মমতার আপত্তিই বহাল, আপাতত নয় এনসিটিসি
খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ, লোকপাল বিল এবং তিস্তা চুক্তির পর এ বার জাতীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র (এনসিটিসি)। বজায় রইল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিই। রাজ্যগুলির সঙ্গে ঐকমত্য না হওয়া পর্যন্ত চালু হচ্ছে না এনসিটিসি। পূর্ব ঘোষণা মতো ১ মার্চ থেকে তো নয়ই।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গ-সহ যে সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আপত্তি তুলেছিলেন, তাঁদের সঙ্গে ঐকমত্য গড়ে তোলার পরেই এ বিষয়ে এগোনো হবে। গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে আপত্তির কথা জানিয়েছিলেন। এবং এই ক্ষেত্রেও প্রধান শরিক দলের নেত্রীর চাপের কাছে মাথা নোয়াতে হল মনমোহন সরকারকে। সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করে সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র (এনসিটিসি) চালু করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে দেওয়ার পরেও তা স্থগিত রাখা হচ্ছে।
সরকার এনসিটিসি চালু করার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল ৩ ফেব্রুয়ারি। সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার কথা জানিয়ে অবশ্য নতুন করে বিজ্ঞপ্তি জারির সম্ভাবনা নেই। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, এনসিটিসি-র শীর্ষপদে এক জন নির্দেশক ও তিন জন যুগ্ম-নির্দেশক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল। বন্ধ থাকছে সেই প্রক্রিয়াও। ফলে আপনাআপনিই এনসিটিসি-র কাজ বন্ধ থাকবে। রাজ্যগুলির সঙ্গে ঐকমত্য তৈরির চেষ্টায় ১০ মার্চ মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব ও পুলিশের ডিজিদের বৈঠক ডাকছেন স্বরাষ্ট্রসচিব। রাজ্যের নিজস্ব সন্ত্রাসদমন বাহিনীর প্রধানদেরও বৈঠকে ডাকা হবে। কারণ, এনসিটিসি-র স্থায়ী পরিষদে তাঁরাও সদস্য হিসেবে থাকবেন। সেখানে কেন্দ্রের অবস্থান ব্যাখ্যা করা হবে।
রাজ্য পুলিশকে এড়িয়ে এনসিটিসি-কে ইউএপি আইনের ৪৩এ ধারায় কাউকে গ্রেফতার বা তল্লাশি চালানোর ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এতেই আপত্তি অ-কংগ্রেসি রাজ্যগুলির। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের অবশ্য যুক্তি, ৪৩বি ধারা অনুযায়ী আটক ব্যক্তিদের স্থানীয় থানার হাতেই তুলে দিতে হবে এনসিটিসি-কে। এ ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির প্রশ্ন, তাই যদি হয় তবে রাজ্য পুলিশকে সঙ্গে নিয়েই তল্লাশি চালাতে বা গ্রেফতার করতে বাধা কোথায়? কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য, সন্ত্রাস দমনের অভিযানে নেমে যখন গুলির লড়াই চলছে, তখন গ্রেফতারের জন্য রাজ্য পুলিশের খোঁজ করাটা মোটেই বাস্তবসম্মত নয়। তবু সন্ত্রাস দমন কেন্দ্রকে এতটা ক্ষমতা দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছে না পশ্চিমবঙ্গ-সহ অ-কংগ্রেসি ১০ রাজ্য। চিদম্বরম অবশ্য বলছেন, “এনসিটিসি-র হাতে ন্যূনতম এইটুকু ক্ষমতা থাকা একান্তই জরুরি। বিশ্বের সমস্ত সন্ত্রাস দমন কেন্দ্রেরই এই ক্ষমতা রয়েছে।”
এই চাপানউতোরের মধ্যে স্রেফ প্রশাসনিক স্তরের ওই বৈঠকে বিশেষ কোনও লাভ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান কেন্দ্রীয় সরকারের অধিকাংশ মহল। সরকারি কর্তাদের অনেকেই মনে করছেন, সমাধান খুঁজতে হবে রাজনৈতিক স্তরে। কারণ, শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন, তাঁর পাশাপাশি বিজেপি এবং অ-বিজেপি দলের প্রায় এক ডজন মুখ্যমন্ত্রী এনসিটিসি-র ক্ষমতা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। রাজ্যের অধিকারে কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করছে, এই অভিযোগও তুলছেন তাঁরা। বিজেপি অনেক আগে থেকেই নানা বিষয়ে ইউপিএ-সরকারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলছে। এনসিটিসি নিয়ে মমতার আপত্তি তাদের হাতে নতুন অস্ত্র তুলে দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে এপ্রিল মাসে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়ে মুখমন্ত্রীদের সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে হবে। কিন্তু তাতেও কোনও ফল মিলবে কি না, তা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারেরই একটা বড় অংশের সন্দেহ আছে। কারণ, শরিক দলগুলিকে রাজি করানো গেলেও, নরেন্দ্র মোদী, শিবরাজ সিংহ চৌহানদের তাঁদের অবস্থান থেকে সরানো মুশকিল হবে। ফলে সামগ্রিক ভাবেই এনসিটিসি-র সামনে বিরাট প্রশ্নচিহ্ন খাড়া হয়ে গেল বলে মনে করা হচ্ছে।
সরকারি সূত্রের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী বাজেট অধিবেশনের আগে শরিক বা বিরোধীদের সঙ্গে নতুন করে দ্বন্দ্বে যেতে চান না। মুখ্যমন্ত্রীদের উদ্দেশে তাঁর লেখা চিঠিতেই সেটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। চিঠিতেই প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত হবে এনসিটিসি নিয়ে। পরে চিদম্বরমও মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি লিখে একই কথা জানান। উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের আগে বাড়তি কোনও ঝুঁকি নিতেও নারাজ কংগ্রেস নেতৃত্ব। তাই উত্তরপ্রদেশের ৬ মার্চের ফলাফল ও হোলির ছুটির পরেই ১০ মার্চ বৈঠক ডাকা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা অবশ্য এখনও বলছেন, সন্ত্রাস দমনের বিষয়টিকে রাজনৈতিক চশমা দিয়ে দেখা হচ্ছে। যুক্তির লড়াইয়ে পাল্লা ভারি তাঁদের দিকেই। চিদম্বরম মুখ্যমন্ত্রীদের লেখা চিঠিতে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছিলেন। এ বার ১০ মার্চের বৈঠকেও তা ফের তুলে ধরা হবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.