চার বছর আগের মাঙ্কিগেট ফিরে এল সিডনিগেট হয়ে!
এ বারের পালায় অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস নেই, নেই হরভজন সিংহ-ও। মাঙ্কিগেটের দুই পার্শ্বচরিত্র আছেন। সচিন তেন্ডুলকর ও ব্রেট লি।
এসসিজি-তে গত রবিবার তাঁর রান আউট নিয়ে সচিন এতটাই ক্ষুব্ধ যে বরাবরের ‘পলিটিক্যালি কারেক্ট’ ভাবমূর্তির বাইরে বেরিয়ে এসেছেন। সোমবার অস্ট্রেলিয়ায় ফোন করে জানা গেল, এই ব্যাপারে একেবারেই মনের ভাব গোপন করছেন না এবং ঘনিষ্ঠ মহলে বারবার বলছেন, ব্রেট লি রান নেওয়ার সময় ইচ্ছাকৃত বাধা দিয়েছেন। ব্রেট লি তো বটেই, অস্ট্রেলিয়ার কাগজগুলোও আদৌ সচিনের সুরে সুর মেলাচ্ছে না। বরং সচিন ও ভারতকে একহাত নেওয়া চলছে। ঠিক যেমন চলেছে মাঙ্কিগেটের সময়ে। এ দিনের ‘ডেইলি টেলিগ্রাফ’ লিখছে, “সচিনের রান আউট নিয়ে হইচই প্রমাণ করে, এই সফরে ভারতের কী দুর্দশা। ওদের নিজেদের লজ্জা হওয়া উচিত।” আরও লেখা হয়েছে, “এক সময় সচিন হয়তো বিশ্বের সেরা আধুনিক ক্রিকেটার ছিলেন, ভারত হয়তো খেলাটার আর্থিক দিকটার নিয়ন্ত্রণকারী উদ্ধত একটা শক্তি, কিন্তু এই সফর থেকে ওরা কিছুই না নিয়ে দেশে ফিরছে।” ভারত মাত্র কিছুদিন আগেও ২০ মাস কী করে বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট টিম ছিল আর বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। স্বয়ং ব্রেট লি জোর দিয়ে বলেছেন, “সচিন তেন্ডুলকরকে আমি কখনও ইচ্ছাকৃত আটকাব না।” |
হতাশা যে সচিনকে কতটা গ্রাস করেছিল, তার বহির্প্রকাশ হয় এসসিজি-র ড্রেসিংরুমে। তাঁর ২৩ বছরের আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে কখনও যা করেননি, ক্ষুব্ধ সচিন আউট হয়ে এসে ড্রেসিংরুমে রাখা নিজের কিট ব্যাগের উপর ব্যাটটা ছুড়ে দেন। অথচ ব্যাট বরাবর তাঁর কাছে মন্দিরের মতো। প্রিয়তম মাঠ এসসিজি-তে তাঁর শেষ ইনিংসের জন্য মানসিক ভাবে ভীষণ চেগে ছিলেন সচিন। রবিবার টিমের সঙ্গে মাঠে আসেননি। তার দেড় ঘণ্টা আগে তিনি একা এসসিজি-র নেটে চলে যান বোলিং কোচ এরিক সিমন্সকে নিয়ে। সেখানে একনাগাড়ে চলেছিল নকিং। তার পরে এই ঘটনা। ভারতীয় শিবিরের বিশ্বাস, লি অবশ্যই শেষ মুহূর্তে ইচ্ছাকৃত ভাবে অ্যাঙ্গেল ছোট করে দিয়েছিলেন। এ রকম ভাবনাকে একেবারেই পাত্তা দিচ্ছেন না ওয়াসিম আক্রম। বারো বছর আগে ইডেনে এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে সচিনের রান আউট তুলে এনে ওয়াসিম বলেছেন, “সে বার ইডেনে মাঠ ফাঁকা করে খেলা হয়েছিল। শোয়েবকে দোষ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ঘটনা হল, সচিন ক্রিকেটের উর্ধ্বে নয়।”
শুধু সচিন কেন, টিমের আর এক সিনিয়র ক্রিকেটার আউট হয়ে নিজের সম্পর্কে এত বিরক্ত ছিলেন যে তাঁর ব্যাটের ধাক্কায় অসাবধানে ড্রেসিংরুমের ছোট শার্সি ভেঙে যায়। আঘাত ইচ্ছাকৃত নয় এবং ছোট একটা টুকরো ভেঙেছে বলে ড্রেসিংরুম কর্তৃপক্ষ কোনও জরিমানা করেননি। এ দিন এসসিজি-তে ফোন করে জানা গেল, ড্রেসিংরুমের পরিচারকরা কোনও অভিযোগ জানাননি। তবে আশ্চর্য হয়ে গিয়েছেন ভারতীয়দের এ ভাবে ফেটে পড়তে দেখে।
সিডনিগেট বিতর্ক দাউদাউ থাকা অবস্থাতেই মঙ্গলবার হোবার্টে সম্ভবত টুর্নামেন্টের শেষ ম্যাচে নামছে ভারত। ফাইনালে যাওয়ার আশা বলতে হোবার্ট ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে বোনাস পয়েন্ট-সহ হারাতে হবে এবং তার পরও অপেক্ষা করতে হবে অস্ট্রেলিয়া-শ্রীলঙ্কা শেষ ম্যাচের জন্য। সেই ম্যাচেও হারতে হবে শ্রীলঙ্কাকে।
