আজ বাম-ধর্মঘট |
হলদিয়া ‘সচল’ রাখাই চ্যালেঞ্জ তৃণমূলের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক ও হলদিয়া |
বামপন্থীদের ডাকা ধর্মঘটে বছরের পর বছর তাঁর নেতৃত্বেই প্রায় ‘অচল’ হয়ে যেত হলদিয়া শিল্পাঞ্চল তথা পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অধিকাংশ এলাকা। আজ, মঙ্গলবার বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়নগুলির ডাকা সাধারণ ধর্মঘটের সমর্থনে জেলার সেই ‘দোর্দণ্ডপ্রতাপ’ সিপিএম নেতা লক্ষ্মণ শেঠের উপস্থিতি শুধু পোস্টারে! নন্দীগ্রাম নিখোঁজ-কাণ্ডে গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপন করেছেন তিনি। লক্ষ্মণবাবুর অনুপস্থিতিতে বামেদের ধর্মঘটে হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে সাড়া পড়ে কি না, তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে রাজনৈতিক ও শিল্প-মহলে। সম্প্রতি সিপিএমের রাজ্য কমিটি থেকে বাদ পড়ায় এমনিতে দলের মধ্যে লক্ষ্মণবাবুর প্রভাব খর্ব হয়েছে বলে দাবি বিরোধী-শিবিরের। |
|
ধর্মঘটের বিরোধিতায় তৃণমূলের মিছিল তমলুক শহরে। |
যদিও সিটুর জেলা সম্পাদক হিসাবে এখনও রয়েছেন তিনি। কিন্তু হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের উপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ আর রয়েছে কি না, তা এখন প্রমাণ করার সুযোগ নেই। একদা ‘হলদিয়াপতি’র এই অনুপস্থিতির সুযোগেই হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে নিজেদের ক্ষমতা প্রমাণ করতে মরিয়া শাসক তৃণমূল। নেতৃত্বে সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। শাসক-শিবিরের কাছে হলদিয়া শিল্পাঞ্চল ‘সচল’ রাখাটা মস্ত চ্যালেঞ্জ। হলদিয়া শিল্পাঞ্চল ছাড়াও জেলায় কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রেও বামেদের ডাকা বন্ধে একদা নিজেদের ‘ক্ষমতা’ প্রদর্শন করতেন তখনকার শাসক সিপিএম নেতারা। ঘটনাচক্রে নন্দীগ্রাম নিখোঁজ-কাণ্ডে গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপন করেছেন কোলাঘাটের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক তথা সিটুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমিয় সাহু-ও। দুই প্রধান সিটু নেতার অনুপস্থিতিতে হলদিয়া ও কোলাঘাট ‘সচল ও স্বাভাবিক রাখতে’ মাঠে নেমেছে তৃণমূল। মঙ্গলবার হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে উপস্থিত থাকার কথা শুভেন্দুর। রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের তিন বছর আগেই জেলা পরিষদ, অধিকাংশ পঞ্চায়েত দখল করে তৃণমূলের শক্ত-ঘাঁটি হিসাবে পরিচিতি পেয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুর। বামেদের ডাকা ধর্মঘটে শাসক তৃণমূল-শিবির জেলাকে সচল রাখতে ইতিমধ্যে মিছিল-পথসভা করেছে। কর্মী সংগঠনের মাধ্যমে সোমবার বিকেলে জেলাসদর তমলুক শহরে বন্ধের বিরোধিতায় মিছিলও করেন তৃণমূল জেলা নেতৃত্ব। |
|
ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিল ঘাটালে |
মঙ্গলবার জেলার সর্বত্র বাস চলাচল স্বাভাবিক রাখতে বাস মালিক সংগঠনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক তথা জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি মামুদ হোসেন বলেন, “মঙ্গলবার জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি-সহ সমস্ত সরকারি অফিস, স্কুল-কলেজ খোলা থাকবে। বাস চলাচল ও দোকানপাট খোলা রাখার জন্য আবেদন করা হয়েছে।” এ দিকে সিটুর পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি নির্মল জানা বলেন, “সাধারণ ধর্মঘট ভাঙতে তৃণমূল ভয় দেখিয়ে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ধর্মঘটে বিপুল সাড়া পড়বে। ধর্মঘটের সমর্থনে জেলার প্রতিটি এলাকায় প্রচার করা হয়েছে।” হলদিয়ায় তাঁরা কোনও রকমে সংঘাতে যেতে চান না বলেই জানিয়েছেন সিটু নেতা সুদর্শন মান্না। তাঁর দাবি, “আমরা শ্রমিকদের কাছে আবেদন জানিয়েছি, বিভিন্ন কারখানার সামনে প্রচার করেছি। আমাদের সমর্থক বহু শ্রমিককে মারধর করা হয়েছে। আমরা প্ররোচনার ফাঁদে পা দিইনি। আমাদের বিশ্বাস, শ্রমিকেরা কাজে আসবেন না। ধর্মঘট সফল হবে।” তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের নেতা শিবনাথ সরকারেরও আশ্বাস, “আমরা পথে নেমে ধর্মঘটের বিরোধিতা করব। তবে কোনও সংঘাতে যাব না। বিভিন্ন কারখানা কর্তৃপক্ষকে আবেদন জানানো হয়েছে শ্রমিকদের জন্য যাতে রাত্রিবাসের ব্যবস্থা করা হয়।” হলদিয়ায় দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার ডিপো থেকে বাস চলবে বলে জানিয়েছেন আধিকারিক শীতল চক্রবর্তী। অনভিপ্রেত যো কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলায় তাঁরা প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অমিতাভ মাইতি। |
ছবি: পার্থপ্রতিম দাস। |
|