পরিচিত কয়েক জন ‘কাকু’ তাদের ফুটবল কেড়ে নেওয়ায় প্রতিবাদ করেছিল বারো বছরের ছেলেটি। অভিযোগ, সেই ‘অপরাধে’ তাকে বেধড়ক মারধর করে, শরীরের বিভিন্ন অংশ গরম লোহার রড দিয়ে ঝলসে দিল ওই ‘কাকু’রা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় সে এখন হাওড়া জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সোমবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়া ময়দান এলাকায়।
পাশাপাশি, এই অমানবিক ঘটনায় হাওড়া সিটি পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, বেলা ১১টায় হাওড়া থানায় অভিযোগ দায়ের হলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা তো দূরে থাক, এলাকায় গিয়ে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করেনি পুলিশ। তবে, এ দিন সন্ধ্যায় বিষয়টি জানাজানি হতেই নড়েচড়ে বসেন হাওড়া সিটি পুলিশের কর্তারা। তড়িঘড়ি তাঁরা তদন্ত শুরু করে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন হাওড়া থানাকে। শেষে অভিযোগ দায়ের করার প্রায় ১০ ঘণ্টা পরে এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে হাওড়া থানার পুলিশ। |
এ বিষয়ে হাওড়া সিটি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (সদর) সুকেশ জৈন বলেন, “ঘটনাটি সন্ধ্যায় জানতে পেরেই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এর পরেই শিবশঙ্কর নাগ নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনাটি জানার পরেও কর্তব্যে অবহেলা করার জন্য হাওড়া থানার এএসআই সুবোধচন্দ্র প্রতিহারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।”
মণীশ বাহাদুর নামে ওই বালক হাওড়া থানার ৩ নম্বর ফাঁড়ি লেনের বাসিন্দা। এ দিন সকাল ৭টা নাগাদ সে পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে ফুটবল খেলতে যাচ্ছিল। অভিযোগ, সেই সময়ে ময়দান এলাকায় হাওড়া উন্নয়ন সংস্থার গেটের সামনে ফুটপাথে বসা কয়েক জন ব্যবসায়ী ওই বালকদের পথ আটকায়। ফুটবলটি কেড়ে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ‘মজা’ করা শুরু হয়। তখন পরিচিত ওই ‘কাকু’দের থেকে তাদের ফুটবলটি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বালকেরা। কিন্তু তা না-পারায় শুরু হয় কথা কাটাকাটি। |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ব্যবসায়ী ও বালকদের মধ্যে কথা কাটাকাটির সময়ে হাওড়া সদর বক্সী লেনের বাসিন্দা পেশায় কাপড় ব্যবসায়ী শিবশঙ্করের হাত থেকে ফুটবলটি কেড়ে নিতে যায় মণীশ। অভিযোগ, তখনই মণীশকে বেধড়ক মারধর করতে শুরু করে শিবশঙ্কর। তার সঙ্গে যোগ দেয় আরও কয়েক জন ব্যবসায়ী। এই ঘটনা দেখে এক সময়ে পালিয়ে যায় মণীশের সঙ্গীরা। মণীশের অভিযোগ, এর পরেই শিবশঙ্করেরা তাকে টেনে হাওড়া উন্নয়ন সংস্থার গেটের পাশে নিরাপত্তারক্ষীর গুমটির ভিতরে নিয়ে যায়। সেখানে একটি লোহার রড গরম করে তার পিঠে ও শরীরের অন্যান্য অংশে ছ্যাঁকা দেওয়া হয়। লোহার রড দিয়ে তাকে মারধরও করা হয়। শেষে ব্লেড দিয়ে হাত-পা চিরে রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয় ওই বালককে। পরে স্থানীয় এক রিকশাচালক মণীশকে দেখতে পেয়ে তুলে নিয়ে যান।
ফাঁড়ি লেনের বস্তি এলাকায় থাকে মণীশ। তার বাবা কমল বাহাদুর পেশায় রিকশাচালক। মা ঊর্মিলা পরিচারিকার কাজ করেন। এ দিন ওই রিকশাচালক মণীশকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পরেই সব ঘটনা জানতে পারেন কমলবাবুরা। সন্ধ্যায় হাওড়া হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “ছেলে যন্ত্রণায় ছটফট করছিল। রক্তে শরীর ভেসে যাচ্ছিল। তখন ওকে হাওড়া হাসপাতালে ভর্তি করি। এর পরে ১১টা নাগাদ হাওড়া থানায় গিয়ে শিবশঙ্করের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করি।” ঊর্মিলাদেবী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ কাউকে ধরল না। ময়দানে গিয়ে কারও থেকে জানতেও চাইল না, কী ঘটেছে। গরিব বলে কি পুলিশ আমাদের জন্য কিছু করবে না?”
এ দিন সন্ধ্যায় হাওড়া জেলা হাসপাতালের পুরুষ বিভাগে গিয়ে দেখা গেল, বিছানায় শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে মণীশ। কথা বিশেষ বলতে পারছে না। ঘটনার কথা জানতে চাইলে কোনও মতে মণীশ বলল, “অনেকক্ষণ ধরে বলটা দিচ্ছিল না বলে ওই কাকুর হাত থেকে বল কেড়ে নিতে যাই। কেন দেবে না জানতে চাই। তখনই আমাকে মারতে শুরু করল।” মণীশের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে হাওড়া জেলা হাসপাতালের সুপার শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, “ওই বালকের দেহে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পিঠের অর্ধেক অংশ ঝলসে গিয়েছে। শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড় ভেঙেছে। ওর আঘাত খুবই গুরুতর।”
|