হোবার্টকে বলা হয় অস্ট্রেলীয় মহাদেশের ছুটির দ্বীপ। সারা বছরই এখানে পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। সেখানে ভারতীয় দলকে দেখে প্রত্যক্ষদর্শীদের মনে হচ্ছে যেন বন্দিদশা কাটাতে এসেছে। টিম এ দিন দুপুরে হোবার্টে পৌঁছে গেলেও ২৭টা লাগেজের মধ্যে ২০টা লাগেজ সিডনি থেকে এসে পৌঁছয়নি। অস্ট্রেলীয় বিমান সংস্থা কোয়ান্টাস জানিয়েছে, বাকি লাগেজ নাকি মঙ্গলবার ম্যাচের দিন সকালের মধ্যে টিম হোটেলে পৌঁছে দেওয়া হবে। লাগেজ পৌঁছলেই অবশ্য সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। টিম ইতিমধ্যেই মিনি হাসপাতালে পরিণত। সিডনির ম্যাচে ক্যাচ ধরতে গিয়ে রায়নার সঙ্গে সংঘর্ষে বুকে চোট পাওয়া ইরফান পাঠানের শ্বাসপ্রশ্বাসে অসুবিধে হচ্ছে। ওই একই ক্যাচ ধরতে গিয়ে রায়নার হাতে চোট। সফরে চিরচোটগ্রস্ত জাহির খানকে ম্যাচের দিন সকালে দেখা হবে ফিট কি না। এই পরিস্থিতিতে একমাত্র মনোজ তিওয়ারির উৎসাহিত হওয়ার কারণ থাকছে। হোবার্টে তাঁর ভাগ্যে হয়তো শিকে ছিঁড়তে পারে। ভারতীয়দের দেশে ফেরার টিকিট ছিল ৯ মার্চ। হোবার্টেই যবনিকা পড়ে গেলে কী ভাবে আগে দেশে ফেরা সম্ভব, তার তোড়জোড়ও শুরু হয়ে গিয়েছে।
করুণ অবস্থা কোচ ডানকান ফ্লেচারেরও। সিডনি ম্যাচের আগে তিনি টিমের সামনে উত্তেজক বক্তৃতা দিয়ে বলেন, “আমি তোমাদের কাছে আবেদন করছি, সমর্থকদের জন্য জান দিয়ে খেলো। ভারতের কঠিন উইকেটে তোমরা কত ম্যাচ বের করেছ, যেখানে বল ঘোরে এবং নিচু হয়। এখানে অনেক ভাল ব্যাটিং উইকেট, শুধু ধৈর্য ধরে খেললে রান আসবেই। রান করো, জেতাও, না হলে দেশে ফিরে মুখ দেখাতে পারবে না।”
‘উদাত্ত’ এই আর্তির কথা শুনে ভারতীয় ক্রিকেটমহল মনে করছে, ফ্লেচার সেই জাগলেন। কিন্তু জাগলেন যখন, টিমের রাইগর মর্টিস সেট ইন করে যাচ্ছে! |
ধোনিদের কাজটা কিন্তু ভীষণ কঠিন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় |
মঙ্গলবার ত্রিদেশীয় সিরিজে শেষ ম্যাচ ভারতের। যে রকম ফর্মে ওরা খেলছে তাতে মনে হচ্ছে, কাজটা ভীষণ কঠিন। শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে শুধু হারালেই হবে না, বোনাস পয়েন্ট নিয়ে হারাতে হবে। তাতেও হবে না। শ্রীলঙ্কা শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে হারালে পয়েন্টে এগিয়ে থেকে ওরাই ফাইনালে চলে যাবে। এর মধ্যে একটা মানসিক ব্যাপারও রয়েছে। এশিয়া কাপ দল নির্বাচন এসে পড়েছে। খবরের কাগজে পড়ছি, কিছু প্লেয়ার বাদ পড়তে পারে। প্রত্যেকের মনে একটা আতঙ্ক কাজ করতে পারে। তবে আজকের পরিস্থিতির জন্য ভারতীয় ক্রিকেটাররা নিজেরাই দায়ী। হোবার্টে দারুণ ব্যাটিং উইকেট। এটাও দেখতে চাইব যে, টানা ব্যর্থ রায়নাকে মঙ্গলবার নামানো হয় কি না। মনোজ তিওয়ারির কথা ভাবলে খারাপ লাগতে বাধ্য। আগেও ওর সঙ্গে এই জিনিস ঘটেছে। আশা করব অন্তত শেষ ম্যাচটায় মনোজকে সুযোগ দেওয়া হবে। সবচেয়ে আশ্চর্য হয়েছি রবিবার অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে জাহির না খেলায়! জাহিরের কি চোট? আমরা কেউ জানি না। শ্রীলঙ্কার এত সব মাথাব্যথা নেই। হোবার্টে আগে খেলেছে বলে ওরা আজ এগিয়ে থেকে শুরু করবে। |