আগামী বছরের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখেই মানিক সরকারের নেতৃত্বাধীন ত্রিপুরার বাম সরকার ২০১২-১৩ আর্থিক বছরের ‘ভোটমুখী’ বাজেট পেশ করল। প্রত্যাশিত ভাবেই প্রায় দেড়শো কোটি টাকার এই ঘাটতি বাজেট পেশ করতে গিয়ে মানিকবাবুর অর্থমন্ত্রী বাদল চৌধুরী সেই বহুচর্চিত ‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনার’ উল্লেখ করেছেন।
পাশাপাশি, সরকারি কর্মীদের অবসরের বয়স ৫৮ থেকে বাড়িয়ে ৬০ করার কথা তাঁর বাজেট প্রস্তাবে ঘোষণা করেছেন। সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রেও বয়সের গণ্ডী তিন বছর বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এত দিন ৩৭ বছর পর্যন্ত সরকারি নিয়োগের সুযোগ ছিল। এ বার থেকে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত বেকাররা সরকারি চাকরির সুযোগ পাবেন। তফশিল জাতি-উপজাতিদের ক্ষেত্রে এই সীমা ৪০ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রস্তাবিত কেন্দ্রীয় পেনশন স্কিমকে অন্তত এ বারের মতো খারিজ করে দিয়েছে বামফ্রন্ট সরকার। পুরনো পেনশন ব্যবস্থাই বহাল রাখার কথা ঘোষণা করেছেন বাদলবাবু। স্বাভাবিকভাবে ২ বছর চাকরির মেয়াদ বেড়ে যাওয়া এবং পুরনো হারে পেনশনের সরকারি সিদ্ধান্তে সরকারি কর্মীরা উল্লসিত। সরকারি কর্মী ছাড়াও বাম ভোটব্যাঙ্কের একটি বড় অংশ অবসরপ্রাপ্ত পেনশন-ভোগীরা। বেছে নেওয়া হয়েছে ভোটব্যাঙ্কের আর একটি বড় ক্ষেত্র, মহিলাদেরকেও। বাজেটে মহিলা ও কন্যাসন্তানদের সামাজিক কল্যাণের খাতে ৩৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। গত বছরের থেকে অনেকটাই বেশি।
অর্থমন্ত্রী বিধানসভায় বলেন, “ত্রয়োদশ অর্থ কমিশনের ছুড়ে দেওয়া চ্যালেঞ্জের মধ্যে দাঁড়িয়েই রাজ্যবাসীকে এ বারও ষষ্ঠ বামফ্রন্ট সরকার একটি ভাল বাজেট উপহার দিচ্ছে।” গত বারের তুলনায় ঘাটতির পরিমাণ এ বারের বাজেটে কমিয়ে আনা হয়েছে। আগামী আর্থিক বছরে রাজস্ব ও রাজস্ব-বহির্ভূত আয় ধরা হয়েছে ৭৯৭০ কোটি টাকা। পরিকল্পনা ব্যয়ের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৮১১৯.৪৭ কোটি টাকা। ঘাটতি থাকছে ১৪৯.৪৭ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় যোজনা বরাদ্দ, রাজ্যের নিজস্ব সম্পদ সংগ্রহ ও উন্নয়ন-বহির্ভূত খাতে ব্যয় সংকোচন করে বাজেট ঘাটতি পূরণ করা হবে বলে বাবদলবাবু দাবি করেছেন।
অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্য শহরের কুঞ্জবনে এলাকায় ‘পেনশনার্স আবাস’ নামে একটি আবাসন প্রকল্প তৈরি করবে সরকার। এতে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। রাজ্যের উন্নয়নে ত্রিপুরা স্টেট কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্ক যাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারে সেই দিকে লক্ষ্য রেখে ওই ব্যাঙ্কের জন্য বাজেটে ২৩৭ কোটি টাকার পুঁজি-বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাদলবাবুর বক্তব্য, এর ফলে সমবায় ব্যাঙ্কটি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় লাইসেন্সের ভিত্তিতে আরও কার্যকর ভূমিকা নিতে পারবে। |