঘড়ি নিজের মাথার টুপিটি খুলে ফেলেন। বাসের ভিতরে ও বাইরে হইহট্টগোল চলতে থাকায় আতঙ্কিত যাত্রীরা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিতে না পারলেও, কয়েক জন যাত্রী জানিয়েছেন, বাসের ভিতরে যাত্রী সেজে থাকা পিস্তলধারী যুবকটি চালকের মাথায় পিস্তল ধরে বাস থামানোর পরে মোটরবাইকে ধেয়ে আসা ৪ যুবকের এক জন পিছনের দিকের দরজা খুলে বাসে ওঠে। তার আগে অবশ্য পিস্তল দেখিয়ে খালাসিকে পিছনের দরজা খুলতে বাধ্য করেছিল বাসের ভিতরে থাকা যুবকটি। টুপি খুলে ফেলা ওই ব্যক্তিটিকে টেনে নামানোর পর তাঁকে মোটরবাইকে চাপিয়ে মোহনপুরের জঙ্গলের দিকে নিয়ে চলে যায় ওই ৫ যুবক। যাওয়ার আগে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে ‘অপহরণকারীরা’ শূন্যে গুলি ছুড়েছিল, নাকি বাস থামানোর পরেই আতঙ্ক ছাড়ানোর জন্য মোটরবাইকে সওয়ার যুবকদের মধ্যে কেউ গুলি ছুড়েছিল--সেটাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তবে বাসের ছাদে গুলিবিদ্ধ দুই যাত্রীর আঘাত দেখে চিকিৎসকদের অনুমান, ছররা গুলিতে ওই দু’জন জখম হয়েছেন।
রবিবার সন্ধ্যায় মোহনপুরের জঙ্গল থেকে উদ্ধার হওয়া পরিত্যক্ত মোটরবাইকটির নম্বরের সূত্র ধরে বাইকটির মালিকের নাম পেয়েছে পুলিশ। তিনি খড়্গপুরের বাসিন্দা। কী ভাবে বাইকটি মোহনপুরের জঙ্গলে পাওয়া গেল তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মৃগাঙ্ক মাইতি আবারও নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “জঙ্গলমহলে যাত্রী নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু বাস পরিষেবার স্বার্থে জঙ্গলরাস্তায় উপযুক্ত পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রয়োজন।” |
|
|
|
|
|