তৃণমূলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
কেশপুর কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদত্যাগ
ডামাডোলের কেশপুরে স্থানীয় কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদত্যাগ ঘিরে নতুন করে শোরগোল তৈরি হয়েছে। সুকুমার সেনগুপ্ত মহাবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুশান্তকুমার দোলুই ঠিক কী কারণে পদত্যাগ করেছেন, সে নিয়ে নানা জল্পনা শুরু হয়েছে। কলেজের একটি সূত্রের বক্তব্য, পালাবদলের কেশপুরে তৃণমূলের একাংশ নেতা-কর্মীর দলের ছাত্র সংগঠনের নাম করে নানা ‘অন্যায়-আবদার’ মেনে নিতে পারছিলেন না সুশান্তবাবু। পরিস্থিতির কথা তিনি একাধিক বার জানিয়েওছিলেন কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি তৃণমূলের জেলা নেতা চিত্ত গরাইকে। কিন্তু সুরাহা হয়নি। তবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সভাপতির কাছে গত শনিবার পাঠানো তাঁর পদত্যাগপত্রে ‘ব্যক্তিগত কারণে’র উল্লেখ করেছেন। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সুশান্তবাবু বিস্তারিত কিছু বলতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, “যা জানানোর পরিচালন সমিতির সভাপতিকে জানিয়েছি। তবে এটুকু বলতে পারি কলেজের সঙ্গে সম্পর্ক নেই এমন কিছু বিষয়ে চাপ আসছিল।” সোমবার বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অফিসেও পদত্যাগপত্রের প্রতিলিপি দিয়ে আসেন সুশান্তবাবু।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ‘কলেজের সঙ্গে সম্পর্ক-হীন চাপে’র কথা বললেও পরিচালন সমিতির সভাপতি চিত্তবাবুর দাবি, “কলেজে পরিকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর সংখ্যা কম। এই পরিস্থিতিতে আর কাজ চালাতে পারছেন না জানিয়েই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদত্যাগ করতে চাইছেন। ৩ তারিখ পরিচালন সমিতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানেই সুশান্তবাবুর পদত্যাগপত্র নিয়ে আলোচনা হবে।” কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদ পরিচালিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক দেবনাথ পাত্রেরও বক্তব্য, “শুনেছি স্যার ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করতে চেয়েছেন।” তৃণমূল ছাত্র সংগঠনের নাম করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছে ‘অন্যায়-আবদারে’র যে অভিযোগ উঠেছে সে প্রসঙ্গে দেবনাথের বক্তব্য, “তেমন কিছু আমি জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখব।”
একদা ‘লালদুর্গ’ কেশপুরও বিধানসভা নির্বাচনের পরে বদলে গিয়েছে। এখন কেশপুরেও তৃণমূলেরই নিরঙ্কুশ আধিপত্য। তবে দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষিত শান্তি ফেরেনি। তৃণমূলের অন্দরেই একাধিক গোষ্ঠী। গোষ্ঠী-বিবাদও লেগেই রয়েছে। এমনকী শাসকদলের এই গোষ্ঠী-সংঘর্ষের কারণে ১৪৪ ধারা পর্যন্ত জারি করতে হয়েছিল কেশপুরে। সিপিএমের নেতা-কর্মীদের অনেকেই অবশ্য এলাকা ছাড়া। তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘জুলুমের’ অভিযোগ তুলে এবং বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে তাঁরা আত্মগোপন করেছেন। কেশপুরের বিধায়ক এখনও সিপিএমের রামেশ্বর দোলুই। তবে সিপিএমের ‘রা’ কাড়ার পরিস্থিতি নেই সেখানে। এই অবস্থায় একদা যে কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যেত না, সেখানেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছাত্র-সংসদ দখল করেছে তারা।
কিন্তু বিরোধীহীন কেশপুর ব্লক জুড়ে গোড়া থেকেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোলা তোলা, জরিমানা আদায়, বিরোধী দল বা তৃণমূলেরই বিরোধী গোষ্ঠীর লোকজনকে মারধর, তাদের উপর জুলুমের অভিযোগ উঠেছে। সুকুমার সেনগুপ্ত কলেজেও ছাত্র সংসদ দলের সংগঠনের হাতে আসার পর থেকে তৃণমূলের লোকজন নানা রকম অন্যায় ‘আবদার’ শুরু করে বলে অভিযোগ কলেজেরই শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের একাংশ। কিছু দিন আগে কলকাতায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এক কর্মসূচি উপলক্ষে যাতায়াতের পুরো খরচ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছে চাওয়া হয় বলে অভিযোগ। বার বার এমন সমস্যায় তিতিবিরক্ত হয়েই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন বলে দাবি ওই শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের। তাঁদেরই এক জনের আক্ষেপ, “ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে আগেও সিপিএম শিবিরের নানা চাপ সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু, ‘তোলা’ চেয়ে এ ভাবে বারে বারে চাপ আসত না!” কেশপুরের সিপিএম বিধায়ক রামেশ্বর দোলুই এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে না চাইলেও তাঁর দলের এক জেলা নেতার কটাক্ষ, “কী পরিবর্তন এসেছে, তা জনগণই দেখছেন!”
এ দিকে, মেদিনীপুর কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন ঝাড়গ্রামের সিপিএম সাংসদ পুলিনবিহারী বাস্কেও। শনিবারই তিনি কলেজ অধ্যক্ষ প্রবীর চক্রবর্তীর কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। ওই দিনই পরিচালন সমিতি তড়িঘড়ি নতুন সভাপতি হিসেবে মেদিনীপুরের তৃণমূল পুরপ্রধান প্রণব বসুর নাম মনোনীত করে। পদত্যাগ প্রসঙ্গে পুলিনবিহারীবাবু প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে সিপিএম সূত্রের খবর, দলের নির্দেশেই এই পদত্যাগ। নতুন রাজ্য সরকারের উচ্চশিক্ষা নীতি, বিশেষত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা নিয়ে সিপিএমের বিরোধিতা রয়েছে। এই অবস্থায় সিপিএম সাংসদের পক্ষে মানিয়ে চলা সমস্যার। সে কারণেই পদত্যাগ বলে দলীয় সূত্রের একাংশের ব্যাখ্যা। তড়িঘড়ি প্রণব বসুকে সভাপতি করার মধ্যে শহরবাসী অবশ্য নতুন মোড়কে সেই পুরনো দলতন্ত্রই দেখছেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.