জীর্ণ ঘরে জল, উইয়ে নষ্ট হচ্ছে মামলার নথি
শ ফুট বাই দশ ফুট ঘর। সেখানে উইয়ের বাসা। ভিজে মেঝে। সিলিঙ থেকে খসে পড়ছে সিমেন্টের চাঁই। জানলা-দরজাতেও ফাটল ধরেছে। অথচ এর মধ্যেই রাখা থাকে মামলার নথি। কালনা মহকুমা পুলিশের কাছে দায়ের করা সমস্ত মামলার প্রতিটি স্তরের বিবরণী মেলে এখানেই। জীর্ণ ঘরটির গালভারী নাম, গভর্নমেন্ট রেজিস্টার অফিস (জিআরও)।
কর্মী সাকুল্যে তিন জন। তাঁদের দাবি, উইয়ের প্রকোপে ইতিমধ্যেই নষ্ট হয়ে গিয়েছে মূল্যবান বহু নথি। বাকিগুলিও এখন নষ্ট হওয়ার পথে।
স্যাঁতসেঁতে ঘরেই চলে কাজ।
কালনা আদালতের খুব কাছেই এই ছোট ঘর। আলমারি থেকে টেবিল-চেয়ার সর্বত্র উপচে পড়ছে মামলা সংক্রান্ত নথি। মন্তেশ্বর, পূর্বস্থলী, কালনা থেকে এসেছে সে সব। জানা গিয়েছে, এখানে সরকারি রেজিস্টারে থাকে থানার নাম, জিআর ও মামলার নম্বর থেকে অপরাধের ধারা, ম্যাজিস্ট্রেটের নাম। এছাড়াও মিলবে মামলার রেকর্ড, মামলা কোন পর্যায়ে রয়েছে তার বিবরণ-ও। প্রতিটি রেকর্ড কম করে পনের থেকে পঁচিশ পাতার হয়। সুতো দিয়ে তা একসঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। আদালতে যখন মামলা চলে, তখন এখান থেকেই পাঠানো হয় সমস্ত কাগজপত্র।
কার্যালয়ের এক কর্মী বলেন, “অন্তত চার দশকের নথি আছে এই ঘরে। মাঝেমধ্যেই পুরনো মামলার নম্বর ধরে পুলিশ সুপার, ডিআইজির দফতর থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে চাওয়া হয়। উচ্চ আদালত থেকেও মাঝেমধ্যেই মামলা সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে পাঠানো হয়।” আর এক কর্মীর দাবি, সম্প্রতি ওই ঘর থেকে ছিন্নভিন্ন অবস্থায় বের করা হয়েছে আশির দশকের সরকারি রেজিস্টার। বহু তথ্যই মিলছে না সেখান থেকে।
শুধু তাই নয়, নিরাপত্তার অবস্থাও তথৈবচ। নথিতে ঠাসা ঘর। অথচ, সেখানে নেই আগুন নেভানোর কোনও ব্যবস্থা। ঘরের বাইরে দেওয়ালে ঝুলছে মান্ধাতার আমলের ‘রিফিলিং’ করা একটি অগ্নি নির্বাপক সিলিন্ডার। মিটার-বক্স থেকে শুরু করে ঘরের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিদ্যুতের তার। যে কোনও সময়ে শর্ট সার্কিট হয়ে পুড়ে নষ্ট হতে পারে নথিপত্র। কর্মীরাই জানালেন, বর্ষা এলে ঘরের অবস্থা আরও খারাপ হয়। ছাদ থেকে তখন জল চুঁইয়ে পড়ে ঘরে। বেশি বৃষ্টি হলে ঘরের ভিতরেও জল ঢোকে। তাঁদের কথায়, “যে দুর্দশার মধ্যে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে, তা বলার নয়। রোজই শুনি এই কার্যালয় অন্যত্র সরে যাবে। অথচ কাজের কাজ তো কিছুই হয় না।”
অবহেলায় পড়ে নথি।
জিআরও অফিসে নিত্য যাতায়াত আদালতের আইনজীবীদের। মহকুমা আদালতের এক আইনজীবী মলয় পাঁজা বলেন, “অফিসটির হাল অত্যন্ত খারাপ। অবিলম্বে অফিসটি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া দরকার। না হলে ভবিষ্যতে বহু গুরুত্বপূর্ণ নথিরই কোনও হদিশ মিলবে না।”
কার্যালয়টির দুরবস্থার কথা জানে পুলিশ-প্রশাসন। কালনার এসডিপিও ইন্দ্রজিৎ সরকারের আশ্বাস, “ওই ঘরে বেশি দিন আর অফিসটি থাকবে না। শীঘ্রই সেটিকে অন্যত্র সরাতে হবে।”
তবে কর্মীদের প্রশ্ন, তত দিন পর্যন্ত মামলার নথিগুলোকে বাঁচানো যাবে তো?

ছবি: কেদারনাথ ভট্টাচার্য।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.