ধর্মসঙ্কটে দীনেশ ত্রিবেদী।
এক দিকে দলনেত্রীর ভাড়া না বাড়ানোর ফরমান। অন্য দিকে ভাড়া ও মাশুল না বাড়িয়ে কোষাগারের হাল ফেরানোর অন্য কোনও উপাও উপায়ও বাতলাতে পারছে না রেলের আধুনিকীকরণ কমিটি। আয় বাড়াতে টিকিটে আধুনিকীকরণ সারচার্জ বসানো বা রেলের অধীনস্থ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির বিলগ্নিকরণের মতো কিছু প্রস্তাব দিয়েছে কমিটি। কিন্তু সেগুলিকে কার্যত আজ খারিজ করে দিয়েছেন রেলমন্ত্রী। কারণ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ওই প্রস্তাবগুলি মানবেন না, তা বিলক্ষণ জানেন তিনি। ফলে তীব্র অর্থসঙ্কট থেকে রেল এখন ঘুরে দাঁড়াবে কী করে, সেই প্রশ্ন অমীমাংসিতই রয়ে গেল। স্যাম পিত্রোদার নেতৃত্বাধীন রেলের আধুনিকীকরণ কমিটি আজ তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে রেলমন্ত্রীর কাছে। রিপোর্টে বলা হচ্ছে, আগামী পাঁচ বছরে রেলের আধুনিকীকরণে ৮ লক্ষ কোটির বেশি টাকা প্রয়োজন। সেই টাকার সংস্থান করতে যে সব উপায় বাতলানো হয়েছে, সেগুলি দীর্ঘমেয়াদে কাজে এলেও এই মুহূর্তে অক্সিজেন জোগানোর কাজটা করতে পারবে না বলেই মনে করছেন রেল কর্তারা।
কমিটির সদস্যরা সকলেই মানছেন রেল মন্ত্রক ধুঁকছে। কিন্তু তিন সপ্তাহ পরেই রেল বাজেট। প্রধানমন্ত্রীর দফতর কিংবা যোজনা কমিশন থেকে যতই চাপ আসুক না কেন মমতার আপত্তিতে আসন্ন দীনেশের রেল বাজেটেও তাই ভাড়া-মাশুল বাড়ানোর সম্ভাবনা কম বলেই মনে করা হচ্ছে। এবং সেটা আঁচ করেই সম্ভবত ভাড়া বা মাশুল বাড়ানোর পথ সুকৌশলে এড়িয়ে গিয়েছে পিত্রোদা কমিটি। বরং রেলের আধুনিকীকরণে আগামী পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বাজেট বরাদ্দ প্রায় তিন গুণ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে তারা। কিন্তু ভাড়া না বাড়ালে বাজেট বরাদ্দ যে বিশেষ বাড়বে না সেটা অজানা নয় দীনেশের। পাশাপাশি কেন্দ্রের সাহায্য ছাড়াই ওই কমিটি আট লক্ষ কোটি টাকার মধ্যে রেলের জন্য প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে। যার অর্থ বছরে প্রায় ষাট হাজার কোটি টাকা।
প্রশ্ন হচ্ছে যাত্রী ভাড়া না বাড়লে ওই আয় রেল করবে কী করে? কমিটি মূলত জোর দিয়েছে পণ্য পরিবহণের উপর। কমিটির সদস্য এম এস বর্মার মতে, রেলের সিংহভাগ আয় আসে পণ্য পরিবহণ থেকে। অথচ, গোটা দেশে যে পণ্য পরিবহণের মাত্র ৩০% হয় রেলের মাধ্যমে। তিনি জানান, রেলের মাধ্যমে আরও বেশি পণ্য পরিবহণের ব্যবস্থা করা উচিত। তাই মালগাড়িগুলির পণ্য পরিবহণের ক্ষমতা বৃদ্ধির উপর জোর দিয়েছেন তিনি। কমিটির বক্তব্য, মালগাড়ির কামরা এমন ভাবে গড়তে হবে, যাতে তারা আরও মাল বহন করতে পারে। প্রয়োজনে বদলাতে হবে লাইনের খোলনলচে। ট্রেনের গতি বাড়াতে সিগন্যালিং ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের পক্ষে রায় দিয়েছে কমিটি। প্রাথমিক ভাবে এই কাজের জন্য ভারতীয় রেলের ৬৫ হাজার কিলোমিটারের মধ্যে ১৯ হাজার কিলোমিটার (রেলের আশি শতাংশ যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ হয়ে থাকে) নতুন ভাবে গড়ার পরামর্শ দিয়েছে কমিটি। ফলে সময় কমায় যাত্রী ট্রেনের সংখ্যা বাড়বে। যার ফলে যাত্রী ভাড়া থেকে আয় ৩০ % বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া ট্রেনের গতি বৃদ্ধি পেলে সময়ে পণ্য পৌঁছনোর জন্য আরও বেশি করে রেলের দ্বারস্থ হবেন ব্যবসায়ীরা।
কিন্তু এ সব দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। এগুলির জন্য প্রচুর বিনিয়োগও প্রয়োজন। কিন্তু এই বিনিয়োগ করার আর্থিক সামর্থ্য কি রেলের রয়েছে? সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে রেল মন্ত্রকের অলিন্দে। |